• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

টার্গেট বেকার যুবকরা: অনলাইনে সুদের ফাঁদ

Reporter Name / ৪৪ Time View
Update : বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

বিপদে পড়ে এক বন্ধুর কাছে ২ হাজার টাকা ধার চান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ। তিনি ধার দিতে অপারগতা জানিয়ে তাকে অ্যাপসভিত্তিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান র‌্যাপিড ক্যাশে অ্যাকাউন্ট খুলতে বলেন। বলেন, এখানে অ্যাকাউন্ট খুলে ঋণের আবেদন করলে ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যায়। কথামতো গুগল প্লে স্টোর থেকে র‌্যাপিড ক্যাশের অ্যাপস ডাউনলোড করে সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকাউন্ট খুলেন সুমন। পরে তাদের দেখানো গাইডলাইন অনুযায়ী নিজের ব্যক্তিগত সব ধরনের তথ্য দিয়ে ২ হাজার টাকা ঋণের আবেদন করেন। ৭ দিনের মধ্যে পরিশোধের শর্তে ২ হাজার টাকা ঋণের আবেদন করলেও সার্ভিস ফি হিসেবে ২৯৪ টাকা এবং ইন্টারেস্ট ফি হিসেবে ১০ টাকা কেটে রেখে ঋণের প্রাপ্ত পরিমাণ ১ হাজার ৬৯৬ টাকা দেখানো হয়। আর পরিশোধের পরিমাণ দেখানো হয় ২ হাজার ৫ টাকা। অর্থাৎ ২ হাজার টাকা ঋণের পরিবর্তে ৩০৬ টাকা সুদ অগ্রিম কেটে রাখা হবে।

সব শর্ত মেনে ২ হাজার টাকা ঋণের আবেদন করলে পরের দিন নগদ অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ১ হাজার ৬৯৬ টাকা ঋণ পান সুমন। তবে পরিশোধের সময় ৫ টাকা যোগ করে তাকে দিতে হবে ২০০৫ টাকা। কিন্তু ৭ দিন অতিবাহিত হলেও ঋণের টাকা জোগাড় করতে না পারায় ৯ দিন পার হয়ে যায়। এবার অ্যাপসে পরিশোধ অপশনে গিয়ে ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দেখতে পান ২ হাজার ৩০৫ টাকা। এভাবে আরও ৬ দিন পর পরিমাণ বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৭৯ টাকা। পরে একজনের কাছে ধার নিয়ে এবং পরিবারের কাছ থেকে কিছু টাকা নিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন সুমন। শুধু সুমন নয়, তারমতো হাজার হাজার বেকার যুবক অনলাইনে পাতা সুদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। র‌্যাপিড ক্যাশ ছাড়াও এম ক্যাশ, টাকাওয়ালাসহ আরও বেশকিছু নামে-বেনামে সুদের কারবার করা অ্যাপসভিত্তিক অবৈধ প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে অনলাইন জগতে।

সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে ৩ দিনে অন্তত ৬০-৭০ জন ভুক্তভোগীর সন্ধান পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ফেসবুকে একটি গ্রুপ রয়েছে। এই গ্রুপের সদস্য রয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি মানুষ। তাদের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনলাইনে এসব সুদের কারবারিদের প্রথম টার্গেট বেকার যুবক। এদের অধিকাংশরাই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অথবা করোনাকালে কাজ হারানো মানুষ। বিশেষ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের ফলে টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালানো অনেক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বিপদে পড়েছেন। পরিবার ও আশপাশের মানুষের কাছে সহযোগিতা না পেয়ে বাধ্য হয়েই চড়া সুদের জালে পা দিচ্ছেন তারা। সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সুমন আহমেদ এই প্রতিবেদককে জানান, রামপুরা এলাকায় টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালাতেন তিনি। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আপাতত টিউশনি নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, দুইটা টিউশনি করে কোনোমতে ঢাকা শহরে আছি। গত মার্চ মাসের মাঝামাঝি এসে পকেট খালি হয়ে যায়। বাজার করার টাকা পর্যন্ত ছিল না। অনেক বন্ধু-বান্ধবের কাছে ধার চেয়েও পাইনি। বাধ্য হয়ে এক বন্ধুর পরামর্শে র‌্যাপিড ক্যাশ নামে একটি অ্যাপস নামিয়ে সেখান থেকে ঋণ নেই। কিন্তু এতো চড়া সুদের ফাঁদে পড়তে হবে বুঝে উঠতে পারিনি। প্রথমে তাদের কথা মতে নিজের সব তথ্য দিয়ে দেই। বাবা-মাসহ পরিবারের আরও ৫ জনের নাম ও মোবাইল নম্বর দিতে হয়েছে। নিজের স্থায়ী অস্থায়ী ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ সব ডকুমেন্টস দিতে হয়েছে। কিন্তু ঋণের আবেদন করলে আমাকে প্রথম ৩ বার রিজেক্ট করে দেয়। চারবারের বার আমাকে ঋণ দেয় তারা। কিন্তু ৭ দিনের শর্তে ২ হাজার টাকার আবেদন করলে আমাকে দেয় ১ হাজার ৬৯৬ টাকা। ৭ দিনে ৩০০ টাকা সুদ নেয়ার কথা থাকলেও ১ দিন দেরি হলেই পরেরদিন থেকে প্রতিদিন ১২৯ টাকা হারে সুদ ধরা শুরু করে। এটাতো আমার জানা ছিল না। তারা এটা কোথাও উল্লেখও করেনি যে ৭ দিন পার হলেই এত টাকা সুদ দিতে হবে। আমার কাছে টাকা না থাকায় অতিরিক্ত ৩ দিন লেগে যায়। আর এতেই আমার কাছ থেকে মোট ১ হাজার ৭৯ টাকা সুদ নেয়। সুমন বলেন, পরে খোঁজ নিয়ে দেখলাম এরা মানুষের সঙ্গে চরমভাবে প্রতারণা করে যাচ্ছে। ফেসবুকে তাদের পেজ আছে। সেখানে তারা এর প্রচারণা চালায়।

ফয়সাল নামে একজন বলেন, এদের ফাঁদে পা দেয়া চরম বোকামি। আমি নিজেও না বুঝে তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলাম। এতে আমাকে কয়েক হাজার টাকা অতিরিক্ত সুদ দিতে হয়েছে। ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে তারা। তবে ৫-৬ হাজার টাকার বেশি ঋণ দেয় বলে আমার মনে হয় না। অল্প টাকা ঋণ দিয়ে উচ্চ হারে প্রচুর টাকা সুদ নিচ্ছে তারা। আপনি যদি ৫০০০ টাকা ঋণ পান। আর যদি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হোন, তাহলে ২-৩ মাসেই অতিরিক্ত ১০-১২ হাজার টাকা সুদ দিতে হবে। এটা যতদিন যাবে পরিেশাধ করার আগ পর্যন্ত শুধু বাড়বেই। বাড়তে বাড়তে যদি ১ লাখ টাকা হয়ে যায় সেটা আপনাকে পরিশোধ করতেই হবে। কারণ তাদের দেয়া নিয়ম মেনে আপনি ঋণ নিয়েছেন। টাকা দিতে না পারলে তারা আপনার বাড়ির লোকজনকে বিরক্ত করা শুরু করবে। তখন জমি বিক্রি করে হলেও টাকা দিতে হবে।

আলাউদ্দিন নামের একজন ভুক্তভোগী বলেন, ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, একবার যে তাদের অ্যাপসে রেজিস্ট্রেশন করবে সে আর ওই অ্যাকাউন্ট বাতিল করতে পারবে না। সুতরাং পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তারা যা করছে এসব অবৈধ। তারা কি সরকারের রেজিস্ট্রেশন করা প্রতিষ্ঠান? কোন ভিত্তিতে তারা এই অবৈধ ব্যবসা করছে। তাদের অ্যাপসে কিংবা ওয়েবসাইটে অফিসের কোনো ঠিকানা দেয়া নেই। অনলাইনে অ্যাপসের মাধ্যমে এরা এসব করছে। তাদের অ্যাপসে কোনো প্রকার যোগাযোগের ঠিকানা দেয়া নেই। কিন্তু কেউ টাকা দিতে দেরি করলেই বিভিন্ন নম্বর থেকে কল করে দ্রুত ঋণ পরিশোধ করতে বলা হয়। অ্যাপসের ভেতরে পাওয়ার্ড বাই বেসিক ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি লেখা আছে। আবার একটা স্টেপ পার হলে লেখা আছে এই ঋণ প্রকল্পটি ভালুকা ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত। অথচ ভালুকা ফাউন্ডেশন নামে কোনো প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি আমি খুঁজে পাইনি। তিনি বলেন, এটা নিঃসন্দেহে একটা প্রতারক চক্র।

র‌্যাপিড ক্যাশ থেকে একজন ভুক্তভোগীর কাছে কল করা নম্বরে (০১৭৮৯৭৩৫৩০২) যোগাযোগ করা হলে বলা হয়, কোনো অভিযোগ থাকলে অ্যাপসে প্রবেশ করে মেসেজের মাধ্যমে অভিযোগ দিতে হবে। এই কথা বলেই কল কেটে দিয়ে ব্লক করে দেয়া হয়। পরে অনেক চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া র‌্যাপিড ক্যাশের ওয়েবসাইটে দেয়া টিএনটি নম্বরে ফোন করলেও রিসিভ করেনি। ওয়েবসাইটে তাদের কোনো ঠিকানাও দেয়া নেই।

এ বিষয়ে কনসাস কনজুমার্স সোসাইটির (সিসিএস) নির্বাহী পরিচালক পলাশ মাহমুদ বলেন, শুধু র‌্যাপিড ক্যাশ, এমক্যাশ কিংবা টাকাওয়ালা নয়, এমন আরও অনেক নাম দিয়ে এরা অনলাইনে মানুষকে বিভিন্নভাবে ঠকাচ্ছে। এ রকম একাধিক আছে যারা সুদ কারবারিসহ আরও অনেক প্রতারণামূলক কাজ করছে। যেমন বেস্টওয়ে, ইজিলাইফ, টুউইশ, আনঞ্জাম, বাইওটেক, সুপার লাইফসহ অনেক আছে যাদের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতারণা করা। সুদের কারবার যারা করছে এটা সম্পূর্ণভাবে অবৈধ। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া তারা কোনোভাবেই এসব করতে পারে না। যত দ্রুত সম্ভব এসব বন্ধ করা উচিত। না হলে লাখ লাখ তরুণ-তরুণীরা এর ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোনো প্রকার অনুমোদন দেয়া হয়নি। এদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো সম্পর্ক নেই। এরা বিভিন্নভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে লোন দেয়ার নামে অবৈধভাবে সুদের কারবার করছে। – মানবজমিন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category


[cvct title=”COVID-19 Global Stats” label-total=”Total Cases” label-deaths=”Death Cases” label-recovered=”Recovered Cases” bg-color=”” font-color=””]

[cvct title=”Coronavirus Stats” country-code=”BD” label-total=”Total Cases” label-deaths=”Death Cases” label-recovered=”Recovered Cases” bg-color=”” font-color=””]



Fact News

Fact News theme is a complete magazine theme, excellent for news, magazines, publishing and review sites. Amazing, fast-loading modern magazines theme for personal or editorial use. You’ve literally never seen or used a magazine that looks or works like this before.

https://slotbet.online/