• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১১:০৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম

খুব ভালো হতো যদি এক বছর সবাই হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারতাম, ড. নাজনীন আহমেদ

Reporter Name / ১৬১ Time View
Update : সোমবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২১

ড. নাজনীন আহমেদ : বেশিরভাগ মানুষের হয়তো ভালো লাগবে না, কিন্তু আবারও এরকম একটা পোস্ট দিতে হচ্ছে। দয়াকরে পুরাটা পড়ে মন্তব্য করবেন। দুদিন ধরে বেশ সমালোচনা দেখছি, কেন মানুষ দোকানপাটে কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন তা নিয়ে। আচ্ছা ধরে নিন কেউ কেনাকাটা করতে গেল না। সবাই এবার ঠিক করল ঈদে কোন কেনাকাটা করবে না। আমাদের কী ধারণা আছে কত হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয় এই ঈদের সময়? কত লক্ষ মানুষের খাওয়া পড়া, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ আসে এই দোকানপাট গুলো চলে বলে? ফেসবুক থেকে

সর্বশেষ অর্থনৈতিক শুমারি হয়েছিল ২০১৩ সনে। সেই অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য অনুযায়ী আরো আট বছর আগে দেশের মোট হোলসেল ও রিটেইল এন্টারপ্রাইজ এর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৫ লক্ষ ৯০ হাজার। আরে এ সকল এন্টারপ্রাইজে কর্মরত ব্যক্তির সংখ্যা তখন ছিল প্রায় ৮৪ লক্ষ। এখন এই সংখ্যা যে বহুগুণে বেড়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আগের সংখ্যাও যদি ধরে নিই তাহলে এই ৮৪ লক্ষ ব্যক্তি, যারা এখানে কাজ করছেন তাদের পিছনে রয়েছে তাদের পরিবার। এক একটি পরিবারের চারজন সদস্য হলেও চিন্তা করে দেখুন কত কোটি মানুষের আহার আর জীবিকা আসবে এইসব বেচাবিক্রি থেকে ।

আরো পেছনে গেলে এ সকল পণ্যের মধ্যে যেগুলো দেশে তৈরি হয়েছে তার উৎপাদনের সাথে জড়িত কত লক্ষ লক্ষ কারিগর শ্রমিক রয়েছেন যাদের বেঁচে থাকার আয় আসবে এই বেচাবিক্রি থেকে। কাজেই কেনাকাটা না করতে বলার আগে ভাবতে হবে, কত বড় বিপর্যয় ফেলবো লক্ষ মানুষের জীবিকা? (তবে একথা মেনে নিচ্ছি এসকল হোলসেলার রিটেইল দোকানের সবাই ঈদের পণ্য কেনা-বেচা সাথে জড়িত নন তাই সংখ্যার কিছুটা হেরফের হতে পারে। তারপরও সংখ্যাটা যে অনেক বড় তাতে সন্দেহ নেই।) হতদরিদ্র মানুষকে সাহায্য দেয়ার জন্য সরকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সেখানে বিভিন্ন দোকানের কর্মচারী হিসেবে যারা আছেন তেমন নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের কত লক্ষ মানুষ দরিদ্র হয়ে যাবেন, তাদের সন্তানরা অপুষ্টিতে পড়বে, লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাবে তা কি আমরা ভেবে দেখেছি?

তার মানে কি, আমি বলছি যে সবাই দল বেধে শপিংয়ে চলে যাব? না, তা বলছি না । বরং আমি বলছি, একদিকে করোনার ঝুঁকি যতটা সম্ভব কম রাখা এবং লক্ষ কোটি মানুষের অন্নের সংস্থান ঠিক রাখা -এ দুয়ের একটি সমন্বয় সাধন করতে হবে । সেক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ আমরা নিতে পারি ।

১) যারা অনলাইন কেনাকাটা সম্ভব এমন দোকানে কেনাকাটার আর্থিক ও কারিগরি সক্ষমতা রাখেন, তারা কোনোভাবেই মার্কেটে যাওয়া ঠিক নয়। সেক্ষেত্রে সরকার বড় বড় ব্র্যান্ডের কিছু কিছু দোকানকে বলে দিতে পারে শুধু অনলাইন কেনাকাটায় যুক্ত থাকতে। যেমন আমি কোন শপিং করতে বাইরে যাব না। যা কিছু কেনার প্রয়োজন বোধ করি, তা অনেকদিন ধরেই অনলাইনে কিনে নিচ্ছি। ঈদের জন্য কিনলেও সেভাবেই কিনব।

২) যারা দোকানে গিয়ে কেনাকাটা ছাড়া উপায় নেই, তাদেরকে আবশ্যিকভাবে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। ডাবল করে মাস্ক পড়তে হবে। এই বিষয়ে গণমাধ্যমে জোর প্রচারণা চালানো উচিত ।

৩) প্রত্যেকটা মার্কেট এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কড়া তদারকি থাকতে হবে, যাতে মানুষ বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরা থাকে ।সেইসাথে দোকানগুলোর প্রবেশ পথে হাত স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

৪) কোন দোকানে ভিড় দেখলে তা এড়িয়ে যেতে হবে।

৫) বয়স্ক এবং শিশুদের সাথে নিয়ে দোকানে যাওয়া যাবে না।

৬) কেনাকাটা শেষে বাসায় গিয়ে কি করে শপিং করা জিনিসগুলোকে জীবাণুমুক্ত করবেন এবং নিজেরাও ভালোমতো হাত ধুয়ে গোসল করে জীবাণুমুক্ত হবেন সেই ধরনের প্রচারণা ব্যাপকভাবে থাকতে হবে।

৭) প্রতিটি মার্কেট এলাকায় ডিজিটাল প্লাটফর্মে স্বাস্থ্যবিধির ব্যাপারে বারবার সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করতে হবে।

৮) যেসব এলাকায় সম্ভব, সেখানে খোলা জায়গায় কেনাকাটা করতে হবে।

৯) করোনা থেকে খুব সহজেই আমাদের মুক্তি নেই। ঈদ গেলে করণা চলে যাচ্ছে না। কাজেই এই বাস্তবতায় আমরা কিভাবে চলব তা ভাবতে হবে।

১০) বড় বড় মেগা মল গুলো তাদের অনলাইন প্লাটফর্ম তৈরি করতে হবে, যাতে সেখান থেকে কেনাকাটা করা যায়।

১১) শপিং করার সময় বাড়াতে হবে, কারণ অল্প সময়ের জন্য দোকানপাট খোলা থাকলে ভিড় বেশি হয়।

১২) সরকার যেহেতু শপিংমল খুলে দিয়েছেন, তাই এই সংক্রান্ত স্বাস্থ্যসচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণা জোরদার করতে হবে ।দোকান মালিকদের পক্ষ থেকেও এই প্রচার প্রচারণায় অংশ নিতে হবে।

১৩) মাস্ক ছাড়া যাদেরকে দোকানে দেখা যাবে, তাদের জরিমানা অনেক বেশি করতে হবে। প্রত্যেক দোকানে মাস্ক রাখতে হবে। যাতে মাস্ক ছাড়া কেউ আসলে তাকে সেটা তারা দিতে পারেন।

বাস্তবতার নিরিখে আমাদের ভাবতে হবে। খুব ভালো হতো যদি এক বছর সবাই হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারতাম আর অনায়াসে খাবার-দাবার জীবিকার সব সংস্থান হয়ে যেত। তা যখন সম্ভব নয়, তখন অনেক পরিবারের কর্মসংস্থান টিকিয়ে রাখতে এবং তাদের বাঁচিয়ে রাখতে বাস্তবতার নিরিখে ভাবতে হবে। সেই আলোকে চলুন, মানুষকে সচেতন করি। অহেতুক বাইরে যাওয়া, ঘোরাঘুরি সভা-সমাবেশ বন্ধ রাখি। যারা অনলাইনে কেনাকাটা করতে পারেন তারা যেন দোকানে গিয়ে ভিড় না করেন। কিন্তু প্রয়োজনে বাইরে গেলে নিজ থেকে কি করে তারা সচেতন থাকবেন, সেই কথাগুলো বারবার বলতে থাকি ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category


[cvct title=”COVID-19 Global Stats” label-total=”Total Cases” label-deaths=”Death Cases” label-recovered=”Recovered Cases” bg-color=”” font-color=””]

[cvct title=”Coronavirus Stats” country-code=”BD” label-total=”Total Cases” label-deaths=”Death Cases” label-recovered=”Recovered Cases” bg-color=”” font-color=””]



Fact News

Fact News theme is a complete magazine theme, excellent for news, magazines, publishing and review sites. Amazing, fast-loading modern magazines theme for personal or editorial use. You’ve literally never seen or used a magazine that looks or works like this before.

https://slotbet.online/