গত এক যুগ ধরেও দেশে চাষযোগ্য মসলা উদ্ভাবনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে মাগুরা মসলা গবেষণা কেন্দ্র। অথচ সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় হচ্ছে। দেশের মসলাজাতীয় ফসলের উন্নত জাত উদ্ভাবন এবং চাষের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় মাগুরায় মসলা গবেষণা কেন্দ্র, বগুড়ার শিবগঞ্জে প্রধান মসলা গবেষণা কেন্দ্র, জয়দেবপুর ও কুমিল্লাতে আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র এবং লালমনিরহাট, খাগড়াছড়ি, ফরিদপুর, সিলেটের জয়ন্তপুর, বরিশাল, দেবীগঞ্জে ও মৌলভীবাজারের আকরামপুরে উপমসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।

মাগুরা মসলা গবেষণা উপকেন্দ্রকে কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা হলেও গত এক যুগে পিঁয়াজ, হলুদ, ধনিয়া, মেথী ও আদার বেশ কয়েকটি উন্নত জাত উদ্ভাবনে সফল হয়। কিন্তু বিদেশ থেকে জিরা, লবঙ্গ, দারুচিনি, গোলমরিচ ও এলাচের জাত সংগ্রহ করেও বাংলাদেশে চাষযোগ্য জাত উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা শুরু করে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। ফলে সরকারের লাখ লাখ টাকা অপচয় হলেও কোন সফলতা দেখাতে পারেনি।

বিশেষ করে মাগুরা মসলা গবেষণা কেন্দ্র নানান কর্মসূচির নামে হাজার হাজার টাকা ব্যয় এবং বিভিন্ন গবেষণার নামে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যান্য কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে গোলমরিচের চাষে সফলতা আনতে সক্ষম হলেও মাগুরা কেন্দ্র ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। দারুচিনি গাছ হিসেবে পরিচর্যা করেও বড় করে দেখতে পায় গাছের বাকল থেকে দারুচিনি হয়নি। গাছগুলো দারুচিনির গাছ নয়। অথচ এর পেছনে এক যুগ পরিচর্যা করে হাজার হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়েছে।

জিরার আদি জন্মস্থান ভূমধ্যসাগর তীরবর্তী দেশ মিসর ও সিরিয়া। ইরান, ভারত, মরক্কো, চীন, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, জাপান, শ্রীলংকা, রাশিয়া প্রভৃতি দেশে জিরার চাষ হলেও বাংলাদেশে এখনো সফলতা আসেনি। প্রতি বছর গবেষণা কেন্দ্রগুলোর গবেষণা প্লটে জিরা চাষ করা হচ্ছে। গাছ হয় ফুল ফলও ধরে। কিন্তু জিরা হয় না। দেশে গোলমরিচ চাষে সফলতা এলেও লাভজনক এ মসলার উৎপাদন প্রসারে মাগুরা কেন্দ্রের কোন উদ্যোগ নেই।

শ্রীলংকা ও ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা জাত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বাংলাদেশে চাষযোগ্য গোলমরিচের জাত উদ্ভাবন করা হয়। যার থেকে প্রতি বছর প্রতি গাছ থেকে দেড় কেজি ফলন পাওয়া সম্ভব। অথচ মাগুরা মসলা গবেষণা কেন্দ্র এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে । রোপণের ৫-৬ বছরের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে এবং ২০ বছর পর্যন্ত ফল দিয়ে থাকে। লবঙ্গর গাছ তৈরিতে সফল হলেও লবঙ্গ তৈরিতে কোন সফলতা দেখাতে পারেনি মসলা গবেষণা কেন্দ্রগুলো।১৭৭০ সালে ফরাসিগণ প্রথম মরিসাসে লবঙ্গ চাষে সফল হয়। বর্তমানে ৯০ ভাগ লবঙ্গ তানজানিয়া সরবরাহ করে থকে।

দারুচিনি চাষে এতদিন মাগুরা মসলা গবেষণা কেন্দ্র সফলতা দাবি করে আসছিল। এ কেন্দ্রে দারুচিনি গাছ রোপণ করে পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তোলা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উক্ত গাছ থেকে দারুচিনি হয়নি। আসলে এ গাছগুলো দারুচিনির গাছ নয়। অথচ এক যুগ ধরে এর পেছনে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়েছে যা কোন কাজেই আসেনি। জানা গেছে, সিরিয়া থেকে জিরার একটি জাত সংগ্রহ করা হয়েছে। জিরা চাষে সফলতা সম্ভব তবে এর জন্য প্রয়োজন দায়িত্বে নিয়োজিতদের আন্তরিকতা। তেমনি দারুচিনি লবঙ্গ ও এলাচের ভাল জাত সংগ্রহের মাধ্যমে দেশে চাষযোগ্য জাত উদ্ভাবন সম্ভব। মসলার উন্নত জাত উদ্ভাবন এবং দেশে আবাদযোগ্য মসলা চাষে মসলা গবেষণা কেন্দ্রসমূহের কার্যক্রম তদারকির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

এ ব্যাপারে মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মনিরুজ্জমান আর্থিক অপচয়ের কথা অস্বীকার করে জানান, পিঁয়াজ, হলুদ, ধনিয়া, মেথী ও আদার বেশ কয়েকটি উন্নত জাত উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য বিদেশী মসলার উন্নত জাত উদ্ভাবনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *