ছোট্ট একটি আয়াতের অংশ- ‘আলা বি জিকরিল্লাহি তাত্বমাইন্নুল কুলুব’ অর্থাৎ আল্লাহর জিকিরেই অন্তর বা আত্মা (কলব) প্রশান্তি পায়’। সত্যিই কি তাই?

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে-

‘দুনিয়ায় যে আল্লাহ তাআলার দেওয়া বিশাল নেয়ামতের মধ্যে মানুষ প্রতিটি দিন অতিবাহিত করে। প্রতিটি মুহূর্ত বিনা হিসেবে ইচ্ছে মতো অনায়াসে পার করছে। এ মানুষগুলো দুনিয়ায় প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় নানান কোলাহলে ব্যস্ত থাকলেও একান্তে কিছু সময় আল্লাহকে স্মরণ করবে; এ উপলব্ধি তাদের অকৃতজ্ঞ অন্তরে জেগে ওঠে না।’

মনে হয় যেন

মহান রবের দেওয়া চব্বিশ ঘণ্টাই নিত্যদিনের সব কাজের সময় থাকলেও চুপিসারে একাগ্রচিত্তে তাঁকে স্মরণ করার জন্য কিছু মুহূর্তের বড়ই অভাব! মনে হয় যেন- মানুষ বড্ড অশান্তিতে দিন পার করছে। দুনিয়ার মোহে ব্যস্ত থাকা অশান্ত আত্মাগুলো কোরআনের সেই ঘোষণা ভুলেই গেছে। যে ঘোষণায় শান্তির ঠিকানা। যে ঘোষণা দিয়েছেন স্বয়ং আল্লাহ-

اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ تَطۡمَئِنُّ قُلُوۡبُهُمۡ بِذِکۡرِ اللّٰهِ ؕ اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰهِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ

‘যারা ঈমান আনে আর তাদের অন্তরসমূহ আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্ত হয়। জেনে রাখ! আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়।’ (সুরা রাদ : আয়াত ২৮)

শুধু কি তা-ই!

মানুষ যেন আল্লাহর জিকিরে প্রশান্তি পায়; সে জন্য নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিকির করার ব্যাপারেও মানুষকে সতর্ক করেছেন। এ জন্যই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উপমা দিয়ে জিকিরের প্রতি উৎসাহিত করতে ঘোষণা করেছেন-

১. ‘যে তার প্রতিপালকের জিকির করে, আর যে জিকির করে না; তাদের উপমা হলো জীবিত ও মৃত ব্যক্তির ন্যায়।’ (বুখারি)

২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন একশতবার পড়বে-

سُبْحَانَ اللهِ وَ بِحَمْدِهِ

‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি’

তার গুনাহ যদি সমুদ্রের ফেনাতুল্যও হয় তবুও আল্লাহ দয়া করে তা ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি)

৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি দিনে একশতবার পড়বে-

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، وَهْوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ

উচ্চারণ : ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু; ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু; লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু; ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন কাদির’

সে ব্যক্তি ১০ জন ক্রীতদাস স্বাধীন করার সাওয়াব পাবে; তার জন্য একশটি নেকি লেখা হবে এবং তার একশটি গুণাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে। ওই দিন সন্ধা পর্যন্ত শয়তান থেকে তার রক্ষা পাওয়ার ব্যবস্থা হবে এবং তার চেয়ে উত্তম আর কেউ হবে না। তবে যে ব্যক্তি এটা তার চেয়ে বেশি পড়ে সে ব্যতিত।’ (বুখারি)

মনে রাখতে হবে

আল্লাহর স্মরণ বা জিকিরের অর্থ হলো- তাঁর তওহিদের (একত্ববাদের) বর্ণনা করা, যার দ্বারা মুশরিকদের অন্তর সঙ্কুচিত হয়ে যায়। এই জিকির হলো- আল্লাহর ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত, নফল নামাজ এবং দোয়া ও মুনাজাত। এই জিকির হলো- ঈমানদারদের মনের খোরাক। আল্লাহর আদেশ-নির্দেশ পালন। জিকির ছাড়া ঈমানদার ও পরহেযগার ব্যক্তিরা অস্থির থাকেন। শুধু জিকিরের মাধ্যমেই তারা অন্তরে প্রশান্তি পায়।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, দিন-রাতের এ ব্যস্ত সময়ে কিছু সময়ের জন্য হলেও মহান আল্লাহকে স্মরণ করা। অন্তর দিয়ে মহান আল্লাহর জিকির করা। যে জিকিরে তাদের অশান্ত আত্মাগুলো প্রশান্তি পেয়ে ধন্য হবে।

আ্ল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে একান্তে জিকির করার তাওফিক দান করুন। নিজেদের অন্তরকে আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে প্রশান্তি দেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *