অমিত প্রতিভা ও অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতার মিশেলে বিষ্ময়সূচক চিহৃটি তাঁর নামের সঙ্গে সব সময়ই লেপ্টে থাকে। প্যারিসের থিয়েখ দু শাতেলে ব্যালন ডি’অর অনুষ্ঠানেও সে বিষ্ময় ধরে রাখলেন লিওনেল মেসি; রেকর্ড সপ্তমবারের মতো ব্যালন ডি’অর জিতলেন আর্জেন্টাইন ফুটবল তারকা লিওনেল মেসি। আগের ছয়বার মেসি এই পুরস্কার জিতেছেন-২০০৯, ২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০১৫ ও ২০১৯ সালে। বাংলাদেশ সময় সোমবার (২৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে এই পুরস্কার ঘোষণা করা হয়।
গোল ডট কম জানিয়েছে, সেরা খেলোয়াড় ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বছরের সেরা ক্লাবের পুরস্কার পেয়েছে চেলসি। ব্যালনের তালিকায় ছয় নম্বরে এসেছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নাম। রবার্ট লেভান্ডোস্কি বর্ষসেরা স্ট্রাইকারের পুরস্কার জিতেছেন।
ফ্রান্স ফুটবল ম্যাগাজিনের দেওয়া গত বছরের সেরা খেলোয়াড়ের এ পুরস্কার জয়ের দৌড়ে ফেবারিট ছিলেন পিএসজির আর্জেন্টাইন এ তারকা। রবার্ট লেফানডভস্কি এই পুরস্কার জয়ে ছিলেন মেসির নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী। লড়াইটা শুধু এই দুজনের মধ্যেই দেখেছেন বেশির ভাগ বিশ্লেষক।
শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে লেফানডভস্কিকে হারিয়ে নিজের সর্বোচ্চসংখ্যক ব্যালন ডি’অর জয়ের রেকর্ডকে আরও এক ধাপ উঁচুতে নিয়ে গেলেন ৩৪ বছর বয়সী মেসি।
সংক্ষিপ্ত পাঁচজনের তালিকায় উঠে আসেন মেসি, লেফানডভস্কি, জর্জিনিও, করিম বেনজেমা ও এনগোলো কান্তে। এই পাঁচ খেলোয়াড়ের মধ্যে সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে পুরস্কারটি জিতলেন মেসি। দ্বিতীয় হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বায়ার্ন মিউনিখের পোলিশ স্ট্রাইকার রবার্ট লেফানডস্কিকে। তৃতীয় চেলসির ইতালিয়ান মিডফিল্ডার জর্জিনিও।
২১ বছরের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে বার্সেলোনার সঙ্গে। কাঁদতে কাঁদতে বিদায় বলেছেন প্রিয় ন্যু ক্যাম্পকে। মেসি কেঁদেছিলেন আরও একদিন। ১৪ জুলাই। ব্রাজিলের মারাকানায় যেদিন তাদেরই হারিয়ে জিতেছিলেন আরাধ্য আন্তর্জাতিক শিরোপা।
দেশকে ২৮ বছর পর এনে দিয়েছিলেন কোপা আমেরিকা শিরোপা। ওই টুর্নামেন্টে মাঠে ছিলেন ৬৩০ মিনিট। ৪ গোল ও ৫ অ্যাসিস্ট করে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টসেরাও। ধুঁকতে থাকা বার্সেলোনাকেও জিতিয়েছিলেন কোপা দেলরে শিরোপা, লা লিগায় করেছিলেন তৃতীয়ও। ক্লাবটির হয়ে লা লিগাতেই করেছেন ৩০ গোল।
সবকিছুর স্বীকৃতি যেন মেসি পেলেন সোমবার রাতে। এবারের ব্যালন জিতে মেসি উঠে গেছেন চূড়ায়। আগে থেকেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পাঁচবার জেতা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর চেয়ে একটি বেশি ব্যালন ডি অর ছিল তার।
এবার সংখ্যাটা করলেন দুই। সবচেয়ে বেশি ব্যালন ডি অর যে তার- এটি বোধ হয় বলাই বাহুল্য। এখনও খেলছেন এমন খেলোয়াড়দের মধ্যে ব্যালন আছে কেবল একজনের, লুকা মদ্রিচ একবারই জিতেছিলেন ২০১৮ সালে।
আগের ছয়বার মেসি এই পুরস্কার জিতেছেন। সবগুলোই বার্সেলোনায় থাকতে। এক বছর বিরতি দিয়ে আবারও জিতলেন এই ট্রফি। এখন তিনি পিএসজির।
আরও প্রায় এক দশক আগে বার্সেলোনার কিংবদন্তি ও কোচ ইয়োহেন ক্রুইফ বলে গিয়েছিলেন, ‘মেসি হয়তো ৫, ৬ বা ৭টি ব্যালন ডি অর জিতবে।’ এক দশক পর আর্জেন্টাইন তারকা সত্য করলেন তার কথাই।
১৯৫৬ সালে প্রথমবার দেওয়া হয় ব্যালন ডি অর। তখন কেবল ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়কে পুরস্কার দেওয়ার নিয়ম ছিল। ১৯৯৫ সাল থেকে ইউরোপে খেলা বিশ্বের যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্য পুরস্কারটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২০০৭ সাল থেকে সেটি দেওয়া হচ্ছে বিশ্বের যেকোনো জায়গায় খেলা ফুটবলারকে। সারা বিশ্বের ১৭০ জন ফুটবল সাংবাদিক বেছে নেন ব্যালন ডি অর জয়ীকে।
ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার আর ফ্রান্স ফুটবলের ব্যালন ডি’অর একীভূত হয়েছিল ২০১০ সালে। ফিফার সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় ২০১৬ সাল থেকে আবার একাই ব্যালন ডি’অর দেওয়া শুরু করে ফ্রান্স ফুটবল। ব্যালন ডি’অর জয়ী নির্ধারণ করা হয় সাংবাদিকদের ভোটে।
সেরা ত্রিশ:
প্রথম: লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা/পিএসজি/আর্জেন্টিনা)
দ্বিতীয়: রবের্ত লেভানদোভস্কি (বায়ার্ন মিউনিখ/পোল্যান্ড)
তৃতীয়: জর্জিনিয়ো (চেলসি/ইতালি)
চতুর্থ: করিম বেনজেমা (রিয়াল মাদ্রিদ/ফ্রান্স)
পঞ্চম: এনগোলে কঁতে (চেলসি/ফ্রান্স)
ষষ্ঠ: ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো (ইউভেন্তুস/ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড/পর্তুগাল)
সপ্তম: মোহামেদ সালাহ (লিভারপুল/মিশর)
অষ্টম: কেভিন ডে ব্রুইনে (ম্যানচেস্টার সিটি/বেলজিয়াম)
নবম: কিলিয়ান এমবাপে (পিএসজি/ফ্রান্স)
দশম: জানলুইজি দোন্নারুম্মা (এসি মিলান/পিএসজি/ইতালি)
একাদশ: আর্লিং হলান্ড (বরুশিয়া ডর্টমুন্ড/নরওয়ে)
দ্বাদশ: রোমেলু লুকাকু (চেলসি/বেলজিয়াম)
ত্রয়োদশ: জর্জো কিয়েল্লিনি (ইউভেন্তুস/ইতালি)
চতুর্দশ: লিওনার্দো বোনুচ্চি (ইউভেন্তুস/ইতালি)
পঞ্চদশ: রাহিম স্টার্লিং (ম্যানচেস্টার সিটি/ইংল্যান্ড)
ষোড়শ: নেইমার (পিএসজি/ব্রাজিল)
সপ্তদশ: লুইস সুয়ারেস (আতলেতিকো মাদ্রিদ/উরুগুয়ে)
অষ্টাদশ: সিমোন কেয়া (এসি মিলান/ডেনমার্ক)
১৯তম: ম্যাসন মাউন্ট (চেলসি/ইংল্যান্ড)
২০তম: রিয়াদ মাহরেজ (ম্যানচেস্টার সিটি/আলজেরিয়া)
যৌথভাবে ২১তম: লাউতারো মার্তিনেস (ইন্টার মিলান/আর্জেন্টিনা), ব্রুনো ফের্নান্দেস (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড/পর্তুগাল)
২৩তম: হ্যারি কেইন (টটেনহ্যাম হটস্পার/ইংল্যান্ড)
২৪তম: পেদ্রি (বার্সেলোনা/স্পেন)
২৫তম: ফিল ফোডেন (ম্যানচেস্টার সিটি/ইংল্যান্ড)
যৌথভাবে ২৬তম: জেরার্দ মরেনো (ভিয়ারিয়াল/স্পেন), রুবেন দিয়াস (ম্যানচেস্টার সিটি/পর্তুগাল), নিকোলো বারেল্লা (ইন্টার মিলান/ ইতালি)
যৌথভাবে ২৯তম: লুকা মদ্রিচ (রিয়াল মাদ্রিদ/ক্রোয়েশিয়া), সেসার আসপিলিকুয়েতা (চেলসি/স্পেন)
সবশেষ ১০ বারের বর্ষসেরা ফুটবলার:
একীভূত ফিফা ব্যালন ডি’অর
২০১১ লিওনেল মেসি
২০১২ লিওনেল মেসি
২০১৩ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৪ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৫ লিওনেল মেসি
দ্য বেস্ট ফিফা মেনস প্লেয়ার ব্যালন ডি’অর
২০১৬ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৭ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৮ লুকা মদ্রিচ লুকা মদ্রিচ
২০১৯ লিওনেল মেসি লিওনেল মেসি
২০২০ রবের্ত লেভানদোভস্কি (কোভিডের কারণে দেওয়া হয়নি)