শেরপুরে তালাকের পরও তা গোপন রেখে সাবেক স্ত্রীর সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের অভিযোগে ধর্ষণের মামলায় শাহ আলী (৪৪) নামে সাবেক স্বামীকে ৩০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে তাকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার দুপুরে একমাত্র আসামির অনুপস্থিতিতে ওই রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. আখতারুজ্জামান।

অভিযুক্ত শাহ আলী শ্রীবরদী উপজেলার গড়জরিপা এলাকার কৃষক আবু বকরের ছেলে।

আদালত সূত্রে জানা যায়, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে যৌতুক দাবি করে শাহ আলী স্ত্রীকে ব্যাপক নির্যাতন করতেন। যৌতুক না পেয়ে ২০১২ সালের ১৩ মে শাহ আলী স্ত্রীকে তালাক দেয়। কিন্তু তালাকের ঘটনাটি সে গোপন রেখে স্ত্রীর সঙ্গে দৈহিক মেলামেশা এবং নির্যাতন অব্যাহত রাখে। নির্যাতন সইতে না পেরে ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে শাহ আলীর বিরুদ্ধে স্ত্রী একটি মামলা করেন। ওই বছর ৪ ডিসেম্বর আদালতে হাজির হয়ে শাহ আলী কাগজ-পত্র জমা দিয়ে বলেন- তিনি স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন ২০১২ সালের ১৩ মে। সুতরাং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। পরে জামিন নিয়ে তিনি এলাকা ত্যাগ করেন। গত ছয় বছর তার কোনো হদিস নেই।

পরে আদালতের মাধ্যমে তালাকের কথা জেনে শাহ আলীর বিরুদ্ধে তার সাবেক স্ত্রী ধর্ষণের অভিযোগ এনে একই আদালতে ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারী পৃথক আরেকটি মামলা করেন। মামলার অভিযোগে বলা হয়- প্রতারণা করে দীর্ঘ আড়াই বছর শাহ আলী বিভিন্ন সময় তাকে ধর্ষণ করেছে। ওই মামলায় শাহ আলী, তার বাবা-মাসহ ৪ জনকে আসামি করা হয়।

শ্রীবরদী থানার এস আই আবুল কালাম তদন্ত শেষে একই বছরের ৮ জুন চার জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগ গঠন হলে ট্রাইব্যুনাল ৩ জনকে অব্যাহতি দেয় এবং প্রধান আসামি হিসেবে শাহ আলীর বিচার শুরু হয়। মামলার বিচার কাজ চলাকালে বাদী- ভিকটিম, চিকিৎসক ও তদন্ত কর্মকর্তাসহ ৯ জন সাক্ষী দেন।

রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড. গোলাম কিবিরয়া বুলু বলেন, আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ২৩ নভেম্বর সোমবার দুপুরে শেরপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মো. আখতারুজ্জামান আসামি শাহ আলীকে ৩০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

এ রায়কে একটি ঐতিহাসিক রায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে এ রায় সমাজে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া ওই আসামির বিরুদ্ধে যৌতুকের জন্য নির্যাতনের যে মামলাটি রয়েছে সেটি অল্প কিছুদিনের মধ্যে আদেশ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *