ইব্রাহিম মোহাম্মদ বিন হাসানের বয়স সবে পাঁচ মাস। প্রিয়জনের মুখ চিনতে শুরু করেছে কেবল। কদিন বাদে আধো আধো বুলিতে সবাইকে অবাক করে দেওয়ার কথা তার। অথচ এখন হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে ভীষণ যন্ত্রণায়। সেখানে ট্রলির সঙ্গে রশি দিয়ে বাঁধা তার ডান পা। ভেঙে গেছে উরুর হাড়। এমন দৃশ্য মেনে নিতে বুক ফেটে যাচ্ছে শিশুটির মায়ের।

স্কুলপড়ুয়া ধনীর দুলালের বেপরোয়া গতির গাড়ির ধাক্কায় আহত হয়ে আজ হাসপাতালে শিশুটি। এ ঘটনায় তার বাবা ব্যাংক কর্মকর্তা ফখরুল হাসান ও রিকশাচালক আনোয়ার ইসলামও আহত হয়েছেন।

ছুটির দিন শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে রিকশায় বাবার কোলে ঘুরতে বেরিয়েছিল ইব্রাহিম। এসময় হঠাৎ পেছন থেকে বেপরোয়া গতিতে ওই কিশোরের চালিয়ে আসা প্রাইভেটকার সজোরে ধাক্কা দেয় তাদের বহনকারী রিকশাটিকে। রিকশা থেকে ছিটকে পড়েন ফখরুল হাসান, তার কোলে থাকা ইব্রাহিম ও রিকশাচালক আনোয়ার ইসলাম। এতে ফখরুলের ডান হাত ভেঙে যায়। আর পায়ে গুরুতর আঘাত পান রিকশাচালক। তারা সবাই এখন চিকিৎসাধীন। ঘটনাটি ঘটে রাজধানীর বেইলি রোডে।

এ ঘটনার কয়েক সেকেন্ড আগে সড়কে দাঁড়িয়ে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন একজন। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া সেই ভিডিওটিতে দেখা যায়, কালো রঙের গাড়িটি (ঢাকা-মেট্রো-গ-৩৫-২২৬৩) বেপরোয়া গতিতে আসতে থাকে। এরপর ঠিক পেছন থেকে রিকশাকে ধাক্কা দেয়। গাড়িটির ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় সেই রিকশা। এ সময় গাড়িচালক ওই কিশোর গাড়ি না থামিয়ে পালিয়ে যায়।

কাঁদতে কাঁদতে ইব্রাহিমের মা রোকাইয়া আক্তার নিশি বলেন, আমার সন্তান শুধু কান্নাকাটি করছে। ওর খুব যন্ত্রণা হচ্ছে, কিন্তু মুখে বলতে পারছে না। আমরা শুধু ওর পায়ের ক্ষতটাই দেখতে পাচ্ছি। ওদিকে আমার স্বামীর হাত ভেঙে গেছে, তার কাছেও যেতে পারছি না। আমি মানসিকভাবে এত বিপর্যস্ত যে, কী বলছি তা নিজেও জানি না।

শিশুটির বাবা ফখরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, এ ঘটনার পর আমার বাচ্চাকে নিয়ে আর রিকশায় উঠবো কি না তার নিশ্চয়তা নেই। রিকশায় হয়তো আর ওঠা হবে না। কারণ আল্লাহ না করুক, ও (শিশু) যদি মারা যেত তাহলে ওর মায়ের কাছে আমি কী জবাব দিতাম?

এদিকে ঘটনার পর ওই কিশোর গাড়ি নিয়ে তার মগবাজারের বাসায় চলে যায়। এরপর সে তার মাকে নিয়ে বাসে মেহেরপুরের গাংনীতে দাদার বাড়ি চলে যায়। সেখান থেকে আবার চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় খালার বাড়ি গিয়ে আত্মগোপনে থাকে। পরে দুই উপজেলার পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ।

গতকাল রোববার (২১ নভেম্বর) রাতে তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) বিপ্লব কুমার সরকার জানান, ওই কিশোরের জন্ম ২০০৬ সালে। সে হিসেবে তার বয়স ১৫ বছর। এই বয়সে তার লাইসেন্স থাকার কথা নয়। সে রাজধানীর একটি স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। সেখান থেকে ভর্তি বাতিল করে অন্যত্র ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। তার বাবা একজন আইনজীবী বলে আমরা জানতে পেরেছি। এ ঘটনায় রমনা থানায় মামলা হয়েছে।

মর্মান্তিক এ ঘটনার পর প্রশ্ন ওঠে, প্রাইভেটকারচালক কিশোর মাদকাসক্ত ছিল কি না। পুলিশ বলছে, সে মাদকাসক্ত ছিল কি না তা এখনো জানা যায়নি। তার ডোপ টেস্ট করা হবে।

তবে ওই কিশোরের ফেসবুক আইডি ঘেঁটে দেখা যায়, এর আগেও সে মিউজিক বাজিয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়েছে। তখন তার হাতে ছিল বিয়ারের বোতল।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, পাঁচদিনের রিমান্ডের আবেদন করে ওই কিশোরকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে তার ডোপ টেস্ট করা হবে।

অন্যদিকে ঘটনার পর প্রাইভেটকারটি জব্দ করে পুলিশ। ওই কিশোর বা তার পরিবার গাড়িটির মালিক নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। গাড়িটির মালিক ওয়ারী থানার এক বাসিন্দা।জাগো নিউজ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *