সৌরমণ্ডলের যে মুলুকে এর আগে আর ‘পা’ পড়েনি সভ্যতার, নাসার মহাকাশযান এবার গেল সেই গন্তব্যে। সৌরমণ্ডলের বৃহত্তম গ্রহ বৃহস্পতির কক্ষপথে থাকা ট্রোজান গ্রহাণুদের তথ্য সংগ্রহে।

গতকাল শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় কেপ ক্যানাভেরাল থেকে স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৫টা ৩৪ মিনিটে ‘অ্যাটলাস ভি’ রকেটে চেপে ট্রোজানপাড়ায় যাওয়ার লক্ষ্যে মহাকাশে পাড়ি জমাল নাসার ‘লুসি’ মহাকাশযান। লুসিই প্রথম কোনো সৌরশক্তিচালিত মহাকাশযান, যা সৌরমণ্ডলে সূর্য থেকে এতটা দূরে যাচ্ছে।

১২ বছর ধরে বৃহস্পতির কক্ষপথে লুসির অভিযান চলবে। কক্ষপথে আটটি ট্রোজান গ্রহাণুকে খুব কাছ থেকে চিনতে, জানতে, বুঝতে; সেগুলোর রং কেন কোনোটা লালচে হলে অন্যটা ধূসর বা কালো অথবা বাদামি, কেন সেই নানা রঙের খেলা ট্রোজানদের মুলুকে, সৌরমণ্ডল তৈরি হওয়ার সময় সোনা, প্লাটিনাম, লোহা, নিকেল, কোবাল্টের মতো কী কী মূল্যবান মৌল দিয়ে সেগুলো গড়ে উঠেছিল, আর সেই সব মূল্যবান অথচ অতিপ্রয়োজনীয় মৌলগুলো ট্রোজান গ্রহাণুগুলোতে কী পরিমাণে রয়েছে, তা জরিপ করবে।

নাসার তরফে জানানো হয়েছে, এই অভিযান সৌরমণ্ডল তৈরির আদত ইতিহাস জানতে সহায়ক তো হবেই; পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ যখন দ্রুত নিঃশেষ হওয়ার মুখে, তখন ওই সব গ্রহাণু থেকে নানা ধরনের মূল্যবান মৌল নিয়ে আসা সম্ভব কি না, তা কী পরিমাণে পৃথিবীতে আনা সম্ভব হতে পারে, তা বুঝতেই লুসি যাচ্ছে ট্রোজান গ্রহাণুদের মুলুকে।

যাত্রাপথে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বাড়তি শক্তি নিতে এই নীলাভ গ্রহটির পাশ দিয়েও তিনবার উড়ে যাবে লুসি। ১২ বছরে। সৌরমণ্ডলের বাইরের প্রান্তে গিয়ে লুসির আগে আর কোনো মহাকাশযানই আবার পৃথিবীর কাছাকাছি ফিরে আসেনি। তাই এই ব্যাপারেও লুসি দৃষ্টান্ত গড়ে তুলতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে নাসা।

নাসার সায়েন্স মিশনের অ্যাসোসিয়েট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর টমাস জুরবুচেন বলেন, ‘যে ট্রোজান গ্রহাণুগুলোতে যাচ্ছে লুসি, তার প্রতিটিই সৌরমণ্ডল তৈরির ইতিহাস জানাতে পারবে। আগামী দিনে পৃথিবীর ফুরিয়ে আসা প্রাকৃতিক সম্পদের বিকল্প পথেরও হদিস দিতে পারবে এই ট্রোজান গ্রহাণুগুলো।’

ঠিক চার বছরের মাথায় ২০২৫-এ লুসি প্রথম যে গ্রহাণুটিতে পৌঁছাবে, তার নাম ‘ডোনাল্ড জোহানসন’। এটি বৃহস্পতির কক্ষপথে ট্রোজান গ্রহাণুদের মুলুকে নেই। রয়েছে মঙ্গল ও বৃহস্পতির মাঝখানে যে গ্রহাণুপুঞ্জ, সেখানেই। আদিমতম মানুষের বিশেষ প্রজাতি লুসির আবিষ্কারকের নামেই নামকরণ করা হয়েছে গ্রহাণুটির।

লুসি অন্য সাতটি গ্রহাণুতে যাবে ২০২৭ থেকে ২০৩৩ সালের মধ্যে। সেই সব কয়টিই রয়েছে বৃহস্পতির কক্ষপথে। সেগুলো ট্রোজান গ্রহাণু। সূত্র : এএফপি, আনন্দবাজার পত্রিকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *