চোট আছে, কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই সেরে উঠবেন বলে অনেকটাই নিশ্চিত ছিলেন তিনি। গত দেড় বছরে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা না হলেও আসন্ন বৈশ্বিক আসরের দলে তাঁর থাকা নিয়েও কোনো সংশয় ছিল না।
ছিল যে না, সেটি তো তামিম ইকবালের নিজেকে বিশ্বকাপ দল থেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণার ঘণ্টা চারেকের মধ্যে নিশ্চিত করলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসানও, ‘আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলব, বিশ্বকাপে সে (ওপেনার হিসেবে) আমাদের প্রথম পছন্দই ছিল।’
কিন্তু লম্বা সময় কোনো ম্যাচ না খেলে শুধুই প্রথম পছন্দ হিসেবে দলে ঢুকে গেলে অনেকের প্রতি ‘সুবিচার’ হতো বলে মনে করেননি বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক। গত বছর মার্চে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছেন নিজের সর্বশেষ কুড়ি-বিশের ম্যাচ। নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দিলেও টি-টোয়েন্টি সিরিজ না খেলেই দেশে ফিরেছিলেন। জিম্বাবুয়ে সফর থেকেও তা-ই। ডান হাঁটুর চোটের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকায় দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার পর খেলছেন না এই নিউজিল্যান্ড সিরিজেও। ম্যাচ প্রস্তুতি ছাড়াই বিশ্বকাপ দলে ঢুকে পড়ে কারো জায়গা নষ্ট করতে না চাওয়ার চিন্তা থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেই আগে তা ফোনে জানান বিসিবি সভাপতি ও প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনকে। এর পরই গতকাল দুপুর ১টার পরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিজের পেজ থেকে ভিডিও বার্তায় আনুষ্ঠানিকভাবে জানান বিশ্বকাপ দল থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা। ফোনে বিষয়টি জানার পর বোর্ড সভায় যোগ দিতে মিরপুরে আসার পথে গাড়িতে বসে তামিমের বক্তব্য শুনতে শুনতে নাজমুলের মনে হচ্ছিল, ‘সহজ সিদ্ধান্ত নয় এটি। এ রকম সিদ্ধান্ত নিতে সাহস লাগে।’
সাহসী ঘোষণার শুরুতেই তামিমের দৃপ্ত উচ্চারণ, ‘আমার মনে হয় না, বিশ্বকাপ দলে আমার থাকা উচিত। বিশ্বকাপের জন্য আমাকে পাওয়া যাবে না।’ কেন, পরে সেই ব্যাখ্যায় দেখিয়েছেন একাধিক কারণও, ‘এর পেছনে দু-তিনটি কারণ আছে। একটি বড় কারণ গেম টাইম। অনেক দিন ধরেই এই ফরম্যাটে খেলছি না আমি। দ্বিতীয়ত চোট। যদিও চোট আমার মনে হয় না অত বড় সমস্যা। কারণ আমি আশা করি যে বিশ্বকাপের আগেই ঠিক হয়ে যাব।’
ঠিক হয়ে গেলেও বিশ্বকাপ খেলবেন না বলে মনস্থির করার মূল প্রভাবক বলছেন এটিকে, ‘এই সিদ্ধান্ত নিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে যে জিনিসটি, সেটি হলো সর্বশেষ ১৫-১৬টি টি-টোয়েন্টি আমি খেলিনি। এবং আমার জায়গায় যারা খেলছিল, তাদের প্রতি সুবিচার হতো বলে আমার কাছে কোনোভাবেই মনে হয় না, যদি আমি হঠাৎ করে এসে ওদের জায়গাটা নিয়ে নেই।’ সতীর্থদের কারো কারো প্রতি অবিচার করতে চান না বলে বিশ্বকাপ দলে থাকবেন জেনেও সরে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করতে ভুললেন না, ‘আমি মনে করি, বিশ্বকাপ দলে আমি হয়তো বা থাকতাম। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় না, এটি সুবিচার হতো।’
বিশ্বকাপ না খেলা আর টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরে যাওয়া যে এক কথা নয়, সে বিষয়েও নিজের অবস্থান সুনির্দিষ্ট করেছেন তামিম, ‘আবার পরিষ্কার করে দিই, আমি অবসর নিচ্ছি না। অবসরে যাচ্ছি না। এই বিশ্বকাপ আমার খেলা হবে না। এটিকেই ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত বলে মনে করেছি আমি। আমার মনে হয়, তরুণরা যারা ওপেন করছে, বিশ্বকাপে ওদের সুযোগ পাওয়া উচিত। কারণ ওরা গত ১৫-১৬ ম্যাচ ধরে খেলছে। ওদের প্রস্তুতি হয়তো আমার চেয়ে ভালো থাকবে। সঙ্গে এটাও মনে করি যে ওরা হয়তো দলকে আমার চেয়েও ভালো সার্ভিস দিতে পারবে।’
ভিডিও বার্তায় এটিকে তাঁর মন থেকে আসা সিদ্ধান্ত বলেও জানিয়েছেন তামিম, ‘যাঁরা আমার কাছের, সবাই আমার ব্যাপারে একটি জিনিস জানেন যে, আমি যা-ই করি, হৃদয়ের ভেতর থেকেই করি। আমার মন বলছিল যে এটিই সঠিক সিদ্ধান্ত।’ এই বিশ্বকাপে তাঁকে পাওয়া যাচ্ছে না, কিন্তু এক বছরের মাথায় অস্ট্রেলিয়ায় আছে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপে তামিমকে পাওয়ার আশাও আগাম করে রাখলেন বিসিবি সভাপতি, ‘সামনে তো আরো অনেক খেলা আছে। সামনের বছরও বিশ্বকাপ আছে। আশা করি, ওই আসরে তামিম খেলবে।’