জাতীয় ঐক্যের সরকার নামে পরিচিত মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকার আশ্বাস দিয়েছে, বর্তমানে সেনাশাসিত দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য নৃগোষ্ঠী অন্যদের মতোই সব ধরনের নাগরিক অধিকার ভোগ করবে। অতীতে রোহিঙ্গাদের ওপর যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি হবে না।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংস হামলার চার বছর পূর্তি উপলক্ষে মঙ্গলবার দেওয়া এক বিবৃতিতে জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) এই অঙ্গীকার করেছে।

মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকার এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো রোহিঙ্গাদের অধিকার সুরক্ষার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিবৃতি দিল। এর আগে তারা গত মে ও জুন মাসে দুবার বিবৃতি দিয়েছিল। প্রথম বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলায় সব ধরনের সহযোগিতা করবে এনইউজি। দ্বিতীয় বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেওয়া, তাদের মর্যাদার সঙ্গে রাখাইনে ফেরানো, তাদের ওপর নৃশংসতার বিচারের নিশ্চয়তা দেওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে এনইউজির সঙ্গে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।

বিবৃতিতে মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকার বলেছে, চার বছর আগে রোহিঙ্গাদের ওপর নারকীয় নৃশংসতা চালানো হয়েছিল। ওই নৃশংসতার মধ্য দিয়ে তাদের বিপুলসংখ্যক প্রতিবেশী দেশে যেতে বাধ্য করার ঘটনায় এনইউজি গভীরভাবে মর্মাহত। মিয়ানমারের এই সেনাবাহিনী কয়েক দশক ধরে নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী–অধ্যুষিত এলাকায় জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ বা রাজনৈতিক বিশ্বাসের কারণে মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ চালিয়ে আসছে। এ বছরের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে মিয়ানমারের সব নাগরিক এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গণমাধ্যমের বদৌলতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতা ও সহিংসতার সাক্ষী হয়েছে।

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন এনএলডির সরকারকে উৎখাতের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে। এনএলডির বিরুদ্ধে ভোট জালিয়াতির অভিযোগ করে গত নভেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের ফল বাতিল ঘোষণা করে তারা। এরপর ওই নির্বাচনে বিজয়ী এমপিদের একাংশ গত ১৬ এপ্রিল বিকল্প সরকার হিসেবে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠন করে। নির্বাসিত এই সরকারের মূল অংশীদার সু চির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। তবে এর সঙ্গে যোগ দেন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা এবং ছোট আরও কিছু দল।

বিবৃতিতে মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকার অঙ্গীকার করেছে, ইতিহাসের নানা পর্বে রোহিঙ্গাসহ অন্য নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীগুলোর ওপর সেনাবাহিনী পরিচালিত নৃশংসতার ন্যায়বিচার নিশ্চিতের চেষ্টা চালিয়ে যাবে তারা।

রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে আদি নিবাসে ফেরাটা তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় সবার ওপরে রয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা বিশ্বাস করি, ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইন বাতিল করে একটি নতুন আইন চালু করা যায়। যেটার ভিত্তি হবে মিয়ানমারের নাগরিক কিংবা যেকোনো জায়গায় মিয়ানমারের নাগরিকের ঘরে জন্মানো কেউ নাগরিক বিবেচিত হবেন। এ ছাড়া প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়ার সময় নাগরিকত্ব যাচাইয়ের কার্ড দেওয়া বাতিলের মধ্য দিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে।’

মিয়ানমারের নির্বাসিত সরকার বলেছে, রোহিঙ্গা সংকটের মূল উৎস রাখাইনে। তাই এ সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের সুপারিশ বিবেচনায় নিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *