রাজধানীর গুলিস্তানে নূর হোসেন চত্বর (জিরো পয়েন্ট) থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পর্যন্ত অসংখ্য পোস্টার-ব্যানার ঝুলছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এগুলো টাঙিয়েছেন। কিন্তু সেগুলোর দিকে তাকালে শ্রদ্ধা নিবেদনের চেয়ে আত্মপ্রচারণার বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এমন চিত্র শুধু গুলিস্তানেই নয়, রাজধানীর সর্বত্রই। বাঙালির ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকা- নিয়েও এমন নির্লজ্জ মানসিকতার সমালোচনাও করছেন নাগরিকরা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, শোকের মাসে পোস্টারের মূল উদ্দেশ্য জাতির জনকসহ সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন। এসব পোস্টারে নিজের নাম ব্যবহার করা যেতে পারে, কিন্তু ছবি ব্যবহারের বিষয়ে দলের নিষেধ আছে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুবলীগের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সংগঠনের নামে যে কোনো ধরনের ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন প্রকাশ এবং প্রচারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের অনুমতি লাগবে। যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক এসব ক্ষেত্রে সুনিদিষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
নূর হোসেন চত্বরে একটি পোস্টার টাঙিয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ২০নং ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতারা। তাতে সংগঠনটির সভাপতি শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের ছবি বড় করে দেওয়া হয়েছে। ১৫ আগস্টের শহীদ আরজু মনির ছবি থেকেও বড় করে দেওয়া হয়েছে তারই সন্তান শেখ পরশের ছবি। ১৫ আগস্টের অন্য শহীদদের ছবিও ঠাঁই পেয়েছে ছোট ছোট করে।
রাজধানীর সর্বত্র দেখা গেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেনের পোস্টার। পোস্টারে তিনি নিজের ছবির পাশাপাশি দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীরের ছবি ব্যবহার করেছেন। তার ছবি দূর থেকে দেখা গেলেও জাতির জনক ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের দেখা যায় না বললেই চলে। পোস্টার তিনি নিজে করিয়েছেন এবং দাঁড়িয়ে থেকে পোস্টার টাঙিয়েছেন। জানতে চাইলে মিরাজ হোসেন বলেন, পোলাপাইন পোস্টার করেছে। ছবিসহ করেছে, ছবি ছাড়াও করেছে।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন মৎস্যজীবী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান হাওলাদার ও সদস্য সচিব মহিদুল মহিম। তারা শোক দিবসের পোস্টারে নিজেদের ছবির পাশাপাশি তাদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সায়ীদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আজগর লস্করের ছবিও দিয়েছেন। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তারা ছবি দিয়ে পোস্টার করতে বলেননি। ভুলবশত এটি হয়েছে। শাজাহান হাওলাদার বলেন, এই পোস্টার প্রেসে ভুলে হয়ে গেছে। সব পোস্টার নামাতে বলেছি। কাল নতুন পোস্টার লাগানো হবে।
খিলগাঁও রেলগেট ও শাহজাহানপুর (রাজারবাগ পুলিশলাইন্সসংলগ্ন) এলাকায় শোকের মাস উপলক্ষে তোরণ বানিয়েছেন ১১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা। তোরণে রয়েছে নিজেদের ছবি। ওই এলাকার তিনজন নেতার পাশাপাশি মহানগর দক্ষিণের দুই শীর্ষ নেতা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের ছবিও রয়েছে। একই অবস্থা ১৯নং ওয়ার্ডেও। ১৫ আগস্টের শহীদদের ছবি ছোট করে দিয়ে নিজের ছবি বড় করে দিয়েছেন দক্ষিণ সিটির ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হামিদুল হক শামীম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মহানগরের শীর্ষ নেতাদের ছবিও দিয়েছেন। পুরো শাহজাহানপুরজুড়ে রয়েছে এসব পোস্টার ও ব্যানার।
নিজের ছবিকে বেশি হাইলাইট করেছেন মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক শেখ আজহার। তার এই শোক দিবসের পোস্টারের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারের পোস্টারের ফারাক পাওয়া কঠিন। তার বক্তব্য জানতে চেয়ে মোবাইল ফোনে কল দিলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে মহানগর থেকে কোনো নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহম্মেদ মন্নাফী আমাদের সময়কে বলেন, মিটিং করে ফোনে একাধিকবার আমরা সতর্ক করেছি- এমনকি হুশিয়ারিও দিয়েছি। এর পরও অনেকে ছবি দিয়ে পোস্টার করেছে। এটি আমাকে ব্যথিত করেছে। এটি যারা করেছে, তাদের বঙ্গবন্ধুর প্রতি প্রেম নেই, শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নেই, দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি দায়বদ্ধতা নেই। – দৈনিক আমাদের সময়