হালের আলোচিত নায়িকা পরীমণি। মাদক মামলায় তার বর্তমান ঠিকানা কারাগার। পরীমণির বিলাসবহুল গাড়ি এবং বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় ফ্ল্যাটের মালিকানা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

গত বছরের জুনে পরীমণি আলোচনায় আসেন সাড়ে তিন কোটি টাকার ইতালিয়ান অভিজাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফিয়াট অটোমোবাইলসের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘মাসেরাতি’ গাড়ি নিয়ে। যদিও কাগজে-কলমে তিনি প্রায় কোটি টাকা দামের টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়ির মালিক। এছাড়া রাজধানীর অভিজাত এলাকা বনানী ১৯/এ সড়কের ১২ নম্বর বাড়ির পাঁচতলার যে ফ্ল্যাটে তিনি বসবাস করেন, তার দামও ১০ কোটি টাকার বেশি হবে— বিভিন্ন সূত্রে এমন তথ্য বলা হয়েছে বারবার।

অথচ, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পরীমণি যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন, সেখানে তিনি ৫০ হাজার টাকার কর পরিশোধ করেন। টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়িটির করও এখানে যুক্ত হয়েছে। রিটার্নে পরীমণি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন প্রায় সাড়ে নয় লাখ টাকা।

বোট ক্লাবকাণ্ডের পর চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি পরীমণি কীভাবে কিনলেন। কারণ, যেসব সিনেমায় তিনি কাজ করেছেন, সেসবের পারিশ্রমিক মিলিয়ে গাড়ির মূল্যের সমান হবে না। ফ্ল্যাট কেনা তো পরের কথা। প্রায় অর্ধযুগের ক্যারিয়ারে এমন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও দামি গাড়িতে চড়া চলচ্চিত্র জগতের প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় অনেক অভিনেতার পক্ষেই সম্ভব নয়

dhakapost
বনানীর আলিশান ফ্ল্যাটে থাকেন পরীমণি। কিন্তু তার জমা দেওয়া সর্বশেষ আইকর বিবরণীতে এ ফ্ল্যাটের কথা উল্লেখ নেই

এনবিআরে জমা দেওয়া ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর রিটার্নের কোথাও পরীমণির ওই ফ্ল্যাটের মালিকানার বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পরিশোধ করা করের বড় অংশই মূলত গাড়ির কর হিসেবে জমা হয়েছে। সেই অর্থে তার আয়করের অঙ্ক খুব বেশি নয়। এনবিআর-সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আরও জানা যায়, পরীমণি ২০১৪ সালের নভেম্বরে নিজের নামে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) গ্রহণ করেন। কর অঞ্চল- ১২ এর আওতায় ২০১৬ সালে তিনি প্রথম আয়কর রিটার্ন (২০১৫-১৬ অর্থবছর) জমা দেন। প্রথম বছরের রিটার্নে আয় দেখিয়েছিলেন প্রায় সাত লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় সাড়ে নয় লাখ টাকা আয় দেখান পরীমণি।

প্রথম আয়কর রিটার্নে পরীমণি টয়োটা অ্যালিয়েন- ২০১৫ মডেলের গাড়ির কথা উল্লেখ করেন। সর্বশেষ রিটার্নে ওই গাড়ি বিক্রির কথা উল্লেখ করে সাদা রঙের টয়োটা হ্যারিয়ার কেনার তথ্য দেন। যদিও ২০২০ সালের ২৪ জুন তার সাদা রঙের হ্যারিয়ার গাড়িটি দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়।

dhakapost
বনানীর বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বিশেষ মুহূর্তে পরীমণি

২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) পরীমণি যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করেন, সেখানে তিনি ৫০ হাজার টাকার কর পরিশোধ করেন। টয়োটা হ্যারিয়ার গাড়িটির করও এখানে যুক্ত রয়েছে। রিটার্নে পরীমণি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন প্রায় সাড়ে নয় লাখ টাকা

দুর্ঘটনার পরপরই সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের ‘মাসেরাতি’ কেনার কথা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানান। কিন্তু সর্বশেষ রিটার্নে বনানীর ফ্ল্যাটের মালিকানা, এমনকি মাসেরাতি গাড়ির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সম্পদের বিবরণীতে স্বর্ণালঙ্কার ও ফার্নিচারের কথা উল্লেখ আছে। আয়ের বিবরণীতে চলচ্চিত্রে অভিনয় ও মডেলিংয়ের তথ্য উল্লেখ করেন পরীমণি।

এ বিষয়ে কর অঞ্চল- ১২ এর কর কমিশনার মো. আবদুল মজিদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকা পোস্টের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু তারা কোনো বক্তব্য দিয়ে রাজি হননি। অন্যদিকে, এনবিআর পরিচালক (জনসংযোগ) সৈয়দ এ মু’মেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘এনবিআর সবসময় করদাতাদের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্তের সুরক্ষা দিয়ে থাকে। কোনো করদাতার বিষয়ে আমাদের বক্তব্য নেই। যদি কারও বিরুদ্ধে করফাঁকির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, সেক্ষেত্রে আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

dhakapost
ফেসবুকে ফিয়াট অটোমোবাইলসের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ‘মাসেরাতি’ গাড়ির ছবি দিয়ে নিজের দাবি করেন পরীমণি

২০২০ সালের ২৪ জুন তার সাদা রঙের হ্যারিয়ার গাড়িটি দুর্ঘটনায় দুমড়ে-মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনার পরপরই সাড়ে তিন কোটি টাকা মূল্যের ‘মাসেরাতি’ কেনার কথা তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানান। কিন্তু সর্বশেষ রিটার্নে বনানীর ফ্ল্যাটের মালিকানা, এমনকি মাসেরাতি গাড়ির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সম্পদের বিবরণীতে স্বর্ণালঙ্কার ও ফার্নিচারের কথা উল্লেখ আছে। আয়ের বিবরণীতে চলচ্চিত্রে অভিনয় ও মডেলিংয়ের তথ্য উল্লেখ করেন পরীমণি

এদিকে, বোট ক্লাবকাণ্ডের পর চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি পরীমণি কীভাবে কিনলেন। কারণ, যেসব সিনেমায় তিনি কাজ করেছেন, সেসবের পারিশ্রমিক মিলিয়ে গাড়ির মূল্যের সমান হবে না। ফ্ল্যাট কেনা তো পরের কথা। প্রায় অর্ধযুগের ক্যারিয়ারে এমন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও দামি গাড়িতে চড়া চলচ্চিত্র জগতের প্রতিষ্ঠিত ও জনপ্রিয় অনেক অভিনেতার পক্ষেই সম্ভব নয়।

ফ্ল্যাট ও গাড়ি নিয়ে যে প্রশ্ন ওঠে, তার জবাবে গত ৩০ জুন ফেসবুক স্ট্যাটাসে পরীমণি উল্লেখ করেন, ‘আমার মাত্র একটি হ্যারিয়ার গাড়ি, যেটি ব্যাংক লোনে চলছে। আমি একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাটে থাকি। নিজের আয়ের হিসাব আমি সরকারকে দিই। আমি নিয়মিত একজন করদাতা। আমার কোনো ১০ কোটি টাকার বাড়ি বা ৫/৪/৩ কোটি টাকার গাড়ি নেই।’

dhakapost
‘মাসেরাতি’ গাড়িতে বসে ছবিও দেন পরীমণি, কিন্তু তার আইকর বিবরণীতে এই গাড়ির কথাও উল্লেখ নেই

গত ১৩ জুন রাতে ফেসবুক পোস্টে পরীমণি অভিযোগ করেন, ৯ জুন (বুধবার) উত্তরার বোট ক্লাবে তাকে ধর্ষণ ও হত্যার চেষ্টা চালান ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদ ও তার সহযোগীরা। ওই ঘটনায় তিনি সাভার থানায় ছয়জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপরই পরীমণি ইস্যু সামনে চলে আসে।

গত ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় প্রায় চার ঘণ্টার অভিযান শেষে বনানীর বাসা থেকে পরীমণি ও তার সহযোগীদের আটক করে র‍্যাব। বাসা থেকে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। পরদিন বনানী থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা দায়ের করে র‍্যাব-১। পরে আদালতে পাঠিয়ে তাকে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। মামলাটি গোয়েন্দা পুলিশের কাছ থেকে অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) হস্তান্তর করা হয়েছে।

dhakapost
বোট ক্লাবকাণ্ডের পর চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও দামি গাড়ি পরীমণি কীভাবে কিনলেন?

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা যায়, পরীমণি গাড়িটি ব্যাংক লোন অথবা ক্যাশ টাকা দিয়ে কেনেননি। দেশের একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ওই সম্পর্কের ভিত্তিতে পরীমণি তার কাছ থেকে গাড়িটি উপহার হিসেবে পেয়েছেন।

সূত্র আরও জানায়, পরীমণির সঙ্গে সম্পর্ক থাকা ওই ব্যাংক চেয়ারম্যানের বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। তিনিও নজরদারিতে রয়েছেন। এছাড়া ওই ব্যাংকে পরীমণির বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যেগুলো ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে। -ঢাকা পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *