ইভ্যালির সদস্যপদ স্থগিত করছে ই-ক্যাব

ই-ক্যাবের চিঠিতে ই-কমার্স ব্যবসার নামে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাত, মার্চেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে ইভ্যালির বিরুদ্ধে সম্ভাবনাময় ই-কমার্সখাতে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।

গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে ইভ্যালি ডট কমের সদস্যপদ স্থগিত করার উদ্যোগ নিয়েছে ই-কমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ইন্সপেকশন রিপোর্টসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিভিন্ন ক্রেতা ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার প্রেক্ষিতে ‘সদস্যপদ কেন স্থগিত করা হবে না’ তার জবাব চেয়ে বুধবার ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন ই-ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ শাহাব উদ্দিন।

তিনি বলেন, ‘বুধবার রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠানো চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠি পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে ইভ্যালিকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। মূলত ইভ্যালির সদস্যপদ স্থগিত করার জন্য ই-ক্যাবের গঠনতন্ত্রের ৯(ডি) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শোকজ লেটার পাঠানো হয়েছে।’

চিঠিতে ই-কমার্স ব্যবসার নামে গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাত, মার্চেন্টদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিভিন্ন অনিয়ম তুলে ধরে ইভ্যালির বিরুদ্ধে সম্ভাবনাময় ই-কমার্সখাতে অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে।

ইভ্যালি ছাড়াও গ্লিটার্স আরএসডি ওয়ার্ল্ড, গ্রীন বাংলা ই-কমার্স লিমিটেড, এ্যানেক্স ওয়ার্ল্ড ওয়াইড লিমিটেড, আমার বাজার লিমিটেড, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড এ্যাগ্রো ফুড এন্ড কনজ্যুমারস লিমিটেডকে শোকজ লেটার পাঠিয়েছে ই-ক্যাব।

আরও বেশকিছু কোম্পানিকে শোকজ লেটার পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

সংগঠনটির গঠনতন্ত্রে সদস্যপদ স্থগিত বা বাতিল করার আগে ব্যাখ্যা চাওয়ার বিধান থাকায় এ চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান ই-ক্যাব কর্মকর্তারা।

সাহাব উদ্দিন জানান, ব্র্যাক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক যে ১০টি কোম্পানির সঙ্গে তাদের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের লেনদেন স্থগিত করেছে, ওই ১০ কোম্পানির মধ্যে যারা ইক্যাবের সদস্য রয়েছে, তাদের সবাইকে শোকজ লেটার পাঠানো হচ্ছে। মূলত ই-কমার্স সেক্টরের সম্ভাবনা কাজে লাগানো ও গ্রাহক আস্থা বাড়াতেই এমএলএম পদ্ধতিতে পরিচালিত কোম্পানিগুলোর সদস্যপদ স্থগিত করা হবে।

ই-ক্যাবের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘ইভ্যালিসহ বেশকিছু কোম্পানি যেভাবে নতুন গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পুরনো গ্রাহকদের পণ্য বা রিফান্ড দিচ্ছে তা কোনমতেই ই-কমার্স বিজনেস নয়।’

তিনি বলেন, ‘ইভ্যালি গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম ২১৫ কোটি টাকা নিয়ে পণ্য দেয়নি, আবার মার্চেন্টদের কাছ থেকে বাকিতে পণ্য এনেছে ১৯০ কোটি টাকার। গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পরও মার্চেন্টদের কাছে বকেয়া থাকার কথা নয়। এখন তারা গ্রাহক বা মার্চেন্ট কারও পাওনাই পরিশোধে করতে পারছে না। তাহলে এসব অর্থ গেল কোথায়?’

ইভ্যালিসহ বিভিন্ন কোম্পানির এ ধরণের কর্মকান্ডের কারণে সার্বিকভাবে ই-কমার্সখাতের উপর গ্রাহকদের আস্থা কমে গেছে। যারা নিয়ম মেনে ব্যবসা করছেন, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ই-ক্যাবের অনেক সদস্যও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছেন। তাই এখাতের ভাবমূর্তি রক্ষায় এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসারত সদস্য কোম্পানিগুলোর সদস্যপদ স্থগিত ও পরে বাতিল করা হবে।

ই-ক্যাবের সদস্য সংখ্যা প্রায় ১১০০, যার মধ্যে ১৪টি বড় কোম্পানি ই-কমার্সের নামে এমএলএম ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এর মধ্যে ইভ্যালির ব্যাংক হিসাবের তথ্য রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। আরও ১১টি কোম্পানি- আলেশা মার্ট, ধামাকা শপ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, কিউকম, দালাল প্লাস, ইঅরেঞ্জ এবং বাজাজ কালেকশন এর ব্যাংক হিসাব তলব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ইভ্যালির উপর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে গত ২২ জুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড সংবাদ প্রকাশের পর ব্র্যাক ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়াসহ বেসরকারিখাতের বিভিন্ন ব্যাংক ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, ধামাকা শপ, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, কিউকম ও ইঅরেঞ্জ এর সঙ্গে ডেবিট, ক্রেডিট ও প্রিপেইড কার্ডে লেনদেন স্থগিত করেছে।

অন্যদিকে, গিফট ভাউচারে পণ্য বিক্রির পর পাওনা টাকা না দেওয়ায় ইভ্যালির গিফট ভাউচার গ্রহণ করা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে ট্রেন্ডজ, রঙ বাংলাদেশ, আর্টিসান আউটফিটার্স, ফিট এলিগ্যান্স এবং রিও ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *