ভয়ংকর সময় পার করছে দেশের হাসপাতাল -বিশেষজ্ঞ * বেশি জোর দিতে হবে গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণে -ড. মোশতাক হোসেন * দেরিতে হাসপাতালে আনায় মৃত্যু বাড়ছে * এক মাসে সংক্রমণ বেড়েছে ১৬ শতাংশ
দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যু সংক্রমণের হার ভয়াল রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্তের হার বেড়েছে ৯ শতাংশ। মাত্র চার সপ্তাহ আগেও এই হার ছিল ১৩ শতাংশ।
বর্তমানে ৩১.৪৬ শতাংশ। সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বমুখী হার দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়বে-এমন মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের। তারা বলেন, দেরিতে হাসপাতালে আনায় করোনা রোগীর মৃত্যু বাড়ছে। শয্যার অভাবে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সব মিলে ভয়ংকর সময় পার করছে দেশের হাসপাতালগুলো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে করোনা সংক্রমণের হার চূড়ায় উঠছে। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন অবস্থা খারাপ। জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যায়ে এই ঢেউ চূড়ায় উঠবে, তারপর ধীরে ধীরে নামতে শুরু করবে। এ সময়ে চলাচল, গণজমায়েত ইত্যাদি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত শনাক্ত ৯ লাখ ৫৪ হাজার ৮৮১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ২২৯ জনের। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৪ দশমিক ১৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। প্রতি ১০ লাখ রোগীতে শনাক্ত ৪৬৪৬ দশমিক ৫১ জন, সুস্থ ৪৯৪১ দশমিক ৭৫ জন এবং মৃত্যু ৯০ দশমিক ০৫ জন। বিগত ৬ মাসের সংক্রমণের চিত্রে দেখা যায়, জানুয়ারিতে রোগী শনাক্ত হন ২১ হাজার ৬২৯ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১১ হাজার ৭৭ জন, মার্চে ৬৫ হাজার ৭৯ জন, এপ্রিলে এক লাখ তিন হাজার ৯৫৭ জন, মে মাসে ৪১ হাজার ৪০৮ জন, জুনে এক লাখ ১২ হাজার ৭১৮ জন।
এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ড. মোশতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দেশে করোনা সংক্রমণ বর্তমানে পিকে উঠতে শুরু করেছে। প্রতিটি ঢেউয়ে এটা বেড়েছে।
দ্বিতীয় ঢেউয়ের চেয়ে তৃতীয় ঢেউয়ে বৃদ্ধিটা অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, জুলাইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত এটি উঠতে পারে। তারপর ধীরে ধীরে নামতে শুরু করবে। তবে ঈদের সময় যদি চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করা হয় তাহলে সংক্রমণ আরও বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে বেশি জোর দিতে হবে গণজমায়েত নিয়ন্ত্রণে। কারণ কোরিয়ায় করোনা ভয়াবহ রূপ ধারণ করে গির্জা থেকে, ভারতে কুম্ভুমেলা থেকে।
বিগত কয়েক দিনের সংক্রমণের চিত্রে দেখা যায়, ৫ জুলাই শনাক্ত হয়েছেন ৯৯৬৪ জন, এই দিনে শনাক্তের হার ২৯ শতাংশ। ৪ জুলাই শনাক্ত হয়েছেন ৮৬৬১ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৯ শতাংশ। ৩ জুলাই শনাক্ত হয়েছেন ৬২১৪ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৮ শতাংশ। ২ জুুলাই শনাক্ত হয়েছেন ৮৪৮৩ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৮ শতাংশ। ১ জুলাই শনাক্ত হয়েছেন ৮৩০১ জন, শনাক্তের হার ছিল ২৬ শতাংশ।
৩০ জুন শনাক্ত হয়েছেন ৮৮২২ জন, ওই দিন শনাক্তের হার ছিল ২৫ শতাংশ। এর আগের দিন অর্থাৎ ২৯ জুন শনাক্ত হন ৭৬৬৬, ওই দিন শনাক্তের হার ছিল ২৪ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে শনাক্তের হার বেড়েছে ৫ শতাংশ। এর এক সপ্তাহ আগে ১৮ জুন শনাক্তের হার ছিল ১৯ শতাংশ এবং দুই সপ্তাহ আগে এই হার ছিল মাত্র ১৩ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। রোগতাত্ত্বিক ভাষায় বলা যায়, সংক্রমণ চূড়ায় উঠছে। কতটা উঠবে সেটা বলা কঠিন। তবে এটি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার জনশক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, পাশাপাশি চলমান লকডাউন কঠোরভাবে যেন পালিত হয় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া অপ্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, জুলাইয়ের ৫ তারিখ পর্যন্ত বরিশাল বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২১ হাজার ৭০; এই বিভাগের সংক্রমণের হার ১৪ শতাংশ। চট্টগ্রামে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ১৮ হাজার ৫১৯ জন ; সংক্রমণের হার ১০ শতংশ। ঢাকা বিভাগের শনাক্ত রোগী এক লাখ ৫০ হাজার ৫৫৬ জন ; সংক্রমণের হার ১৭ শতাংশ। খুলনায় শনাক্ত রোগী ৫৭ হাজার ৫২৯ জন; সংক্রমণের হার ১৯ শতাংশ।
ময়মনসিংহে শনাক্ত রোগী এক লাখ ১৬ হাজার ৬৩৫ জন; সংক্রমণের হার ১১ শতাংশ। রাজশাহীতে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগী ৬০ হাজার ৫৮৬ জন ; সংক্রমণের হার ১৩ শতাংশ। রংপুর বিভাগের শনাক্ত রোগীর ২৮ হাজার ৬১৩ জন; সংক্রমণের হার ১৮ শতাংশ। সিলেট বিভাগে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৪৭৭ জন; সংক্রমণের হার ৯ শতাংশ।
অধিদপ্তরের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেশে ৫ জুলাই পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৫ হাজার ২২৯ জনের। এর মধ্যে বিভাগভিত্তিক হিসাব হচ্ছে-বরিশালে মৃত্যু হয়েছে ৪৪৮ জনের; মৃত্যুর হার ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ। চট্টগ্রামে মৃত্যু হয়েছে ২৮৩৩ জনের; মৃত্যুর হার ১৮ দশমিক ৬০ শতাংশ। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৭৭৬৮ জনের; মৃত্যুর হার ৫১ দশমিক ০১ শতাংশ।
খুলনা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ১৪৯১ জনের; মৃত্যুর হার ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ময়মনসিংহে মৃত্যু হয়েছে ৩৪১ জনের; মৃত্যুর হার ২ দশমিক ২৪ শতাংশ। রাজশাহীতে মৃত্যু হয়েছে ১১২৮ জনের; মৃত্যুর হার ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। রংপুরে মৃত্যু হয়েছে ৬৭৩ জনের; মৃত্যুর হার ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। সিলেট বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৪৭ জনের; মৃত্যুর হার ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ। – যুগান্তর