রংপুর বিভাগে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। প্রতিদিন রোগী ভর্তি হওয়ায় চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে রংপুর করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) আর একটি শয্যাও খালি নেই। তাই ‘কোনো বেড ফাঁকা নেই’ জানিয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে রোগী ভর্তিও বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংকট দেখা দিয়েছে। করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণের মধ্যে হঠাৎ করে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দেওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এক বছর আগে রংপুর নগরীর নবনির্মিত শিশু হাসপাতালকে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোভিড স্পেশালাইজড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। এখানে ১০টি আইসিইউ শয্যা আছে, যার মধ্যে দুইটিতে ভেন্টিলেটর সুবিধা নেই। ফলে সচল আছে মাত্র আটটি শয্যা। এছাড়া কাগজ-কলমে ১০০ শয্যার কথা বলা হলেও সচল আছে ৯১টি। এগুলোতে রোগীর জন্য অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা আছে।

করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালে রংপুর ছাড়াও গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। গত ১০ দিন ধরে রংপুর অঞ্চলে করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। চার দিনে মারা গেছেন ৪৮ জন। এমন অবস্থায় প্রত্যেকটি আইসিইউ শয্যায় রোগী থাকায় ‌‘কোনো বেড ফাঁকা নেই’ জানিয়ে নোটিশ টাঙিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে ৯১টি শয্যায় করোনা রোগী চিকিৎসাধীন থাকায় নতুন করে ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে আইসিইউ শয্যা সংকটের কারণে রোগীদের কাছ থেকে বন্ড নিয়ে রাখা হচ্ছে। এতে বলা হচ্ছে, ‘আইসিইউ বা হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা পাবেন না রোগীরা’। এমন অবস্থায় ভর্তি রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। অন্যদিকে মুমূর্ষু অনেক রোগী ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।

সোমবার (৫ জুলাই) রংপুর করোনা ডেডিকেটেড আইসোলেশন হাসপাতালে সরেজমিন দেখা যায়, হাসপাতালের সামনে রোগীর ভিড়। অনেকেই এসে ভর্তি হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।

নগরীর সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা মো. আরিফ জানান, তার চাচা গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ভর্তির সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ লিখিত অঙ্গীকারনামা নিয়েছে। এতে লেখা রয়েছে, আইসিইউ ও হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা পাবেন না রোগীরা। এজন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোনও দায় নেই। এর দায় রোগী ও তার স্বজনদের।

তিনি আরও বলেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা থাকবে না কেন? হাসপাতালে ওষুধও নেই বললেই চলে। বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে আনতে হয়।

কুড়িগ্রাম থেকে আসা মাহমুদুল হক জানান, তার মামা-মামি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল থেকে কোনও ওষুধ দেওয়া হয় না। স্বজনদের হাতে প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে কিনে আনতে বলা হয়। ওষুধ এনে গেটে দিতে হয়। ওষুধ রোগীদের কাছে পৌঁছালো কি-না তাও জানা যায় না।

করোনার উপসর্গ দেখা দেয়ায় মাকে নিয়ে কয়েক দিন আগে এই হাসপাতালে আসেন সাহেরা বানু। তিনি বলেন, তার মায়ের করোনার উপসর্গ দেখা দিলে নমুনা পরীক্ষা করতে বলা হয়। কিন্তু রিপোর্ট না আসায় হাসপাতালে ভর্তি নেয় না। এরই মধ্যে তিন-চার দিনে তার মায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। পরে জরুরি ভিত্তিতে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।

রংপুর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. কামরুজ্জামান বলেন, রংপুর পিসিআর ল্যাবে প্রতিদিন ১৮৮টি নমুনা পরীক্ষার সক্ষমতা আছে। এর মধ্যে রংপুর সিটি করপোরেশন ও জেলাসহ কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও লালমনিরহাটের নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। সেজন্য পিসিআর ল্যাব থেকে নমুনা পাঠানোর বিষয়টি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন থেকে দিনে ২৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যা খুবই কম।

তিনি আরও বলেন, দিনে গড়ে দুই শতাধিক নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রতিটি জেলায় সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় একটি পিসিআর ল্যাব দিয়ে চার জেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মানুষের জন্য নমুনা পরীক্ষা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সে কারণে আরও একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করা দরকার।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. রেজাউল ইসলাম বলেন, আপাতত হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা নেই। এজন্য নোটিশ টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। শয্যা খালি না থাকায় রোগী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে হাসপাতালে নতুন একটি করোনা ইউনিট শিগগিরই চালু হবে। –পূর্ব পশ্চিম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *