ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস-জোয়ারের পানিতে সুন্দরবনে বন্য প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত ৮টা পর্যন্ত তিনটি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে লোকালয়সংলগ্ন বলেশ্বর নদ থেকে উদ্ধার হওয়া একটি হরিণের পেটে বাচ্চা ছিল।

জলোচ্ছ্বাস ও পূর্ণিমার অতিরিক্ত জোয়ারে হরিণ ছাড়াও সুন্দরবনে অন্য আরও বন্য প্রাণী মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রথম আলো

বুধবার বিকেলে সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বলেশ্বর নদে জোয়ারের পানিতে ভেসে এসেছে একটি মৃত হরিণ। স্থানীয় রাজেশ্বর গ্রামের জেলেরা হরিণটি নদীতে ভাসতে দেখে উদ্ধার করে বেড়িবাঁধের ওপর তোলেন। এর আগে বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে কোস্টগার্ড অফিসের সামনে ভেসে আসে একটি মৃত হরিণ। বনের কচিখালী অভয়ারণ্য এলাকা থেকে বিকেলে আরও একটি মৃত হরিণ উদ্ধার করে বন বিভাগ।

বন বিভাগের ধারণা, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের কারণে জোয়ারের পানিতে ডুবেই হরিণগুলো মারা গেছে। পরে জোয়ারের পানিতে ভেসে এগুলো আসে।

শরণখোলার রায়েন্দা ইউনিয়নের রাজেশ্বর গ্রামের জেলে ফোরকান মিয়া বলেন, বেলা তিনটার দিকে তিনিসহ কয়েকজন জেলে বলেশ্বর নদে চিংড়ি পোনা ধরছিলেন। এ সময় তাঁদের পাশ থেকে মৃত হরিণটি ভেসে যাচ্ছিল। তখন তাঁরা এটিকে উদ্ধার করে তীরের বেড়িবাঁধের ওপর রাখেন। পরে স্থানীয় লোকজন বন বিভাগকে জানান।

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, দেখে মনে হচ্ছে হরিণটি বেশি আগে মারা যায়নি। পানিতে ডুবে এর মৃত্যু হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, স্বাভাবিকের চেয়ে জোয়ারের ৭-৮ ফুট বেশি পানি হয়েছে। এই পানিতে বনের প্রায় সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত বছরের আম্পানের চেয়েও এবার জোয়ারে সুন্দরবনের এক থেকে দেড় ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাস হয়েছে।

উদ্ধার হওয়া তিনটি হরিণই নারী। এদের মধ্যে বলেশ্বর নদ থেকে উদ্ধার হরিণটির পেটে বাচ্চা রয়েছে। এই হরিণকে বুধবার সন্ধ্যায় শরণখোলা রেঞ্জ অফিস চত্বরে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছে।

এসিএফ জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের জলোচ্ছ্বাসে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী সুন্দরবনের দুবলা, আলোরকোল, নারকেলবাড়িয়া, টিয়ারচর, শ্যালার চর, কটকা, কচিখালী, সুপতিসহ এলাকার বনভূমি প্লাবিত হয়। ৫-৭ ফুট উচ্চতায় পানির ঢেউ বনের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

সুন্দরবনের হরিণ সাধারণভাবেই একটু চঞ্চল প্রকৃতির হয়। এরা সাঁতার দিয়ে বড় নদীও পার হয়ে যেতে পারে। বনের মাঝে এটি হরিণের স্বাভাবিক বিষয়। তবে উঁচু জোয়ার ও বাতাসের মাঝে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে ছোটার সময় পানির তোড়ে হয়তো হরিণগুলো ভেসে গিয়ে থাকতে পারে। নদীতে পড়ে গিয়ে স্রোতের কারণে আর উঠতে না পারায় হয়তো মৃত্যু হয়েছে। পানির কারণে আরও বন্য প্রাণী মারা যেতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বন অফিসের বনরক্ষীদের খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *