ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরিফুর রহমান। কলা অনুষদের একটি বিভাগ থেকে ২০১৬ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। এর পর থেকেই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু গত বছর বিশ্বজুড়ে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে দেশে লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বন্ধ হয়ে যায় সরকারি-বেসরকারি বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ প্রক্রিয়া। এতে কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের এ উচ্চশিক্ষিত যুবক।
শুধু আরিফুর নন, করোনার প্রভাবে বেকারত্বের এমন হতাশা নিয়ে দিন পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তীর্ণ হাজারো যুবক। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) দেয়া তথ্যমতে, দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রতি বছর সাড়ে তিন লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। করোনার কারণে গত বছর এ সংখ্যা কিছুটা কমলেও তা লাখের ওপরে ছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েক বছর ধরেই দেশে স্নাতকোত্তীর্ণ বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলছে। করোনাকালে উচ্চশিক্ষিত যুবকদের বেকারত্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করেছে।
স্নাতক ডিগ্রিধারী আরিফুর রহমান বলেন, ‘গ্র্যাজুয়েশনের পর চাকরির প্রস্তুতির জন্য দু-তিন বছর নিবিড় পড়ালেখার পর যখনই নিয়োগ পরীক্ষায় ভালো করা শুরু করলাম, তখনই করোনা এল। এখন নিয়োগ পরীক্ষাগুলো হচ্ছে না। আবার সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমাও কমে আসছে। তাই এ নিয়ে বেশ চাপে রয়েছি।’
দেশে স্নাতক বেকার বৃদ্ধির হার উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অনেক গবেষণায়ও। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, দেশে ২০১৫ সালে স্নাতক বেকারের হার ছিল ৩২ শতাংশ। ২০১৬ সালে এ হার বেড়ে ৩৯ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৪১ শতাংশ এবং ২০১৮ সালে ৪৩ শতাংশে পৌঁছেয়। ২০১৯ সালে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৭ শতাংশে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, করোনায় শিক্ষাবর্ষের মতো নিয়োগ পরীক্ষায়ও বড় জট তৈরি হয়েছে। আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষা নেয়াও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে কর্মসংস্থান না হওয়ায় চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ বাড়ছে। বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। কেননা চাকরিপ্রত্যাশী বেকার স্নাতকের সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে।
করোনার কারণে বিসিএস ও ব্যাংকসহ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ পরীক্ষা আটকে রয়েছে। সংকটে থাকায় নিয়োগ বন্ধ রেখেছে বেশির ভাগ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সরকারি চাকরির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া স্নাতক ডিগ্রিধারীদের একটি বড় অংশেরই মূল লক্ষ্য থাকে বিসিএস। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলে গত ৩১ মার্চ পিএসসির অধীন সব পরীক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। প্রায় দুই মাস ধরে স্থবির প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমও। ২৩ মে থেকে ৪২তম (বিশেষ) বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল পিএসসি। কিন্তু লকডাউনের কারণে তা স্থগিত করতে হয়। ৩৮তম বিসিএসের নন-ক্যাডার ফলাফল আটকে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলাফলের আশায় বসে আছেন প্রার্থীরা। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোর বড় বড় নিয়োগ পরীক্ষা স্থবির হয়ে রয়েছে।
এদিকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্নাতক বেকারত্বের হারের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থান বাংলাদেশের। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) তথ্যমতে, এ অঞ্চলের মধ্যে স্নাতক বেকারের হার সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে। দেশটিতে গ্র্যাজুয়েশনের পরও বেকার থাকছেন ৬৫ শতাংশ যুবক। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশে এ হার ৪৭ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে স্নাতক বেকারের হার ৩৩ শতাংশ। এছাড়া স্নাতক বেকারত্বের এ হার পাকিস্তানে ২৮ শতাংশ, নেপালে ২০ শতাংশ ও শ্রীলংকায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। – বণিক বার্তা