করোনা মহামারির মধ্যেই আবাসিক ও বাণিজ্যিক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট (১ হাজার লিটার) পানির দাম ৫ শতাংশ হারে বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। সোমবার ওয়াসার বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে।
বোর্ড সভায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে অনলাইনে অংশ নেন সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিম এ খান। ওয়াসার বোর্ড সূত্র বলছে, পানির দাম বাড়াতে শুরু থেকেই তাকসিম সবচেয়ে তৎপর ছিলেন। ওয়াসায় যেকোনো সিদ্ধান্তে তাঁর অবস্থানই প্রাধান্য পায়।
তাকসিম এ খান গত মাস এপ্রিলে তিন মাসের ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে থেকে তিনি ওয়াসার নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে ফোন ও অনলাইনে তদারকি করছেন।
সূত্র জানিয়েছে, নতুন দর অনুযায়ী আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম দাঁড়াবে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। বর্তমানে ১ হাজার লিটার পানির দাম ১৪ টাকা ৪৬ পয়সা। নতুন দাম কার্যকর হলে বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম দিতে হবে ৪২ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওয়াসার বোর্ডের একজন সদস্য গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে অনেক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সংকটে পড়েছেন। অনেকে চাকরিহারা হয়েছেন। নগরে দারিদ্র্য বেড়েছে। সার্বিক বিবেচনায় এখনই দাম বাড়ানো ঠিক হবে না বলে তিন থেকে চারজন সদস্য সভায় মত দিয়েছিলেন। কিন্তু আইন অনুযায়ী প্রতিবছর পানির দাম বাড়ানো যায় এবং দাম না বাড়ালে ভর্তুকি বাড়াতে হবে—এসব যুক্তিতে মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়। উল্লেখ্য, ওয়াসার বোর্ড সভার সদস্য ১৩ জন।

পানির দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব গত মার্চেই দিয়েছিলেন ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান। তাঁর প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে কার্যকর করার জন্য ওয়াসার বোর্ড সভায় অনুমোদনের প্রয়োজন ছিল। ওই মাসে অনুষ্ঠিত ওয়াসার ২৭৮তম বোর্ড সভায় পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তখন সমালোচনার মুখে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে ঢাকা ওয়াসা।

করোনা মহামারির শুরুর দিকে গত বছরের এপ্রিলেও পানির দাম বাড়িয়ে ছিল ঢাকা ওয়াসা। তখন আবাসিকে প্রতি ইউনিটের দাম বেড়েছিল ২ টাকা ৯০ পয়সা। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৩ বছরে এ নিয়ে ১৪ বার পানির দাম বাড়ানো হলো। যদিও ঢাকা ওয়াসার পানির মান নিয়ে মানুষের অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
২০০৯ সালে প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়ার পর আর পদ ছাড়তে হয়নি তাকসিম এ খানকে। নাগরিক সেবার মান নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও নানা বিতর্কের মুখে পড়লেও ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে বারবার পুনর্নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। ষষ্ঠবারের মতো তাকসিম এ খানকে ওয়াসার এমডি হিসেবে নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয় গত ১ অক্টোবর। প্রতিবারই তাঁর নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে।

দাম বাড়ানোর বিষয়ে ওয়াসা বলছে, পানি উৎপাদন ব্যয় ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে অনেক ব্যবধান। বর্তমানে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির উৎপাদনে প্রায় ২৫ টাকা ব্যয় হচ্ছে। আর তা বিক্রি করতে হচ্ছে ১৪ টাকা ৪৬ পয়সায়। ওয়াসার আইন ১৯৯৬–এর ২২ (২) ধারা অনুযায়ী সংস্থাটির বোর্ড ৫ শতাংশ হারে পানির দাম বাড়াতে পারে।
ঢাকা ওয়াসা বোর্ড চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা গত রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গত মার্চ মাসে অনুষ্ঠিত সভায় করোনা মহামারির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পানির দাম বাড়ানো হয়নি। এখনো করোনার প্রকোপ চলছে, এরপরও দাম বাড়ানো হলো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মার্চ মাসে ভীতিকর পরিস্থিতি ছিল। এখন ভীতি থেকে মানুষ বেরিয়ে আসছে।
গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এটা দাম বাড়ানো নয়, আমরা দাম সমন্বয় বলি। প্রতিবছর পানি উৎপাদন করতে গিয়ে আমাদের খরচ বেড়ে যায়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *