ভয়াবহ যুদ্ধের পর অবশেষে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছে মিসর। তবে ফিলিস্তিনের ভূখণ্ড থেকে হামাসের ব্যাপক হামলার মুখে যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দিয়েছেন ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। বৃহস্পতিবার (২০ মে) মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠকের পর ইসরাইলি সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয়।
অপর দিকে যুদ্ধবিরতির খবরে ফিলিস্তিনে চলছে উৎসবের আমেজ। গাজা উপত্যকায় ইসলামপন্থী আন্দোলনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা খলিল আল-হাইয়া এই যুদ্ধ বিরতিকে বিজয় বলে ঘোষণা করেছেন। তিনি ইসরাইলের হামলায় ধ্বংস হওয়া বাড়িগুলো পুনরায় তৈরি করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
টানা ১১ দিনের সংঘর্ষ শেষে গাজায় যুদ্ধবিরতির জয়-পরাজয়ের হিসাব কষতে শুরু করেছে হামাস ও ইসরায়েল। আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় এ যুদ্ধবিরতিকে নিজেদের বিজয় বলে দাবি করেছেন হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া। তবে যুদ্ধবিরতির কোনো নিশ্চয়তাই পাচ্ছে না ফিলিস্তিনিরা। সব সময় শঙ্কার মধ্যে দিন কাটছে তাদের।
এদিকে এই যুদ্ধ বিরতিকে অনেকে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। তারা বলছেন, এটা ইসরায়েলের সামরিক কৌশল হতে পারে। তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের ইন্টারসেপ্টরের মজুদ ফুরিয়ে আসায় ইসরায়েল এমন প্রস্তাব দিয়েছে।
১১ দিনের যুদ্ধে হামাস ৪ হাজারের বেশি রকেট ছুড়েছে ইসরায়েলে। যা ইসরায়েলকেও অবাক করে দিয়েছে। তারা হয়তো বুঝতে পারেনি হামাসের কাছে এত পরিমাণ রকেট মজুদ রয়েছে। এ বিষয়ে ডিফেন্স রিসার্চ ফোরাম নামে একটি ফেসবুক পেজে একটি বিশ্লেষণধর্মী লেখা প্রকাশিত হয়েছে। সেটা পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
খুব বাজে কথা বলব। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি অগ্রিম।
যুদ্ধবিরতি হওয়ায় গাজায় মানুষ আনন্দ করছে। যুদ্ধ চাই না। আগেই বলে রাখি। তবে এখানে আমার মনে খটকা লাগছে এক জায়গায়।
আরব ইসরায়েল যুদ্ধের ইতিহাস মনে আছে? যখনি ইসরায়েল দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তখনি আমেরিকা যুদ্ধবিরতির ডাক দিয়ে শেষ হয়ে আসা অস্ত্রভাণ্ডার আবার পরিপূর্ণ করার সুযোগ করে দিয়েছিল।
যাই হোক, মূল কথা হল হামাস এ পর্যন্ত ইসরায়েলে চার হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে। ইসরায়েল হামাসের অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস করতে সারা বছর টুকটাক আক্রমণ করে থাকে। তারা হয়ত ভেবেছিল হামাসের কাছে এত বেশি রকেট থাকা সম্ভব না। আর এ কারণেই চার হাজার রকেট নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর ইসরায়েল নমনীয় হয়েছে। ফিলিস্তিনিরা এটাকে আনন্দ উৎসব বলছে।
আমার কাছে যে প্রশ্নটি এসেছে সেটি হল, এটা কী হতে পারে যে আইরন ডোমের ক্ষেপণাস্ত্র শেষ হয়ে এসেছিল? তাদের হাতে পর্যাপ্ত মিসাইল ছিল না রকেট ঠেকানোর জন্য। আর উৎপাদন করেও হয়ত সামাল দিতে পারছিল না। যার ফলে তাদের কাছে প্রয়োজন ছিল সময়। আর এই সময়ের জন্যই তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। মানবতার কারণে তারা এমন করেছে, এটা বিশ্বাস করি না।
হয়ত হামাস আরও দুই হাজার রকেট নিক্ষেপ করলে আইরন ডোমের সব মজুদ শেষ হয়ে যেত। তখন আকাশে রকেট ধ্বংস করা সম্ভব হত না। প্রচুর হতাহত হত তারা।
এটা ভেবে দেখা যেতে পারে।
যদিও যুদ্ধ চলুক সেটা চাই না। ফিলিস্তিনদের অধিকার ফেরানোর শর্ত ছাড়াই এত মানুষের মৃত্যু সত্ত্বেও এভাবে তড়িঘড়ি করে ইসরয়ায়েলের যুদ্ধবিরতি মনের ভেতর কিছুটা সন্দেহ উদ্রেক করে আর কি।