গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এ বছর নদীতে ইলিশ ধরা পড়ছে একেবারে কম। আগের মতো ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন জেলে থেকে শুরু করে ইলিশ মোকাম হিসেবে পরিচিত নগরীর পোর্ট রোডের আড়তদাররা। কম ইলিশে দামও অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় তা শুধু বিত্তবানরাই কিনছেন। হঠাৎ করে ইলিশের এমন ‘হারিয়ে যাওয়ায়’ বিস্মিত জেলেরা! এদিকে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন, ইলিশের এই ‘হারিয়ে যাওয়ার’ পেছনে কারণ মূলত আবহাওয়া। আবহাওয়ার পরিবর্তন হলেই মিলবে ইলিশ।

নদীতে ইলিশ শিকারে থাকা একাধিক জেলে বলেন, নিষেধাজ্ঞা শেষে বিশেষ করে ইলিশের অভয়াশ্রমে জাল ফেললে তেমন ইলিশ মিলছে না। গত বছর জালে যে পরিমাণ ইলিশ উঠেছে, এ বছর তার অর্ধেকও উঠছে না। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর ১৬ দিন কেটে গেলেও এ অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা। তবে দুই একদিন ব্যতিক্রম ছিল। বিশেষ করে ৯ ও ১০ মে মোটামুটি ইলিশ পেয়েছেন জেলেরা। এরপর কিছুটা নড়েচড়ে বসেছিলেন জেলে ও আড়তদাররা। কিন্তু ১১ মে থেকে ১৬ মে পর্যন্ত জেলেদের জালে তেমন ইলিশ ওঠেনি।

তবে কী কারণে জালে ইলিশ উঠছে না তার তেমন কোনও ব্যাখ্যা জানা নেই জেলেদের কাছে। তাদের একটি কথা, বৃষ্টি হলে জালে ইলিশ উঠতো। আর এখন বৃষ্টির অপেক্ষার প্রহর গুনছেন তারা।

পোর্ট রোডের আড়তদার জহির সিকদার বলেন, নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর আমাদের ধারণা ছিল কিছু না হোক গত বছরের মতো ইলিশ পড়বে। কিন্তু ধারণার সঙ্গে বাস্তবতার কোনও মিল নেই। এখন আড়তগুলোর ইলিশ সংকটে হাহাকার করছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আমাদের ব্যবসায়ী হতাশা। কারণ, সারা বছর ইলিশ পাওয়া যায় না। যে সময় ইলিশ পাওয়ার কথা সে সময় যদি না পাওয়া যায় তাহলে আমাদের অবস্থা কী হয় বুঝতে পারছেন। ব্যবসায়িকভাবে আমরা যে কি পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি তা বোঝাতে পারবো না।

গড়ে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ মণ করে ইলিশ আসছে মোকামে। তবে এরমধ্যে ৯ ও ১০ মে ইলিশ এসেছে ২শ’ থেকে আড়াইশ’ মণ করে। এ ধারা থাকলেও কোনও সমস্যা ছিল না। আমরাও চিন্তিত হয়ে পড়েছি।

তিনি আরও বলেন, এখন যা ইলিশ ধরা পড়ছে তা স্থানীয় নদী থেকে শিকার করা। ছোট ছোট ট্রলার ও নৌকার জেলেরা এ মাছ শিকার করছেন। তাদের মাধ্যমে গড়ে প্রতিদিন মাত্র ৫০ থেকে ৬০ মণ ইলিশ আসছে আড়তে। তা না হলে একেবারেই ইলিশশূন্য থাকতে হতো।

চৌমাথা বাজারের খুচরা বিক্রেতা গাফফার সিকদার বলেন, ইলিশ কম থাকায় স্থানীয় বাজারগুলোতে তেমন একটা ইলিশ দেখা যায় না। একটি বাজারে যেখানে ৫ থেকে ৭ জন খুচরা বিক্রেতারা ইলিশ বিক্রি করতো, সেখানে মাত্র একজন ইলিশ বিক্রি করছেন। আর দাম বেশি হওয়ায় তার কাছে ক্রেতাও কম। বর্তমানে খুচরা বাজারে এক কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৭শ’ টাকা দামে। ৫শ’ গ্রাম ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা কেজি দরে। ওই ইলিশ শুধু টাকাওয়ালারাই কিনছেন বলে জানান তিনি।

এ ব্যাপারে মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস জানান, এখন যে পরিমাণ ইলিশ মিলছে গত বছর প্রতিদিন এর চেয়ে ডাবলেরও বেশি ইলিশ এসেছে। তবে এ বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পানি বৃদ্ধি না পাওয়ায় নদীতে ইলিশ মিলছে না। বর্তমানে ইলিশ সমুদ্রে আশ্রয় নিয়েছে। বর্ষা শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ওই ইলিশ নদীমুখী হবে। তখন জালে ইলিশ উঠবে বলে আশা করছেন এ কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *