দেশে নিষিদ্ধ অ্যাপ ‘স্ট্রিমকার’ পরিচালনায় জড়িত অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ বলেছে, এই লাইভ ভিডিও ও চ্যাট আপে সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে আড্ডার লোভ দেখিয়ে লোকজনকে টেনে নিয়ে অনলাইন জুয়ার ফাঁদে ফেলা হতো। এর মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে বছরে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে এ চক্র।

অনলাইনে এ কার্যক্রম পরিচালনায় বিন্স ও জেমস নামের দুটি ‘ডিজিটাল মুদ্রা’ ব্যবহার করা হতো।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন জমির উদ্দিন, কামরুল হোসেন ওরফে রুবেল, মনজুরুল ইসলাম হৃদয় ও অনামিকা সরকার। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার বনশ্রী, সাভার এবং নোয়াখালীর সুধারামপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) জানিয়েছে।

আজ বুধবার রাজধানীর বারিধারায় এটিইউর মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান এটিইউর পুলিশ সুপার (মিডিয়া অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস) মোহাম্মদ আসলাম খান। তিনি বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা স্ট্রিমকার ব্যবহার করে মুদ্রা পাচার করে আসছিলেন। অ্যাপটিতে গ্রুপ চ্যাট, লিপ সিং, ড্যান্স, গল্প ও কবিতা আবৃত্তিসহ নানা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে সেখানে জুয়া খেলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।

পুলিশ সুপার আসলাম খান বলেন, বাংলাদেশে স্ট্রিমকার অ্যাপটি নিষিদ্ধ। ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) ব্যবহার করে এ দেশ থেকে অ্যাপটিতে যুক্ত হতেন ব্যবহারকারীরা। এ অ্যাপে দুই ধরনের আইডি রয়েছে। ইউজার বা ব্যবহারকারীর আইডি ও হোস্ট আইডি। হোস্ট আইডি ব্যবহার করেন তরুণীরা। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে তাঁদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার প্রলোভনে অ্যাপে ঢোকেন সাধারণ ব্যবহারকারীরা। তার জন্য বিন্স নামে ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কিনতে হয় তাঁদের।

সেই মুদ্রা উপহার হিসেবে দিয়ে আড্ডায় যুক্ত হতে পারেন ব্যবহারকারীরা। এই বিন্স হোস্টদের কাছে গেলে তা জেমস নামের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা হয়ে যায়। সঞ্চিত জেমসের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে হোস্টদের আয়। এক লাখ বিন্স কিনতে ব্যবহারকারীদের দিতে হয় ১ হাজার ৮০ টাকা। অপরদিকে হোস্টদের ১ লাখ জেমসের দাম ধরা হয় ৬০০ টাকা। তবে হোস্টদের মাস শেষে বেতন পাওয়ার জন্য শুধু সঞ্চিত জেমসই যথেষ্ট নয়। তাঁদের প্রতিদিন ও প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময় লাইভ স্ট্রিমিংয়ে থাকতে হয়।

বিন্স নামের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রাটি সাধারণ ব্যবহারকারীরা কিছু এজেন্সির কাছ থেকে কিনে নেন। ওই এজেন্সিগুলো তা কিনে আনে বিদেশি এই অ্যাপের অ্যাডমিনদের কাছ থেকে। বিন্স দিয়ে ব্যবহারকারীরা লাইভ আড্ডায় যুক্ত হলে তাঁদের নানা কৌশলে জুয়া খেলায় টেনে নেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশীয় বিন্স এজেন্সিগুলো সাব-এজেন্সি নিয়োগ করে আসছিল। তারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে লোভনীয় অফার দিয়ে লাইভ স্ট্রিমিংয়ে যুক্ত করে ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করে থাকে। দেশে বিন্স এজেন্সি পরিচালনায় যুক্তরা নানা মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে।

এটিইউর সাইবার অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের পুলিশ সুপার মো. মাহিদুজ্জামান বলেন, স্ট্রিমকারের অন্তত ১১টি এজেন্ট রয়েছে বাংলাদেশে। তারাই ডিজিটাল বা ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কেনাবেচা করে। লক্ষাধিক বাংলাদেশি ব্যবহারকারী অনলাইন ব্যাংকিং, হুন্ডি, হাওয়ালা, ক্রিপটোকারেন্সি ও বিদেশি একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ডিজিটাল মুদ্রা কিনছে। এর মাধ্যমে প্রতি মাসে শতকোটির বেশি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে।

এটিইউ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার অনামিকা সরকার রাজধানীর বনশ্রীর একটি বাসা থেকে এ অনলাইন জুয়া পরিচালনা করে আসছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি নাটোরে। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে পড়ালেখা করেছেন। সেখানে স্ট্রিমকারে জুয়া পরিচালনার অন্যতম হোতা রোকন উদ্দিন সিদ্দিকীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। দেড় বছরে তাঁদের নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন অনলাইন ব্যাংকিং ও ব্যাংক হিসাবে কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। পলাতক রোকনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

প্রতারক চক্রের গ্রেপ্তার চার সদস্য এবং তাদের পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে সাভার থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। – প্রথম আলো

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *