শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ার কারণে উন্নততর চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সিঙ্গাপুরে নিতে চাইছে তাঁর পরিবার। এ বিষয়ে আগ্রহের কথা জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খানকে সোমবার রাতে টেলিফোন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা মন্ত্রীকে অবহিত করেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে জানান, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের নয়। বিষয়টি আদালত দেখবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে খালেদা জিয়ার ভাই শামীম এস্কান্দার গত রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না।’ খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার ব্যাপারে এখনো লিখিতভাবে আবেদন করা হয়নি।’

এর আগে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নেওয়া হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনকে সোমবার বিকেল ৪টার দিকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয় বলে জানিয়েছেন তাঁর মেডিক্যাল টিমের সদস্য ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তবে গত রবিবারই তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।

ডা. জাহিদ হোসেন গতকাল বিকালে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আজ (গতকাল সোমবার) সকালের দিকে খালেদা জিয়া কিছুটা শ্বাসকষ্ট অনুভব করছিলেন। পরে চিকিৎসকরা বিকেল ৪টায় তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন। সেখানে তিনি স্বাভাবিকভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছেন। তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।’

এভারকেয়ার হাসপাতালের সিনিয়র ম্যানেজার ডা. আরিফুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার গত রবিবার থেকে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। গতকাল সোমবার শ্বাসকষ্টের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তাঁকে পর্যবেক্ষণের জন্য সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানে তাঁর পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বেগম জিয়া আগে করোনা পজিটিভ ছিলেন। এখন তিনি নেগেটিভ হয়েছেন। কিন্তু ফুসফুস বা হৃদযন্ত্রে কোনো সমস্যা তৈরি হয়ে থাকতে পারে। পরীক্ষার ফল পর্যালোচনা করে বিস্তারিত বলা যাবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিক্যাল টিমের পক্ষ থেকে গতকাল রাত পৌনে ৮টায় তাঁর সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘কয়েক মিনিট আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করেছি। উনার সঙ্গে কথা হয়েছে। কেমন আছেন খোঁজ নিয়েছি।’

শ্বাসকষ্টের কারণ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ বলেন, ‘যেকোনো সময়ে যেকোনো পরিস্থিতিতে একজনের শ্বাসকষ্ট হতে পারে। উনার পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এবং সেগুলো এখানকার চিকিৎসকরা কালেকটিভলি করছেন। সেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সঙ্গে সঙ্গে দেশ-বিদেশে কনসালট্যান্টের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।’

বিএনপি চেয়ারপারসন এভারকেয়ার হাসপাতালে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন। গত ২৭ এপ্রিল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এই হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করা হয়। পরদিনই তাঁর চিকিত্সায় ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর গত ১১ এপ্রিল থেকে গুলশানের বাসায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিত্সক টিমের তত্ত্বাবধানে চিকিত্সা নিচ্ছিলেন তিনি। ১৪ দিন পর আবার পরীক্ষা করা হলে তখনো তাঁর করোনাভাইরাস রিপোর্ট ‘পজিটিভ’ আসে। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২৭ এপ্রিল রাতে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। টেস্টের সিটি স্ক্যান ও কয়েকটি পরীক্ষার পর ওই রাতেই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রসঙ্গত, ৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত। দণ্ড নিয়ে তিন বছর আগে তাঁকে কারাগারে যেতে হয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর পরিবারের আবেদনে সরকার গত বছরের ২৫ মার্চ ‘মানবিক বিবেচনায়’ শর্তসাপেক্ষে তাঁকে সাময়িক মুক্তি দেয়। তখন থেকে তিনি গুলশানে ভাড়া বাসা ফিরোজায় থেকে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে বাইরের কারো যোগাযোগও সীমিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *