বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে পরিস্থিতির বেশ অবনতি ঘটেছে। সংক্রমণ গত কয়েকমাসের তুলনায় ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ার প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। একইসঙ্গে হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে অক্সিজেনের চাহিদা। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না ঘটলে দেশ ভয়াবহ অক্সিজেন সংকটের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এখনই প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সুবিধা দিতে না পারায় অনেক মুমূর্ষু রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন।
এদিকে, ভারতে কোভিড পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশটিতে প্রতিদিন রেকর্ড সংখ্যক মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। অক্সিজেন সংকটের কারণে ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। দেশটির হাসপাতালগুলোতে অতি প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের সংকট দেখা দিয়েছে অধিক রোগীর কারণে। এই প্রেক্ষাপটে সতর্কতা হিসেবে বাংলাদেশ অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন সোমবার (২৬ এপ্রিল) বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে। প্যানিক হওয়ার মতো বিষয় নেই। তবে পরিস্থিতি জরুরি হলে অক্সিজেন সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন অন্যদেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করছি, কিভাবে দ্রুততম সময়ে অক্সিজেন আনা যায়।’ তরল অক্সিজেন কনটেইনারে করে আনা যায় এবং সাধারণত এটি জাহাজে আসে তবে জরুরি অবস্থায় প্লেনে করে আনা সম্ভব। আরেকটি হচ্ছে ছোট ছোট প্ল্যান্ট আছে যেগুলি ১২ থেকে ১৪ সপ্তাহের মধ্যে স্থাপন করা হয়ে থাকে। তবে সেটি সময়সাপেক্ষ বিষয় বলে তিনি জানান।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমাদের অক্সিজেনের চাহিদা আছে প্রায় ১৫৫ টন এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন কিছুটা কম। অক্সিজেন মেডিক্যাল ও শিল্পে ব্যবহার হয়। এক্ষেত্রে শিল্পে ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর করোনা সংক্রমণ অনেক বেশি মাত্রায় বেড়েছে। এছাড়া করোনার নতুন ধরন (স্ট্রেইন) অতি মাত্রায় সংক্রামক। ফলে রোগীদের ফুসফুস মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকেরই অল্প সময়ের মধ্যে তীব্র শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ফলে বেশি সংখ্যক রোগীকে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। আর গুরুতর অসুস্থদের জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা জরুরি। বেশিরভাগ রোগীই তীব্র শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছেন। তাদের হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার মাধ্যমে অক্সিজেন দিতে হচ্ছে। ঢাকা পোষ্ট
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় করোনা রোগীদের চিকিৎসায় দেশের হাসপাতালগুলোতে এখন দৈনিক অক্সিজেনের চাহিদা দাঁড়িয়েছে ১৮০ টন। এর মধ্যে বহুজাতিক অক্সিজেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘লিন্ডে বাংলাদেশ’ উৎপাদন ও সরবরাহ করছে ৯০ টন। স্পেক্ট্রা নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক গড়ে সরবরাহ করছে ২৪ দশমিক ৫ মেট্রিক টন। তারপরও ঘাটতি থাকছে দৈনিক প্রায় ৬৫ টন।
তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং অক্সিজেন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশে এখনো অক্সিজেন নির্ভর রোগীর সংখ্যা কম থাকায় অক্সিজেনের ঘাটতি হবে না বলেই তারা আশা করছেন। তবে কোন কারণে অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে গেলে সংকটের আশঙ্কা আছে বলে মনে করেন তারা। বিবিসি বাংলা
অক্সিজেনের যোগান ও চাহিদা:-
বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ১০০-১২০ টনের মতো অক্সিজেনের দরকার হয়। কিন্তু মার্চ মাসে করোনা সংক্রমণ অনেক বেড়ে যাওয়ার পর সেই চাহিদা দৈনিক ৩০০ টন পর্যন্ত উঠেছিল। তবে সম্প্রতি আবার সেটা আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। এই চাহিদার একটি অংশ দেশেই উৎপাদিত হয়, বাকিটা প্রধানত ভারত থেকে আমদানি হয়। বিবিসি বাংলা
স্পেক্ট্রা অক্সিজেন লিমিটেডের ঢাকা ডিপোর ডিসট্রিবিউশন অফিসার গৌতমও অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলের চাপ বাড়ার কথা জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্পেকট্রা অক্সিজেন-এর একজন কর্মকর্তা জানান, স্পেকট্রা দৈনিক ২৫ টন মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদন করে। তিনি বলেন, ‘এখন চাহিদা বেড়ে গেছে। আগে আমাদের ৬০ শতাংশ যন্ত্র মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদনের কাজ করত। এখন সবগুলো যন্ত্র ২৪ ঘণ্টা শুধু মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদনের কাজেই ব্যবহার করা হয়।’ ঢাকা পোস্ট,বাংলা ট্রিবিউন