এম শরীফ ভূঞা, ফেনী :
করোনা দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালে সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা এ জেলায় রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকায় সংকটাপন্ন রোগীরা আইসিইউর অভাবে মারা যাচ্ছেন। অথচ ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন হলেও আইসিইউ পাচ্ছে না এ অঞ্চলের মানুষ।
২৫০ শয্যার ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ইনসেনটিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) থেকেও যেন নেই। উদ্বোধনের পর প্রায় এক বছর হতে চললেও এখনো সেবা পায়নি কেউ। তলাবদ্ধ হয়ে পড়ে থাকে ইউনিটটি। আর এ করনেই রোগী ও তাদরে স্বজনদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ হাসপাতালে ফেনীর ৬ টি উপজেলা, নোয়াখালীর সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, চট্টগ্রামের মীরসরাই ও কুমিল্লার চৌদ্ধগ্রাম সহ দূর-দূরান্ত এলাকার মানুষরা সেবা গ্রহণ করে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত বছরের মার্চ থেকে জেলায় কোভিডের প্রকোপ বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কোভিড সেবা দেওয়ার জন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ৩০ শয্যার আইসোলেশন ইউনিট চালু করা হয়। পর্যায়ক্রমে হাসপাতালটিতে ৭৫ শয্যায় আইসোলেশন উন্নীত করা হয়। গত বছর থেকে এ পর্যন্ত সেখানে ১১ জন কোভিড পজিটিভ রোগী মারা যান।
হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৫ জন। এর মধ্যে ১০ জন পজিটিভ রোগী রয়েছেন। গত বছরের ১৭ মে হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ উদ্বোধন করা হয়। এরপর প্রায় এক বছর অতিবাহিত হতে চললেও চালু করা সম্ভব হয়নি আইসিইউ সেবা। ইতোমধ্যে আইসিইউ সেবা চালুর জন্য একজন চিকিৎসক ডা. আসিফ ইকবাল ও পাঁচজন নার্সকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা কয়েকজন রোগীর স্বজন জানান, হাসপাতালটিতে আইসিইউ থেকেও তারা তার সুফল পাচ্ছেন না- তাদের ছুটতে হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রামের দিকে। এটি দুঃখজনক। হাসপাতালের এক কর্মচারী জানান, গত কয়েকদিন আগে আইসিইউর অভাবে তার সামনেই একজন মানুষকে মরতে দেখেছেন তিনি। মারা যাওয়া ব্যক্তিটি এক চিকিৎসকের বাবা ছিলেন।
ট্রাংক রোড়ের এক ব্যবসায়ী আফলাতুল কাউছার জানান, প্রয়োজনের সময় কাজে না আসলে এই আইসিইউ দিয়ে লাভ কী? সারা দেশে আইসিইউ বেডের সংকট, কিন্তু এখানে ১০টি আইসিইউ বেড থাকলেও মানুষ সেবা পাচ্ছেনা। এটি চালু করার দাবি জানান তিনি।
হাসপাতালের সিসিইউ ইউনিটের ইনচার্জ হাসিনা বেগম জানান, আইসিইউতে থাকা রোগীদের সার্বক্ষণিক অক্সিজেন প্রয়োজন। ফেনীতে অক্সিজেন প্রোডাকশন হয়না এজন্য জন্য চট্টগ্রাম থেকে অক্সিজেন নিয়ে আসতে হয়।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, আইসিইউর পুরোপুরি ১০ শয্যা চালু না করা গেলেও খুব শিগগিরই দুই শয্যা চালু করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ডাক্তার ও নার্সদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। করোনার সংকটাপন্ন রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটরের চেয়ে অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ণ। নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সেবার প্রস্তুতি চলছে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী বলেন, ১০ শয্যার আইসিইউ চালু করতে একজন ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক, তিনজন কনসালট্যান্ট ও চয়জন মেডিক্যাল অফিসার প্রয়োজন। মূলত জনবলের কারণে ইউনিটটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *