এম শরীফ ভূঞা, ফেনী, আজকের সময় :
দেশজুড়ে আলোচিত ফেনীতে লাইভে এসে স্ত্রীকে হত্যা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ এক বছরেও শেষ হয়নি। ঘটনার পর থেকে কারাগারে রয়েছেন টুটুল। তবে এখনও মনে পড়লে মা-বাবার খোঁজে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে ওই দম্পতির ৩০ মাস বয়সী শিশু সন্তান স্নেহা। মামলার বাদী নিহত তাহমিনা আক্তারের পিতা সাহাব উদ্দিন ন্যায় বিচারের আশায় আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছেন।
২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল ফেনী শহরের উত্তর বারাহীপুর ভূঞা বাড়িতে দাম্পত্য কলহের জের ধরে ফেসবুক লাইভে এসে স্ত্রী তাহমিনা আক্তারকে কুপিয়ে হত্যা করেন স্বামী টুটুল। পরে তিনি নিজেই ৯৯৯-এ খবর দিয়ে পুলিশকে জানান। খবর পেয়ে ফেনী মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে টুটুলকে গ্রেফতার করে এবং হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় নিহত তাহমিনা আক্তারের বাবা সাহাবুদ্দিন গত বছরের ১৬ এপ্রিল ওবায়দুল হক টুটুলকে আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) সাইফুদ্দিন ওইদিন টুটুলকে আদালতে হাজির করেন। হত্যার দায় স্বীকার করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ধ্রুবজোতি পালের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন টুটুল। পরে এসআই সাইফুদ্দিন বদলি হওয়ায় মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই এমরান হোসেন।
ফেনী জেলা জজ ও দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. আলতাফ হোসেন জানান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই এমরান হোসেন গত বছরের ১৬ নভেম্বর ওবায়দুল হক টুটুলকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন। আদালত একই বছরের ডিসেম্বর মাসে চার্জ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে। চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি নিহত গৃহবধূর বাবা ও মামলার বাদী সাহাব উদ্দিনের প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত বাদী, ম্যাজিস্ট্রেট, ডাক্তার ও পুলিশসহ ছয়জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
মামলার বাদী সাহাব উদ্দিন বলেন, ‘তার নাতনি স্নেহা দিনভর খেলাধুলায় সময় কাটায়। তবে মাঝেমধ্যে মা-বাবার কথা মনে পড়লে তাদেরকে ডেকে ডেকে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। তখন তাকে সাস্তনা দেয়ার ভাষা আমরা খুঁজে পাই না। হত্যাকারীর আসামীরা বিভিন্নভাবে হুমকি ও অর্থের প্রলোভন দিচ্ছে বলে তিনি জানান। মৃত্যুর আগে মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে চান তিনি।
বাদী পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট এম শাহজাহান সাজু বলেন, দিনক্ষণ ঠিক থাকার পরও করোনা পরিস্থিতির কারণে নিহত তাহমিনা আক্তারের ছোট বোন ও আসামি টুটুলের দুই চাচাতো ভাইয়ের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়নি। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে দ্রুত আমরা ন্যায় বিচার পাবো বলে প্রত্যাশা করি।
ফেনী জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ জানান, বারাহীপুরে লাইভে এসে গৃহবধূ হত্যা মামলাটিতে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সাক্ষ্য শেষ হলে যুক্তিতর্ক শেষে আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা হবে।
2021-04-16