মুন্না আজিজ দশম শ্রেণিতে পড়ে। বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায়। মা থাকেন ঢাকায়। মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। ১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক লকডাউন’, তাই সোমবার সকালে রাজশাহী বাস টার্মিনালে আসেন। সঙ্গে পেয়ে যান তার মতো আরও ১১ জন। বাস না পেয়ে সবাই মিলে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করেন। জনপ্রতি দেড় হাজার টাকা ভাড়া মেটে।

রাজশাহী শিরোইল বাস টার্মিনাল থেকে তারা গাড়িতে চড়ে। শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বেলপুকুর এলাকায় বিজিবির একটি তল্লাশিচৌকি রয়েছে। সেখানে গিয়ে গাড়ির চালক বলেন, ‘আপানার হেঁটে চেকপোস্ট পার হন। তা ছাড়া আমার জরিমানা করতে পারে।’ চেকপোস্ট পার হয়ে যাত্রীরা অপেক্ষা করতে থাকেন। এভাবে এক মিনিট, দুই মিনিট হতে হতে ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। কিন্তু মাইক্রোবাসের আর কোনো খবর নেই।

মুন্না আজিজ বলে, দুপুর ১২টার দিকে তারা যেখানে গাড়ি থেকে নেমেছিল, সেখানে ফিরে আসে। স্থানীয় লোকজন জানান, তাদের নামিয়ে দিয়েই গাড়ি ঘুরে রাজশাহী শহরের দিকে চলে গেছে। তারা তখন চালকের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে চালক বলেন, তিনি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। একেকবার একেকরকম কথা বলেন। তখন তারা বাধ্য হয়ে অটোরিকশা ভাড়া করে রাজশাহী শহরে আসেন।

রাজশাহীর একটি বাস কাউন্টারের ব্যবস্থাপক তাঁদের গাড়ি ভাড়া করে দিয়েছিলেন। তারা তাঁকে চেপে ধরেন। স্থানীয় পুলিশ বক্সের একজন পুলিশ তাঁদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। গাড়িতে সবারই ব্যাগ ছিল। ব্যাগে টাকাপয়সাও ছিল। ওই পুলিশ সদস্য চালকের মুঠোফোনে যোগাযোগ করার পরে মাইক্রোবাসের চালক একটি অটোরিকশায় ব্যাগগুলো তুলে দেন। একজনের ব্যাগে পাঁচ হাজার টাকা ছিল। তিনি ব্যাগ খুলে ৪ হাজার ৬০০ টাকা পেয়েছেন। বাস কাউন্টারের ব্যবস্থাপক বাধ্য হয়ে সব যাত্রীকে ৫০০ টাকা করে ফেরত দেন। যদিও যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল দেড় হাজার টাকা করে। যাত্রা বাতিল করে মুন্না আজিজ বাড়ি ফিরে যান।

বিকেল চারটার দিকে এই যাত্রীদের নয়জন আবার একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। এই দলে রয়েছেন মনসুর রহমান। তিনি তাঁর বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলায়। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে মনসুর বলেন, আরেকটি গাড়ি ভাড়া করে বিকেল চারটার সময় আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এ গাড়ির ভাড়াও দেড় হাজার টাকা।

প্রতারক মাইক্রোবাসের চালকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাঁর ফোনটি সারাক্ষণ ব্যস্ত পাওয়া যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *