সাকিব আল হাসান এখন মুম্বাইয়ে। কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে আইপিএল খেলতে ভারতের অবস্থান করছেন এই বাঁহাতি অলরাউন্ডার। এবারে কলকাতার ট্রেনিং ক্যাম্প মুম্বাইয়ে। তাই টিমের সাথে হোটেলে চলছে সাকিবের সাতদিনের ঘরবন্দি জীবন অর্থাৎ কোয়ারেন্টিন। সেখান থেকেই শোনালেন তার দুঃসহ অভিজ্ঞতার কথা।
এক ভিডিও বার্তায় সাকিব আল হাসান বলেন, কোয়ারেন্টিনের আজকে পঞ্চম দিন। দ্বিতীয় কোভিড পরীক্ষা হলো। এটায় নেগেটিভ হলে সপ্তম দিনে আরেকটি পরীক্ষা করানো হবে। ওটা নেগেটিভ এলেই বের হতে পারব। বাবলের ভেতরই থাকতে হবে, তবে ঘর থেকে বের হতে পারব। এখন পুরো ঘরবন্দি।
ঘরবন্দি থেকে একবার প্রচন্ড রকম ডিপ্রেসড হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর কালকে থেকে একটু রিকভারি করা শুরু হয়েছে। আজকে বেশ ভালো আছি। খুব বাজে রকমের ডিপ্রেশন ছিল, আমার আগে কখনও এরকম হয়নি। পরশু দিন একটা পর্যায়ে আমার মনে হয়েছে লোকে যে আত্মহত্যা করে ডিপ্রেশনে, কেন করে, সেটা বুঝতে পেরেছি আমি। এতটাই বাজে অবস্থা হয়েছিল।
কোভিডের কারণে লম্বা বিরতি শেষে ক্রিকেট বিশ্বজুড়ে এভাবেই খেলার আয়োজন হচ্ছে। জৈব-সুরক্ষা বলয় ও কোয়ারেন্টিন এখন ক্রিকেটারদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে। অনেকেই অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন। তবে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে সাকিবের জন্য এই অভিজ্ঞতা নতুন।
গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরে দেশে বঙ্গবন্ধু টি-টেয়েন্টি কাপ ও জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে জৈব-সুরক্ষা বলয়ে থেকেই তিনি খেলেছেন। কিন্তু এতটা কঠিন কোয়ারেন্টিন তখন ছিল না। এবারের কোয়ারেন্টিন অভিজ্ঞতা মানসিকভাবে তাকে বিধ্বস্ত করে ফেলেছিল।
সাকিব আরো বলেন, আগে যে কোয়ারেন্টিনে থেকেছি, তখন তো ঘর থেকে বের হয়েছি, টিমমেটরা একসঙ্গে ছিলাম, এর-ওর রুমে গিয়েছি, ওরা এসেছে। একটা ফ্লোরে সবাই ছিলাম। মিশতে পেরেছি। এখানে একদম রুম কোয়ারেন্টিন, কারও সঙ্গে দেখা করা, কথা বলার উপায় নেই। দরজার বাইরে খাবার দিয়ে যায়। আমার এরকম অভিজ্ঞতা ছিল না আগে।
সাকিব আরো যুক্ত করে বলেন, আমি ঘোরাফেরা করতে পছন্দ করি, কাজ-টাজ না থাকলে ভালো লাগে না কখনোই। জীবন সবসময়ই ব্যস্ততায় কাটে আমার। সেদিক থেকে খুব কঠিন হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ এরকম অবস্থায় পড়েৃপুরো জেলখানার স্বাদ পেলাম। যেটা বললাম, মানুষ ডিপ্রেশনের কোন পর্যায়ে গেলে আত্মহত্যা করে, সেটা অনুভব করেছি।
এরপর সাকিব বন্দিজীবনের শুরু দিকের কথা বলেন, একদিন যাওয়ার পর নিজেকে বোঝলাম যে এভাবে থাকা যাবে না। টিভি, নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, সবই চলছিল। কিন্তু এসব আর কত ভালো লাগে! এখন প্ল্যান করে ফেলেছি যে কী কী করা যায়, কোনটা কীভাবে করলে কোয়ারেন্টিনের সময়টা কাটবে। এমনিতে আমার কয়েকটা কাজ একসঙ্গে করার অভ্যাস। ধরেন, মুভি দেখার সময় কারও ম্যাসেজের রিপ্লাই দিলাম বা ই-মেইল করলাম বা অন্য কিছু। এখন একসময়ে একটিই করছি, যেন বেশি সময় ব্যস্ত থাকা যায়।
আরেকটা ব্যাপার ভালো হয়েছে, যখন থেকে অনুশীলন করা শুরু করেছি, জুম কলে আমাদের ট্রেনার অনুশীলন করায় প্রতিদিন, ওটা শুরু করার পর থেকে একটু ভালো লাগছে।
এই বন্দিদশা শেষ হবে কদিন পরেই। আপাতত মুক্তির সেই চিন্তাই সচল রাখছে সাকিবকে।
সব শেষে তৃপ্তির হাসি হেসে সাকিব বলেন, এখন পাঁচদিন হয়ে গেছে, আর দুই দিন মাত্র বাকি, ভাবতেই ভালো লাগেছ।- ক্রিকবাজ
2021-04-01