রেকর্ড ছাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণ ৫ হাজার ১৮১ ছুঁয়েছে সোমবার (২৯ মার্চ)। এ জন্য তড়িঘড়ি ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। বলা হয়েছে এবার কঠোর মনোভাব দেখানো হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। নির্দেশনা জারির প্রথম দিন তথা ৩০ মার্চ মঙ্গলবারও ছিল সব স্বাভাবিক, গতানুগতিক এবং যথারীতি ভাবলেশহীন।

চোখে পড়ার মধ্যে শুধু বাংলাদেশ রেলওয়ের ৫০ শতাংশ আসন খালি দেখা গেছে। রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) সরদার সাহাদাত আলী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। অন্য কোথাও নির্দেশনার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা, তা তদারকির কার্যক্রমও নেই। সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে, ১৮ দফা কি আদৌ করোনার সংক্রমণে লাগাম পরাতে পারবে?

মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) রাজধানীতে সরেজমিন ঘুরে কোথাও সরকারি নির্দেশনার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। ভাড়া জটিলতা না কাটায় গণপরিবহনে ছুটির দিনেও ছিল দাঁড়ানো যাত্রী। কাঁচাবাজার ও শপিংমলে ক্রেতারা ছিলেন গাদাগাদি করে। বেশিরভাগ মানুষের মুখে ছিল না মাস্ক। ফার্মেসিগুলোতেও ছিল মাস্কবিহীন ক্রেতার ভিড়।

নির্দেশনার বাস্তবায়নের এ হাল কেন জানতে চাইলে সরকারের নীতিনির্ধারকরা সবাই ছুটির কথা বলে এড়িয়ে গেছেন।

এদিকে বুধবার (৩১ মার্চ) থেকেই ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে অফিস পরিচালনার নির্দেশ বাস্তবায়ন শুরু করবে সরকারি অফিসগুলো। গণপরিবহনে ভাড়া জটিলতা মিটিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। বুধবার সকাল থেকে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ আসন খালি রেখে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হবে। তবে নৌযান ও উড়োজাহাজে কিভাবে যাত্রী পরিবহন করা হবে তা নিয়ে নির্দেশনা নেই।

ইউরোপ থেকে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন নিজের খরচে সরকার অনুমোদিত হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনাও বাস্তবায়ন হচ্ছে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে।

এদিকে বিনোদন ও পর্যটন কেন্দ্রগুলোয় ছিল চোখে পড়ার মতো মাস্কবিহীন মানুষের উপস্থিতি। এসব স্থানে সরকারের নির্দেশনা পৌঁছেছে বলে মনে হয় না।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস ও শিল্প কারখানা ৫০ ভাগ জনবল দিয়ে পরিচালনা করতে হবে। কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ এবং অবস্থান করার পুরোটা সময় বাধ্যতামূলক মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এ মুহূর্তে সাধারণ ছুটির কোনও পরিকল্পনা সরকারের নেই।

৩১ মার্চ থেকে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আগামী দুই সপ্তাহ এ আদেশ বহাল থাকবে। পাশাপাশি গাড়িতে শতভাগ মাস্ক পরিধান ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।

অপরদিকে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের কোনও দেশ থেকে ফেরার পর ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন শেষে করোনা পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এলেই বাড়ি যাওয়া যাবে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) ফ্লাইট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড রেগুলেশনস সদস্য গ্রুপ ক্যাপ্টেন চৌধুরী এম জিয়াউল কবির স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

১৮ দফা নির্দেশনা

১। জনসমাগম (সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় অন্যান্য) সীমিত করতে হবে। বিশেষ উচ্চ সংক্রমণযুক্ত এলাকায় বিয়ে ও জন্মদিনসহ যেকোনও সামাজিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করতে হবে।

২। মসজিদসহ সব উপাসনালয়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।

৩। পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্র, সিনেমা হল, থিয়েটারে জনসমাগম সীমিত করতে হবে। সব ধরনের মেলার আয়োজন নিরুৎসাহিত করতে হবে।

৪। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে এবং ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি যাত্রী পরিবহন করা যাবে না।

৫। সংক্রমণের উচ্চঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে।

৬। বিদেশফেরত যাত্রীদের ১৪ দিন হোটেলে নিজখরচে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

৭। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী খোলা বা উন্মুক্ত স্থানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্রয়-বিক্রয় করতে হবে। ওষুধের দোকানে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।
৮। স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।

৯। শপিংমলে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।

১০। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।

১১। অপ্রয়োজনীয় আড্ডা বন্ধ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাত ১০টার পর বাইরে বের হওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

১২। প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

১৩। করোনায় আক্রান্ত কিংবা করোনার লক্ষণ দেখা দিলে ওই ব্যক্তির আইসোলেশন নিশ্চিত করতে হবে। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা অন্য ব্যক্তিরও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে।

১৪। জরুরি সেবায় নিয়োজিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস প্রতিষ্ঠান বা শিল্প কারখানাগুলো ৫০ ভাগ জনবল দ্বারা পরিচালনা করতে হবে। গর্ভবতী, অসুস্থ কিংবা বয়স ৫৫-এর বেশি যাদের, সেসব কর্মকর্তা কর্মচারীর বাড়িতে অবস্থান করে কাজ করার ব্যবস্থা নিতে হবে।

১৫। সভা-সেমিনার, প্রশিক্ষণ, কর্মশালা যথাসম্ভব অনলাইনে আয়োজনের ব্যবস্থা করতে হবে।

১৬। সশরীরে উপস্থিত হতে হয় এমন যেকোনও ধরনের গণপরীক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে হবে।

১৭। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের বেশি মানুষের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

১৮। কর্মক্ষেত্রে সবসময়ই মাস্ক পরে থাকতে হবে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *