ফরিদুল মোস্তফা খান: ৮শ ৩০জন ধারণ ক্ষমতার কক্সবাজার জেলা কারাগারে বর্তমানে ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৪গুণ বন্দি রয়েছে।  সেখানে বর্তমানে ৩ হাজার ২শ ২৮জন বন্দির মধ্যে মহিলা ১৫৭ পুরুষ ৩হাজার ৫৪, এবং শরনার্থী বন্দি রয়েছেন ৪১জন। কারাগারে জনবল সংকট প্রকট। তবুও দেশের  দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে এসব বন্দিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। সমাজ ও দেশের বোঝা নয়, কারামুক্ত হলেই তারা হবেন পরিবার ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ। ফেলে আসা অতীতের সব উশৃঙ্খল পথ ছেড়ে অলোর পথে ফিরিয়ে আনতে বন্দি এসব হাজতি-কয়েদির কারাভ্যন্তরে কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, বিনোদন, প্রশিক্ষণ ও জনহিতকর নানা কর্মসুচি।

শিশুদের বিনোদনের জন্য কারাগারে নির্মাণ করা হয়েছে অভ্যন্তরিন পার্ক। মায়ের অপরাধে বিনা কারণে জেলে থাকা এসব শিশুদের জন্য রয়েছে ডে-কেয়ার (পরিচর্যা) সেন্টার। শিক্ষকরা রোজ তাদের প্রাথমিক ও মৌলিক শিক্ষা দিয়ে চলেছেন। কারাভ্যন্তরে এসব কর্মসুচি বাস্তবায়নকারীদের বেশীরভাগই হচ্ছেন স্বশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত ও স্বেচ্ছাশ্রমে আগ্রহীরা।

কক্সবাজার জেলা কারাগারের বর্তমান এমন চিত্রের কথা জানিয়েছেন জেল সুপার মোঃ নেছার আলম ।

প্রতিবেদকের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, প্রতিদিন কারাভ্যন্তর নবসাজে পাল্টাচ্ছে তার চিত্র। পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, ধর্মীয় শিক্ষা, গণশিক্ষা, বৈদ্যুতিকশিক্ষা, সেলাইকাজ, নর সুন্দর, রান্না, হস্তশিল্প ও সবুজ শ্যামল কারাগারটির ভেতরের সৌন্দর্য এখন পর্যটক প্রিয় কোন অবকাশ ও বিনোদনের কেন্দ্রকেও হার মানাবে। পৃথিবীর দীর্ঘ বেলাভূমি কক্সবাজার সৈকতের অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে আরেক সুন্দরের কক্সবাজার কারাগার কৃষিতেও ঘটাচ্ছে বিপ্লব। সেখানকার উৎপাদিত শীতকালীন সবজি বন্দিরা খেয়ে ফুরাতে পারেন না।

ডেপুটি জেলার মনির হোছেন  বলেন , ফুলে ফলে ভরপূর কক্সবাজার কারাগারটিতে মৌসুমে অনায়াসে মেলে ফুলকপি, বাঁধাকপি, মূলা, গাঁজর, খিরা (শশা), টমেটো, কাঁচা মরিচ, বেগুন ও নানা জাতের শাক।

নিজেরাই উৎপাদন করে তরতাজা এসব নির্ভেজাল সবজিতে পরম সন্তুষ্ট বন্দিদের জন্য, আগের ছোট্ট পরিসরের অপরিচ্ছন্ন রান্নাঘরটি বর্তমানে সম্প্রসারিত হয়েছে। সেখানে নির্মিত হয়েছে বিশালাকারের শেড। পর্যাপ্ত পানি ব্যবস্থার পাশাপাশি সংকট নিরসনে প্রতিটি ওয়ার্ডে এক হাজার লিটার পানি ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন টাংকি বসিয়ে দিয়েছেন জেল সুপার।

কারা কর্তৃপক্ষ জানান, শিশুপার্কে বিনোদনের জন্য দোলনা, বেলুন, স্প্রিং ঘোড়া, সুইমিং, স্লিপিংসহ বাচ্চাদের বুদ্ধিমত্তা ও মেধা বিকাশ সংশ্লিষ্ট নানা পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

কক্সবাজার কারাগারের জেল সুপার মোঃ নেছার আলম আরও  জানান, সরকারের লক্ষ্য অপরাধ, ক্ষুধা, জঙ্গি, মাদক ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি সোনার বাংলা। কাজেই কারাগারের এসব উদ্যোগ বন্দিদের জীবনের পরতে-পরতে কাজে আসবে। বের হলে তারাই হবেন আলোর পথের দিশারী। সংশোধিত জীবন নিয়ে এরাই হবেন দক্ষ জনশক্তিতে উন্নত বাংলাদেশের সহায়ক শক্তি।কারাগারের বন্দিদেরর সুবিধার্থে ইতো মধ্যে ৬তলার একটি ভবন উদ্ধোধন হয়েছে । আরেকটি নতুন ভবন নির্মান কাজ শুরু হবে শিঘ্রই। হাসপাতালে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হাজতি কয়েদিদের সার্বক্ষনিক সব প্রকার স্বাস্থ্য সেবা দিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন কারা  হাসপাতালে কর্মরত  কারারক্ষি মেডিকেল প্রশিক্ষিত নাছির উদ্দিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *