যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিসের মতো অনেকেই সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ‘লিটল স্পার্টা’ (স্পার্টা- প্রাচীন গ্রিসের বিখ্যাত শহর) বলে থাকেন। আয়তনে ছোট হলেও সামরিক খাতে তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিশাল। এখন শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রশ্নেও মহীরুহ হওয়ার উচ্চভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছে উপসাগরীয় দেশটি।
গত বছর ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েকটি আরব দেশের সম্পর্কপ্রতিষ্ঠায় অন্যতম প্রধান ভূমিকায় ছিলেন আমিরাতের ডি ফ্যাক্টো নেতা আবুধাবির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন জায়েদ। আরও পেছনে তাকালে, ২০১৮ সালে ইথিওপিয়া-ইরিত্রিয়া শান্তিচুক্তির মধ্যস্থতায় সৌদি আরবের পাশাপাশি অবদান ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও।
তবে প্রশ্নাতীতভাবে ছোট্ট দেশটির শান্তিপ্রতিষ্ঠা মিশনে সবচেয়ে বড় উদ্যোগটি শুরু হয়েছে কিছুদিন আগে। ব্লুমবার্গের খবর অনুসারে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বন্দ্ব মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছে আমিরাত। তাদের মধ্যস্থতাতেই গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ এশিয়ার দুই শত্রুভাবাপন্ন প্রতিবেশী ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ২০০৩ সালের যুদ্ধবিরতি চু্ক্তি মেনে চলবে।
আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আব্দুল্লাহ বিন জায়েদের ভারতে এক ঝটিকা সফরের পরপরই এ ঘোষণা দেয় দুই দেশ।
আমিরাত আশা করছে, তারা নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারবে। তার চেয়েও বড় স্বপ্ন, কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চলমান দীর্ঘদিনের বিরোধও মেটানো যাবে।
এখন প্রশ্ন উঠছে- আমিরাত কি পারবে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শান্তি ফেরানোর এই অসাধ্য সাধন করতে?
সেক্ষেত্রে অবশ্য পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর মধ্যে সমঝোতার মধ্যস্থতায় বিশেষ যোগ্যতা নিয়েই মাঠে নেমেছে আমিরাতিরা। দুই দেশের সঙ্গেই শক্তিশালী বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে আমিরাতের। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে কাজও করছে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় এবং পাকিস্তানি কর্মী।
তাছাড়া, ভারত-পাকিস্তানের বিরোধের শুরু যেহেতু হিন্দু-মুসলিম অবিশ্বাস থেকে, সেখানে দেশ-বিদেশ সবখানেই রাজনীতি ও ধর্মকে আলাদা রাখতে আমিরাতিদের প্রচারণাও বিশেষ গুরুত্ব বহন করে।
ভারত-পাকিস্তানের দ্বন্দ্ব নিরসন সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈদেশিক নীতিরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতিবেশী আফগানিস্তানে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা স্বার্থের প্রতিযোগিতা রয়েছে। সেখানে মার্কিনিদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা ওয়াশিংটনের সঙ্গে আবুধাবির সম্পর্ক আরও গভীর করতে সাহায্য করবে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমিরাত সামরিক ক্ষমতায়নের বদলে কূটনীতি ও বিনিয়োগের মতো ‘শান্তিপূর্ণ’ কৌশলগুলোতে মনযোগী হয়েছে। তাদের বেশিরভাগ আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সামরিক পদ্ধতিতে সমাধান হয়েছে অথবা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, যেখান থেকে বিরোধ নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভবনা নেই।
ইয়েমেন এবং হর্ন অব আফ্রিকা অঞ্চলে নিজেদের সামরিক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে কমিয়ে এনেছে আমিরাত। লিবিয়া থেকেও সরে আসতে চাচ্ছে তারা। দেশটিতে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি টানতে এখন রাজনৈতিক কৌশলে আগ্রহী আমিরাতিরা।
ইরানের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আরব্য প্রচেষ্টাতেও নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা।
আমিরাতের আশা, ভারত-পাকিস্তানও বিরোধ মেটাতে একই ধরনের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবে। সেটি হলে আমিরাতিদের অবশ্যই কিছুটা কৃতিত্ব দিতে হবে। আর তা না হলে অন্তত শান্তিপ্রতিষ্ঠায় চেষ্টা চালানোর কৃতিত্বটুকু পাবে মধ্যপ্রাচ্যের ‘লিটল স্পার্টা’।
(ব্লুমবার্গকুইন্টে প্রকাশিত আরব গালফ ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ গবেষক হুসেইন ইবিশের মতামত অবলম্বনে।)