আইয়ুব ভূঁইয়া: ইতিহাসের গতি পাল্টে দেয়া সেই মেঠোপথটি এখন স্বাধীনতা সড়ক হতে যাচ্ছে। উপরের ছবিটি ৫০ বছর আগের। নীচেরটি প্রায় এক দশক আগে সপরিবারে আমার মুজিবনগর সফরের সময়ের। ছবির মূল বিষয় হচ্ছে, মাটির রাস্তাটি। কয়েকদিনের মধ্যে এটি ইতিহাসের অংশ হতে যাচ্ছে। এর নাম হবে ‘‘স্বাধীনতা সড়ক”। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আগামী ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যৌথভাবে স্বাধীনতা সড়ক উদ্বোধন করবেন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিব নগর সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠনে যোগ দিতে চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্টজন এবং দেশী-বিদেশী সাংবাদিকরা এই রাস্তা দিয়ে ধুলো উড়িয়ে কলকাতা থেকে নদীয়া হয়ে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় (বর্তমানে মুজিবনগর) আসেন। চার জাতীয় নেতা আসেন বিএসএফের এই কালো জিপে করে (উপরের ছবি)। মুজিবনগর সরকারের শপথ গ্রহন অনুষ্ঠানের প্রধান সমন্বয়কারি ব্যারিস্টার আমির উল ইসলাম তার স্মৃতিকথায় লিখেছেন, সেদিন এই রাস্তা দিয়ে প্রায় ১০০টি ছোট-বড় যানবাহন কলকাতা থেকে বৈদ্যনাথতলায় এসেছিল। ৫০টিতে এমএনএ ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং বাকি ৫০টিতে দেশী-বিদেশী সাংবাদিকরা ছিলেন। এক দশক আগের ছবিতে আমি সপরিবারে যেখানে দাঁড়িয়ে ঠিক এই জায়গাতেই মেহেরপুরের তৎকালীন এসডিও (মহকুমা প্রশাসক) তৌফিক ই- ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম (বর্তমানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা) তাদের স্বাগত জানান। এর ৫০ গজ সামনেই মুজিব নগর স্মৃতিসৌধ।
১৯৭১ সালে স্মৃতিসৌধের জায়গাটির নাম ছিল বৈদ্যনাথতলা। এখানে আমবাগানে শপথ গ্রহন করেন প্রথম বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এখানেই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। শপথ গ্রহন শেষে এসপি মাহবুব হিসেবে খ্যাত মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীরবিক্রমের (বর্তমানে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল সংস্থার চেয়ারম্যান) নেতৃত্বে স্থানীয় আনসার বাহিনী মুজিনগর সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। ঐ অনুষ্ঠানেই অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিনি আহমদ বৈদ্যনাথতলার নাম মুজিবনগর ঘোষণা করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে মেহেরপুরের মুজিবনগর থেকে ভারতের নদীয়ার কৃষ্ণনগর পর্যন্ত এই সড়কের দেড় কিলোমিটার পাকা করা হয়েছে। এর আগে এই সড়কের মাত্র ৩শ’ মিটার ইটের সোলিং করা ছিল।