বাংলাদেশে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থাৎ দেড় হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের আগ্রহী সৌদি আরব। রোববার বিকালে ঢাকায় সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আল দুলাইহান তার দপ্তরে গণমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাত্কারে এ কথা বলেন।

সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, সৌদি প্রতিষ্ঠানগুলোই কেবল বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে এমন নয় বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদেরও সৌদি আরবে বিনিয়োগে উত্সাহিত করা হয়েছে।

সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, ওমরাহ পালনের সুযোগ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। এজেন্টের মাধ্যমে ওমরাহ ভিসা আবেদন করা যাবে। এ বছর হজের বিষয়ে কোনো নির্দেশনা এখনও আসেনি। সৌদি কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে।

সৌদি রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদ এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের শুভেচ্ছা বার্তা পাঠানোর কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, এ বছর একই সঙ্গে দুটি উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠান উদযাপন করছে বাংলাদেশ, যা ইতিহাসে বিরল। এ উপলক্ষে অনেক শুভকামনা বাংলাদেশের জন্য। একই সঙ্গে আমি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনতা অর্জনে আপসহীন সংগ্রাম ও ত্যাগের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি আমার সর্বোচ্চ শ্রদ্ধা জানাই। দোয়া করছি, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।

বাংলাদেশ-সৌদি আরব সম্পর্ক প্রসঙ্গে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, গত ৪৫ বছরে এই সম্পর্ক কূটনৈতিক, রাজনৈতিকসহ সব পর্যায়ে বিস্তৃত হয়েছে। দুই দেশ রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করছে। পারস্পরিক সহযোগিতাও আছে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ২২ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সৌদি আরবের ‘ভিশন-২০৩০’বাস্তবায়নে তারা কাজ করছে।

১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনের সময় ও ১৯৭৪ সালে লাহোরে ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনের সময় বঙ্গবন্ধু ও সৌদি বাদশাহ ফয়সালের বৈঠকের কথা উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে সম্পর্ক ক্রমেই জোরালো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত বছরগুলোতে বেশ ক’বার সৌদি আরব সফর করেছেন। সৌদি আরবের মন্ত্রী, প্রতিনিধিরাও বাংলাদেশ সফর করেছেন। সৌদি ইমামরাও বাংলাদেশে খুতবা দেয়ার জন্য আসেন।

বাংলাদেশে সৌদি আরবের বিশাল বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত বলেন, ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বাংলাদেশের জন্য অপেক্ষা করছে। সৌদি আরবের বিনিয়োগকারীদের নতুন গন্তব্য বাংলাদেশ। এর কারণ বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা। তিনি বলেন, জ্বালানি, তেল, তরলীকৃত গ্যাস, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, খাদ্যসহ অন্যান্য খাতে সৌদি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, বৈশ্বিক অঙ্গনে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের অন্যতম সর্ববৃহৎ শান্তিরক্ষী যোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহানুভবতা অসাধারণ। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আছে। এককথায় বিশ্বে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র।

সৌদি আরবের শ্রমবাজারে বাংলাদেশিদের সুযোগ প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, নিয়োগকারী পরিবর্তনের সুযোগ তৈরি হওয়ায় একজন কর্মী তার সুবিধামতো নিয়োগকারী বদলাতে পারবেন। তিনি ‘রি-এন্ট্রি’র সুযোগ পাবেন। প্রয়োজনে চলেও আসতে পারবেন।

সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশি কর্মীদের সৌদি আরবে অন্য দেশগুলোর দক্ষ কর্মীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এ জন্য তিনি চান, দক্ষ কর্মীরা সৌদি আরব যাক। এ দেশে দক্ষতা প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোতে আরো বেশি দক্ষ কর্মী সৃষ্টির জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *