করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির পর সীমিত পরিসরে নিয়মিত হজ পালনের অনুমতির কথা ভাবছে সৌদি সরকার। বিভিন্ন দেশের অল্পসংখ্যক মানুষ এবার হজ পালনের সুযোগ পেতে পারেন। তবে অবশ্যই হজযাত্রীদের করোনা টিকার পূর্ণ ডোজ নিতে হবে। বাংলাদেশ থেকে কতসংখ্যক মানুষ হজের সুযোগ পাবেন তা এখনো নিশ্চিত নয়। সৌদি সরকারের সেই মনোভাব জানার অপেক্ষায় রয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে গত বছরে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের টিকা নিয়ে রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে হজ গমনেচ্ছুদের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনায় টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আদৌ বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে হজ অনুমোদন দেওয়া হয় কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। যদি ইতিবাচক বার্তা আসে সে ক্ষেত্রে যেন বাংলাদেশ কোনো প্রস্তুতিতে পিছিয়ে না থাকে তাই আগে থেকেই টিকার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চারটি বিষয়ে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা অগ্রাধিকার পাবেন। প্রথমত হজ গমনেচ্ছুদের মধ্যে যাঁরা গত বছর নিবন্ধিত আছেন। দ্বিতীয়ত টিকার দুটি ডোজ সম্পন্নকারীরা। তৃতীয়ত তাঁদের মধ্যে যাঁরা দুরারোগ্য কোনো রোগে আক্রান্ত নন। এ ছাড়া যাঁরা সুস্থ-সুঠাম দেহের অধিকারী তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। তবে এ বিষয়গুলোর কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এর বাইরে সৌদি আরব যদি নির্দিষ্ট কোনো বয়স বেঁধে দেয় সে বিষয়টিও যুক্ত হবে। বৈঠকে হাবের প্রেসিডেন্ট শাহাদাত হোসেন তসলিম হজ গমনেচ্ছুদের টিকা নিবন্ধনে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বদলে পাসপোর্ট অনুযায়ী নিবন্ধনের প্রস্তাব করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনেকের জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে পাসপোর্টের নামের বানান ঠিক নাও থাকতে পারে। এসব বিষয় পরে জটিলতা তৈরি করতে পারে।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান বলেন, ‘হজ হবে কি না সে বিষয়েই আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাইনি। পেলে কী কী মানদণ্ড নির্ধারণ হবে তা আলোচনা হবে। তবে সম্ভাব্য প্রস্তুতি হিসেবে আমরা টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘এরপর সৌদি আরব থেকে যেসব শর্ত দেওয়া হবে সেগুলো পূরণ করে হজযাত্রী পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’
গত সোমবার ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিবের সভাপতিত্বে হজ প্রস্তুতির বিষয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। এতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, হাবসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে হজ পরিস্থিতির সার্বিক চিত্র তুলে ধরে বলা হয়েছে, হজ কার্যক্রম শুরুর সব প্রস্তুতি সরকারের আছে। বৈঠকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জন্য গত বছর এক লাখ ৩৭ হাজার হজযাত্রীর কোটা নির্ধারিত ছিল। নিবন্ধিত ছিলেন ৬১ হাজার ২৩১ জন। এর মধ্যে সরকারি দুই হাজার ৯৬০ জন এবং বেসরকারিভাবে নিবন্ধিত ছিলেন ৫৮ হাজার ২৭১ জন। এর বাইরে এ পর্যন্ত হজে যেতে আগ্রহীদের মধ্যে প্রাক-নিবন্ধন করে রেখেছেন এক লাখ ৭৭ হাজার ২৭১ জন। প্রাক-নিবন্ধকারীদের মধ্যে সরকারিভাবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন চার হাজার ৬৯৫ জন এবং বেসরকারি তালিকাভুক্ত হয়েছেন এক লাখ ৭২ হাজার ৫৭৬ জন। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (হজ) হামিদ জমাদ্দার বলেন, ‘আপাতত আমরা সৌদি আরবের বার্তার অপেক্ষায় আছি।’
গত মঙ্গলবার ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে হজ গমনেচ্ছুদের উদ্দেশে জানানো হয়েছে, এবারের হজের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে সরকারি ও বেসরকারি পদ্ধতিতে নিবন্ধিত ১৮ বছরের বেশি ও ৪০ বছরের নিচে চার হাজার ৮৩৩ জন এবং ৪০ বছরের ওপরে ৫৫ হাজার ৮৭৩ জনকে কভিড-১৯ টিকা নিতে হবে। অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচের যারা হজে যেতে নিবন্ধিত আছে তাদের টিকা নিতে হবে না।
গত বছর করোনার আঘাত সারা বিশ্বের সব কিছু এলামেলো করে দেয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের আগ্রহীরাও হজ পালন করতে পারেননি। এবার করোনার হানা কমলেও নতুন আঘাতের শঙ্কায় রয়েছে বাংলাদেশ। – কালের কন্ঠ