রংপুর নগরের কাচনা সাহেবগঞ্জ বধ্যভূমিতে মানুষের হাড়গোড় ও রক্তমাখা কাপড় পাওয়া গেছে। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সেনারা বাঙালি ইপিআর সদস্যকে ধরে এনে বধ্যভূমিতে হত্যা করেন। স্বাধীনতার ৫০ বছরের দ্বারপ্রান্তে শহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতিচিহ্ন এসব হাড়গোড় সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

মঙ্গলবার (৯ মার্চ) বিকেলে ওই বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজের জন্য মাটি খোঁড়ার সময় এসব হাড়গোড় ও কাপড় পাওয়া যায়। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে নগরীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ছুটে যান বধ্যভূমিতে।

এদিকে বিষয়টি জানাজানি হলে রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোছাদ্দেক হোসেন বাবলুসহ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বধ্যভূমি পরিদর্শন করেন।

বধ্যভূমি পরিদর্শনে এসে মুক্তিযোদ্ধা মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, ‘মুক্তিকামী বাঙালি, মুক্তিযোদ্ধা ও নিরীহ মানুষদের ধরে এনে পাকিস্তান বাহিনী হত্যা করে রংপুরের বিভিন্ন স্থানে ফেলে দিয়েছিল। এই ইতিহাসের কথা এতদিন অনেকেই শুধু শুনেছেন। আজ সেই হায়েনাদের হাতে মারা যাওয়া মানুষের হাড়গোড় মিলেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণে এসব হাড়গোড় সংরক্ষণ করা হবে।’

জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, ‘ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বাঁচিয়ে রাখতে এসব হাড়গোড় সংরক্ষণ করা হবে। প্রত্যেকটি বধ্যভূমি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের অংশ। সেই ইতিহাস আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জানাতে এসব হাড়গোড় সংরক্ষণ করা হবে।’

খনন কাজের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়ক খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, বধ্যভূমির উপরিভাগ খোঁড়ার পর একটু নিচে খুঁড়তেই মুক্তিযুদ্ধকালীন নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যাওয়া মানুষের হাড়গোড়, পরনের রক্তমাখা কাপড়, মানি ব্যাগ ও মাথার খুলি পাওয়া যায়। পরে প্রশাসনকে বিষয়টি জানানো হয়। সকলের উপস্থিতিতে সন্ধ্যায় হাড়গোড় নিয়ে যায় প্রশাসন।

হারাগাছ রোড ও সাহেবগঞ্জের মাঝামাঝি স্থানের এই বধ্যভূমিতে ১৯ জন শহীদের গণকবর ছিল। সেখানে টাঙানো নামফলকে বরিশালের ল্যান্স কর্পোরাল আশরাফ আলী মিয়া, টাঙ্গাইলের সার্জেন্ট মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, কুষ্টিয়ার কর্পোরাল আব্দুল সালাম, গাজীপুরের কর্পোরাল জহির উদ্দিন মিয়া, নওগাঁর সিও অফিসার জাকারিয়া চৌধুরী, হবিগঞ্জের সার্জেন্ট সৈয়দ আব্দুল হাই, কুমিল্লার সার্জেন্ট আব্দুল মোমেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সার্জেন্ট আবুল হোসেন, টাঙ্গাইলের সার্জেন্ট আকবর হোসেন, লক্ষ্মীপুরের সার্জেন্ট তোফায়েল আহমেদ, পাবনার সার্জেন্ট আনোয়ারুল হক, জামালপুরের কর্পোরাল আব্দুল কাদের, বরিশালের কর্পোরাল কবির উদ্দিন আকন্দ, কুমিল্লার কর্পোরাল সাদেক হোসেন ভূঁইয়া, খুলনার সৈনিক আব্দুল ওয়াদুল খান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈনিক সানাউল হক, গাইবান্ধার সৈনিক আবুল কাশেম প্রধান ও টাঙ্গাইলের সৈনিক আতোয়ার রহমান খাঁনের নাম রয়েছে।

রংপুরে অরক্ষিত বধ্যভূমির সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধন বৃদ্ধিসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান সংরক্ষণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকাজ চলছে। এরআগে গত বছরের ৩০ নভেম্বর রংপুর টাউন হল বধ্যভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য মাটি খুঁড়তে গেলে মানুষের হাড়গোড় ও দাঁত পাওয়া যায়। – ঢাকা পোস্ট

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *