এক মহিলা আমাকে প্রশ্ন করে জানতে চাচ্ছেন যে, ইসলামের পুরুষদেরকে চার চারটি বিয়ে করার অনুমতি দেয়াকে কিভাবে ন্যায় বিচার আর মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে বলবেন কি?
কারো ১ম স্ত্রীর কাছে প্রশ্ন করে দেখেন তো সে এটাকে তার জন্য ন্যায়বিচার বা মানবিক মর্যাদা বলবে কিনা?
আমি উত্তরে জানালাম, প্রথম স্ত্রীর কাছে জিজ্ঞাসা পরে করবো, তার আগে আপনি সেসব লাখ লাখো নারীদের জিজ্ঞাসা করে জেনেনিন, যাদের কোন স্বামী নেই। যাদেরকে বিয়ে করার মত কোন পুরুষ পাওয়া যায়নি। যারা মানব জীবনের আল্লাহ প্রদত্ত এক নিয়ামতের স্বাদ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত তাদের জিজ্ঞাসা করুন, তাদের জীবন যৌবন বিনা স্বামীতে কেমন যাচ্ছে?
তবে সেই সব মহিলাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেননা যারা বিয়ে ছাড়া পরপুরুষের সাথে শয্যাগত হওয়াকে দোষ মনে করেননা, সেই সব মহিলাদেরকে জিজ্ঞাসা করবেননা যারা সমকামী।
আপনি সেই সব স্ত্রীদেরকে জিজ্ঞাসা করুন যে সব নারী যৌন শীতলা রোগে আক্রান্ত। যে সব নারী তার বিশেষ অংগকে স্কুইজ করতে পারেননা। তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন যে তাদের এই অক্ষমতার জন্য তাদেরকে তাদের স্বামী ছেড়ে দিলে কি ভালো হতো? না নিজেদের অক্ষমতার জন্য স্বামীকে আরেকটি বিয়ে করতে দিয়ে স্বামীর সাথে থাকা ভালো হতো?
আপনি সেই অসুস্থ স্ত্রীদেরকে জিজ্ঞাসা করুন তারা এত অসুস্থ যে ঘরের সাংসারিক কাজ করতে অক্ষম, এই অক্ষমতার জন্য তাদের স্বামী যদি তাদের ছেড়ে দিয়ে তাহলে তাকি ভালো হবে? না আরেক স্বামীকে আরেক বিয়ে করার অনুমতি দিয়ে স্বামীর ঘরে থেকে যাওয়া ভালো?
ইসলাম প্রতিটি পুরুষকে চার বিয়ে করতেই হবে এমন বাধ্যতামূলক আদেশ দেয়নি। বা চার বিয়ের অনুমতি দিয়ে রেখেছে বলেই পুরুষ চার চার জন মহিলাকে বিয়ে করার সুযোগ নিবে বিষয়টি তেমন নয়।
ইসলামের চার বিয়ের অপশন, আপৎকালিন অপশন। ইসলাম এক স্বামীর এক স্ত্রী রাখতে চায়, কিন্তু পরিস্থিতি যদি বাধ্য করে তাহলে চার বিয়ে পর্যন্ত অনুমতি দিয়েছে।
মনে করুন ইসলাম হুকুম দিয়েছে এক স্বামীর এক স্ত্রী ছাড়া আর কোন স্ত্রী থাকতে পারবেনা।
যদি কোন দেশে কখনো কোন যুদ্ধে কিংবা মহামারীতে, দুর্ঘটনায় অধিকাংশ পুরুষ মারা যায় কিংবা স্বাভাবিক ভাবে নারীদের সংখ্যা পুরুষের চেয়ে চারগুণ বেশী হয়ে যায়, মনে করুন কোন সমাজে প্রতি ৫ জনের ১ জন পুরুষ। এমন জনসংখ্যার নারী পুরুষের অনুপাতে তখন যদি এক স্বামীর এক স্ত্রী রাখার আইন বলবৎ থাকলে বাকি ৩জন অবিহিত মহিলাদের কি হবে?
আমি আবারও বলছি ইসলাম সব ক্ষেত্রে সাম্য চায়না, কিন্তু সর্বস্থায় ন্যায় বিচার শ্রেণী বর্ণ, জাত, ভাষার মানুষের মাঝে মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চায় ।
আল্লাহর আইনে কোন ত্রুটি নেই, ত্রুটি আপনার বুঝার।
আপনি বলছেন ১ম স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে তার স্বামী আরেক বিয়ে করার জন্য সে সুখী কিনা?
আপনাকে আমি জিজ্ঞাসা করছি, আপনার স্বামী যদি আরেক বিয়া না করে আপনার জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে প্রতিদিন নিত্যনতুন নারীদের সাথে শয্যাগত হোন তাতে আপনি কি সুখী হবেন ?
শুনুন, ইসলাম চার বিয়ে কেন পুরুষকে এক বিয়েরও অনুমতি দিবেনা, যদি পুরুষ নিজে উপার্জক্ষম না হয়, সে শারীরিক, মানসিকভাবে সুস্থ্য না হয়, বিবাহিত এক স্ত্রীর জন্য নিজস্ব বাসস্থান করে দেবার যোগ্যতা না রাখে, যদি বিয়ের মোহর পরিশোধ করার ক্ষমতা না রাখে।
আপনি যদি মানব সভ্যতার সে সময়ের কথা ইতিহাসে পড়ে থাকেন, যখন মানুষ পশুদের আক্রমণ থেকে একা একা রক্ষা করতে অক্ষম ছিলো, তখন পশুদের আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য বংশের নিকট আত্মীয়দের নিয়ে একত্রে বাস করতে শুরু করে, তাদেরকে পরিচালনার জন্য তারা একজন নেতা নির্বাচন করতো।
এরপর মানুষ যখন পশু শিকার করা যখন শিখে, পশুর মাংস যখন তাদের খাদ্য হয়ে দাঁড়ায় তখন তারা আরও বড় জনমন্ডলি গোত্র ঘটন করে, সে জনমন্ডলি পরিচালনার জন্য এক নেতা নির্বাচন করে।
এইভাবে পরিবার পরিচালনার জন্য পরিবার থেকে একজনকে নেতা নির্বাচন করা হতো, এই যে একজনকে নির্বাচন করার প্রথা তা কালে কালে বা অঞ্চল ভেদে কোথাও নারীকে কোথাও পুরুষকে নেতা নির্বাচন করা হতো, ইসলাম শারীরিক দিয়ে শক্তিশালী পুরুষকে পরিবারের প্রধান হিসাবে নির্বাচন করতে নির্দেশ দিয়েছে, এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে স্বামী পরিবারের প্রধান হিসাবে বিবেচিত হোন, এর জন্য স্বামীকে স্ত্রী থেকে এক দরজা উপরে মর্যাদা দেয়া হয়েছে। এখানে স্ত্রীর প্রতি কোন অমানবিকতায় করা হয়নি। বরং ন্যায় বিচার করা হয়েছে।
কেউ যদি প্রশ্ন করেন, স্বামী অসুস্থ হলে স্ত্রী করবে? স্ত্রীকে অধিকার দেয়া হয়েছে সে বিয়েকে ভেংগে দিতে পারবে, নতুন করে আবার বিয়ে করতে পারবে।
কেউ যদি বলেন নারীদেরকে এক সাথে চার স্বামী রাখার অধিকার দেয়া হলো না কেন? আমার প্রশ্ন এক বাটিতে চার গাভীর দুধ একত্রে রাখার পর কি সে দুধকে আলাদা করা যাবে?
গতকাল এক খবরে পড়েছি ব্রাজিলে জমজ দুই ভাইয়ের এক ভাই কোন এক মেয়েকে ধর্ষণ করে যার ফলে মেয়েটি সন্তান ধারণ করে, মেয়েটি জমজ ভাইদেরকে তার সন্তানকে পিতার অধিকার দেবার জন্য অনুরোধ করে, তারা উভয় ভাই তা অস্বীকার করে। মেয়েটি আদালতে যায়, আদালত ডিএনএ টেস্ট করিয়ে আসল পিতাকে তা বের করতে পারেনি।
কাইমেরিজম নামে একধরনের জন্মগত ত্রুটি আছে যার ফলে একজন মানুষের শরীরে দুই ধরনের ডিএনএ পাওয়া যায়। অর্থাৎ তার শরীরের এক অংশের সঙ্গেই অন্য কোন একটি অংশের ডিএনএ মিলে না। দেখা যায় সন্তানের সঙ্গে বা বাবামায়ের সঙ্গেই ডিএনএ মিলছে না।
কাজেই আল্লাহতালা কেন এক নারীর জন্য চার স্বামী রাখার অধিকার দেননি, এই মহিলার ঘটনা থেকে বুঝেনিন।
ধন্যবাদ।
পুনঃ ইসলাম একাধিক বিয়ে করতে যে সমতার শর্ত দিয়ে রেখেছে তা ইচ্ছা করেই উল্লেখ করিনি। কারণ স্বামী তার অর্থ সম্পদের ক্ষেত্র সমতা রক্ষা করতে পারলেও তার মন ভালোবাসা, শারীরিক আবেদনে সমতা রক্ষা নাও করতে পারে। মন ভালোবাসা, শারীরিক সম্পর্ক নির্ভর করে দুটি মানুষের রাসায়নিক ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দ্বারা।
বরং বিত্তবান স্বামী আর্থিক সুবিধা, সম্মান বড় স্ত্রীকেই বেশি দিয়ে থাকেন আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি।