চুপিসারে মঞ্চ ছেড়ে চলে যেতে রাজী হননি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুগত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তিনি ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বিদেশ নীতির প্রধান সেনাপতি। শেষ দিনগুলোতে পররাষ্ট্র নীতিতে এমন কিছু মৌলিক সিদ্ধান্ত তিনি দিয়েছেন যা জো বাইডেনকে নিশ্চিতভাবে ভোগাবে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। খবর বিবিসি বাংলার।

বাইডেন মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদেশ নীতি গত চার বছরে বিশ্বে আমেরিকার নেতৃত্ব, প্রভাব ক্ষুণ্ণ করেছে এবং আমেরিকাকে তার মিত্রদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। বিগত মাসগুলোতে জো বাইডেন বলেছেন, বিশ্বের আমেরিকার ‘মর্যাদাপূর্ণ নেতৃত্ব’ প্রতিষ্ঠাই হবে তার বিদেশ নীতির প্রধান লক্ষ্য। এমন লোকজনকে তিনি তার পররাষ্ট্র নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন যারা ‘একলা-চলো‘ নীতির বদলে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় বিশ্বাসী।
কিন্তু ক্ষমতার শেষ সময়ে এসে মাইক পম্পেও চীন, ইরান এবং মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে এমন কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যার পরিণতি জো বাইডেনকে ভোগ করতে হবে। চীনের স্পর্শকাতরতা বিবেচনা করে তাইওয়ানের সাথে সরকারি পর্যায়ে যোগাযোগ বন্ধ রাখার যে নীতি যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে চীন।

ইয়েমেনে হুতিদের সন্ত্রাসী সংগঠন হিসাবে তালিকাভুক্ত করেছেন যা নিয়ে জাতিসংঘ এবং ত্রাণ সংস্থাগুলো গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। জাতিসংঘ ত্রাণ সংস্থার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে বলা হয়েছে এই সিদ্ধান্তে ইয়েমেনে মানবিক দুর্যোগ ভয়াবহ রূপ নেবে। যে দেশটির সাথে সম্পর্ক ভালো করতে জো বাইডেন বিশেষভাবে ইচ্ছুক, সেই কিউবাকে হঠাৎ করে সন্ত্রাসে মদতদাতা রাষ্ট্রের তালিকায় ঢোকানো হয়েছে।

ইরানে এখন আল কায়দা তাদের প্রধান ঘাঁটি তৈরি করেছে এই অভিযোগ তুলে মি. পম্পেও বেশ কিছু সিনিয়র ইরানি নেতা এবং প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছেন। জানা গেছে, এমনকি আয়াতোল্লাহ আলী খামেনির নিয়ন্ত্রিত কিছু প্রতিষ্ঠানকেও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে।

চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক এবং প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসার কোনো ইচ্ছা জো বাইডেনের না থাকলেও, তিনি চীনের সাথে সম্পর্কে সুর বদলাতে আগ্রহী। ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তিতে ফেরা তার অন্যতম লক্ষ্য। ইয়েমেনের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ বন্ধে প্রয়োজনে সৌদি আরবের ওপর চাপ তৈরির জন্য ডেমোক্র্যাটদের বামপন্থী অংশের ভেতর থেকে বড় ধরনের চাপ রয়েছে তার ওপর।

কিউবার সঙ্গে বৈরিতা দূর করার ব্যক্তিগত ইচ্ছা রয়েছে জো বাইডেনের। কিন্তু বেছে বেছে মাইক পম্পেও শেষ বেলায় ঠিক ওই জায়গাগুলোতে হাত দিয়েছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিদেশ নীতি নিয়ে ট্রাম্প সরকারের শেষ মুহূর্তের এসব সিদ্ধান্ত নিয়ে কি করতে পারেন জো বাইডেন? তার সামনে বিকল্প কি? বাইডেনের উপদেষ্টা শিবির থেকে বলা হচ্ছে পম্পেওর এসব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত এবং সহজেই এগুলো উল্টে দেওয়া সম্ভব।

বারাক ওবামা সরকারের সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা বিভাগে উপদেষ্টা হিসাবে কাজ করতেন শীর্ষ আইনজীবী অ্যাডাম স্মিথ। তাকে উদ্ধৃত করে লন্ডনের ফাইনানসিয়াল টাইমস পত্রিকা লিখেছে, আইনগতভাবে পম্পেওর এসব নির্দেশনা সবই উল্টে দেওয়া সম্ভব কারণ এগুলো, তার মতে, নির্বাহী আদেশ যা প্রেসিডেন্ট পাল্টে দিতে পারেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *