যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে আরো রক্ত ঝরার আশঙ্কা রয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (এফবিআই) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ২০ জানুয়ারির আগে সব অঙ্গরাজ্যে সশস্ত্র বিক্ষোভ করতে পারে ট্রাম্পপন্থীরা। সহিংসতার আশঙ্কা রয়েছে জো বাইডেনের শপথের দিনও। আর এফবিআইয়ের এই আশঙ্কার মধ্যেই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রী শাদ ওলফ। ফলে সব কিছু মিলিয়ে ক্ষমতার পালাবদল নিয়ে মার্কিনিদের মধ্যে ব্যাপক উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।

এদিকে ২০ জানুয়ারির আগে ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়বেন না বলে আভাস মিলেছে। সে ক্ষেত্রে তাঁকে সরাতে অভিশংসনের পথ বেছে নেবেন আইন প্রণেতারা। এ নিয়ে আজ পার্লামেন্টে ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।

এরই মধ্যে ওয়াশিংটন ডিসিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন ট্রাম্প। গত সোমবার তিনি জরুরি অবস্থা জারি করেন। তিনি ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও ফেডারেল ইমার্জেন্সি ম্যানেজমেন্ট এজেন্সিকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন বাইডেন। গত ৬ জানুয়ারি তাঁকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের স্বীকৃতি দেয় কংগ্রেস। ওই দিন ‘ট্রাম্পের আহ্বানে’ কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলা চালায় তাঁর সমর্থকরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানোর পাশাপাশি কংগ্রেস ভবনের ভেতরে ঢুকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে জ্বালাও-পোড়াও ও ভাঙচুর চালায় তারা। এ ঘটনায় নিহত হয় পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দেন ট্রাম্প। কিন্তু এর মধ্যেই আবার ট্রাম্পপন্থীদের সশস্ত্র পরিকল্পনার কথা জানাল এফবিআই।

এফবিআইয়ের গোপন এক বুলেটিনের বরাত দিয়ে ‘এবিসি নিউজ’সহ কয়েকটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ট্রাম্পপন্থী কয়েকটি উগ্র গ্রুপ ১৭ জানুয়ারি দেশজুড়ে সশস্ত্র বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। এ ছাড়া ২০ জানুয়ারি বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের আদালত চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করার পরিকল্পনাও আছে তাদের। বুলেটিনের তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পকে অপসারণ কিংবা অভিশংসন করা হলে সশস্ত্র বিক্ষোভের আশঙ্কা বেশি থাকবে। আর বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে ট্রাম্প না থাকলে বিক্ষোভ কর্মসূচি হওয়ার কথা। ট্রাম্প এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছেন যে তিনি শপথ অনুষ্ঠানে থাকবেন না।

এফবিআইয়ের এই সতর্কবার্তার পর যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ওয়াশিংটনে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সহিংসতার আশঙ্কা থাকায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে ক্যাপিটল হিলে, যেখানে বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠান হবে। ক্যাপিটলের নিরাপত্তাকর্মীরা নিশ্চিত করেছেন, শপথের দিন ৬ জানুয়ারির পুনরাবৃত্তি তাঁরা হতে দেবেন না।

সহিংসতায় উসকানি দিচ্ছে, এমন অনেক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। টুইটার জানিয়েছে, তারা এরই মধ্যে ট্রাম্পপন্থী ‘কিউআনন’ গ্রুপ সংশ্লিষ্ট ৭০ হাজার অ্যাকাউন্ট সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে।

এদিকে ৬ জানুয়ারির পর প্রথমবারের মতো ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ট্রাম্প। গত সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসে এই বৈঠক হয়। ধারণা করা হচ্ছে, ক্ষমতা ছাড়ার প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতেই তাঁরা এই বৈঠক করেন। হোয়াইট হাউসের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ‘তাঁদের মধ্যে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।’ ওই কর্মকর্তার ভাষ্য অনুযায়ী, ২০ জানুয়ারির আগে ট্রাম্পের সরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া মাইক পেন্সও ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। সূত্র : বিবিসি, এএফপি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *