যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এই মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ। করোনার বিস্তাররোধে দ্রুত আবিষ্কার করা টিকার কার্যক্রম নিয়ে যে আশা করা হয়েছিল, তার আশানুরূপ ফল এখনো মিলছে না।

যুক্তরাষ্ট্রে ৮ জানুয়ারি আরেকটি ভয়াবহ মাইলফলক ছুঁয়েছিল। একদিনেই করোনায় প্রায় ৪ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। বর্তমানে অ্যারিজোনায় করোনা পজিটিভ মানুষের সংখ্যা সর্বোচ্চ। যখন টিকার আশানুরূপ কোনো ফল দেশবাসী দেখছেন না, তখন বাইডেন প্রশাসন করোনার টিকা সরবরাহে নতুন একটি কৌশল নির্ধারণ কাজ করছে। এই কৌশল বাস্তবায়িত হলে মানুষ সহজেই প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত টিকা পাবে।

ফাইজার ও মডার্নার পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে দাবি করা হয়েছে, তাদের টিকার দুটি ডোজ করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রায় ৯৫ ভাগ কার্যকর। একটি ডোজের তিন সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজটি দেওয়া হয়। কিন্তু বাইডেন প্রশাসন বলছে, টিকার প্রাথমিক ডোজগুলো দ্রুত সরবরাহ করা হবে। তারা ধারণা করছে, সময় মতো সঠিকভাবে দ্বিতীয় ডোজ উৎপাদন করে তা দ্রুত বিতরণ ও পরিচালনা করতে সক্ষম হবে তারা।

বাইডেন প্রশাসনের নতুন এই পরিকল্পনা অবশ্য সমালোচকদের মুখ বন্ধ করতে পারছে না। তারা বলছে, এই পদক্ষেপের ফলে দ্বিতীয় ডোজ পেতে বিলম্বের ঝুঁকি রয়েছে।

এখনই প্রতিটি ডোজ দ্রুত উৎপাদন ও পরিচালনা কি ভালো হবে এমন প্রশ্নের জবাবে ৮ জানুয়ারি পিবিএস আওয়ারের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক উডরুফ জুডির লাইফ শোতে ফিলাডেলফিয়ার শিশু হাসপাতালের ভ্যাকসিন এডুকেশন সেন্টারের পরিচালক এবং এফডিএর ভ্যাকসিন উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ড. পল অফিট বলেন, ‘আমি মনে করি, বাইডেনের পরিকল্পনা একটি বড় ধরনের বাজি এবং এটি অপ্রয়োজনীয় একটি বাজি।’

পল অফিট বলেন, ‘আমার উদ্বেগ হলো, দ্বিতীয় ডোজটি পেতে তিন/চার সপ্তাহ কিংবা পাঁচ/ছয় সপ্তাহও লাগতে পারে। আমরা এখনো নিশ্চিত নই। সময়মতো যদি দ্বিতীয় ডোজ না পাওয়া যায়, তবে দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর হয়তো অনেকেই টিকা নিতে চাইবে না। অথচ দ্বিতীয় ডোজটি চমৎকার প্রতিরোধ ক্ষমতা রাখে এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, দ্বিতীয় ডোজ সরবরাহে না রেখে প্রথম ডোজ প্রাথমিকভাবে সরবরাহ করা টিকা কর্মসূচিকে ব্যাহত করতে পারে এবং আরও বেশি ক্ষতিকর ফল আনতে পারে বলে মনে করি।’

আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন আমেরিকান টেলিভিশন নিউজ উপস্থাপক ও পিবিএস নিউজআওয়ারের প্রতিবেদক স্টেফানি সি।

চলতি সপ্তাহে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে মডার্না জানিয়েছে, তারা ৬০ কোটি ডোজেজ উৎপাদন করবে, যা তাদের আগের পরিকল্পনার চেয়ে ১০ কোটি বেশি। সুতরাং তারা যদি দ্রুত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়, তবে কি তারা দ্বিতীয় ডোজ উৎপাদনের সময়সূচি ঠিক রাখতে পারবে? স্টেফানির এই প্রশ্নের জবাবে ড. পল বলেন, ‘এটি কোনো নোভেল টিকা পদ্ধতির নয়। আমাদের কাছে এমআরএনএ পদ্ধতির মতো আর কোনো বাণিজ্যিক টিকা নেই। এটি মাপা সহজ নয়। এটি অবশ্যই সমস্যার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। তবে আশা করি, তারা যা করছেন, তা ভালো কিছু হোক।’

ড. পল আরও বলেন, যদি লোকেরা কেবল প্রথম ডোজটি নেয়, যা ভাইরাসটি প্রতিরোধে যথেষ্ট নয় এবং দু-তিন মাস পরে মনে করে যে তাঁরা সুরক্ষিত, তবে ভুল হবে। দ্বিতীয় ডোজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বর্তমানে সারা দেশে কোভিডের প্রভাব একেবারে শীর্ষে রয়েছে। ভ্যাকসিন পাওয়া গেলেও ভাইরাস আমাদের ছাড়ছে না। এ পর্যন্ত ২ কোটি ১০ মিলিয়ন টিকার ডোজ বিতরণ করা হয়েছে। প্রায় ৬০ লাখ মানুষ প্রথম ডোজটি পেয়েছেন। এর মধ্যে ৬ লাখ পেয়েছে নার্সিং হোমে থাকা মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *