বিশ্ববাজারে চীনের বাণিজ্যদূত তিনি। ফোর্বস পত্রিকার বিচারে পৃথিবীর ৫০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের মধ্যে ২১তম স্থানে তার অবস্থান। স্টার্ট আপ বিজনেসের ক্ষেত্রে তাকে রোলমডেল বলে ধরা হয়। ধনকুবের শিল্পপতির পাশাপাশি তিনি একজন বিনিয়োগকারী, সমাজসেবী এবং উদ্যোক্তা। একইসঙ্গে চীনের সাম্প্রতিক অর্থনীতির তীব্র সমালোচক। এমন জ্যাক মা’র অতর্কিত লাপাত্তা হয়ে যাওয়া ভাবিয়ে তুলেছে বিশ্বের সংবাদমাধ্যমগুলোকে।

চীনের যেসব ধনী আন্তর্জাতিক স্তরে দেশটির অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রতীক ছিলেন; তাদের মধ্য সম্ভবত সবচেয়ে বেশি খ্যাতি পেয়েছেন জ্যাক মা। আলীবাবার এই প্রতিষ্ঠাতা বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী গত দু’মাস ধরে জনসম্মুখে নেই।
শোনা যাচ্ছে, সম্প্রতি চীনের অর্থনীতি নিয়ে জ্যাক মা’র মন্তব্য অপ্রীতিকর বলে মনে হয়েছে দেশটির সরকারের কাছে। গত ২ মাস ধরে এই ধনকুবেরের কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। তার নিজের শো ‘আফ্রিকাস বিজনেস হিরোস’-এর চূড়ান্ত পর্বেও দেখা যায়নি তাকে।

দু’মাস আগে শাংহাইয়ের এক অনুষ্ঠানে বর্তমান চীন সরকারের নিন্দা করায় তার উপরে খোদ চীনা প্রেসিডেন্ট রুষ্ট ছিলেন বলেন দাবি বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমের। এর জেরে জ্যা মা’র আরেক সংস্থা অ্যান্ট-কে আর্থিক নজরদারি সংস্থার কোপে পড়তে হয় বলেও শোনা যায়। তিন সন্তানের বাবা জ্যাক মা-কে সরকারের পক্ষ থেকে দেশ না ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

কয়েক মাস আগে চীন সরকার ও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক পরিষেবার সমালোচনা করে খবরে এসেছিলেন জ্যাক মা। পাশাপাশি চীন-আমেরিকা দ্বন্দ্বের পরিস্থিতিতেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক বজায় ছিল। বেইজিং সেটাও ভালভাবে নেয়নি।

ধনীরা প্রতিকূল সময়ে নিশ্চুপ অবকাশে সময় কাটাতে পারেন, কিন্তু জ্যাক মা’র সেই সৌভাগ্য হয়েছে বলে মনে হয় না। যেমন; গত রবিবারেই ইয়াহু ফাইন্যান্স প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, নিজের সবচেয়ে আইকনিক টিভি শো’র চূড়ান্ত রাউন্ডেও তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। তার বদলে আলীবাবার অন্য এক প্রতিনিধি অনুষ্ঠানে বিচারক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

দ্য টেলিগ্রাফ সূত্র জানায়, অনুষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকেও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে জ্যাক মা’র ছবি।

আলীবাবা মুখ্য নির্বাহীর ভাগ্য নিয়ে তাই শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সিএনবিসি বিশ্লেষক ডেভিড ফাভের অবশ্য মঙ্গলবার জানিয়েছেন, জ্যাক মা হয়তো স্বেচ্ছায় একটু কম প্রকাশ্যে আসছেন অর্থাৎ, তিনি হারিয়ে যাননি।

এখন প্রশ্ন জাগে, চীনের সবচেয়ে সফল ব্যবসায়ীদের একজন হঠাৎ করে হারিয়েই বা যাবেন কেন? অথবা একথার মাধ্যমে কী বুঝানো হয়েছে- সেটাও জানা দরকার।

তার আগে কিছু বলে রাখা ভালো। যেমন নিয়ামক সংস্থার সমালোচনার পরই আলীবাবার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে চীনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক (পিবিওসি)। কর্তৃপক্ষটি মা’র আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান অ্যান্ট গ্রুপের বিরুদ্ধেও একচেটিয়া বাজার কায়েমের অভিযোগ তোলে। মোদ্দাকথা, কর্তাদের সুনজরে তিনি নেই এবং চাইলেই তাকে সাজা দেওয়ার পদক্ষেপ হয়তো তারা নেবেন। হয়তো সেকারণেই তাকে গোপনে গ্রেফতার করা হয়ে থাকতে পারে।

চীনের প্রেক্ষাপটে এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। অতীতেও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ও ধনকুবের কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করে নানা রকম শাস্তির মুখে পড়েছেন।

চীন সরকারের রোষানলের শিকার যেসব প্রভাবশালী

প্রথমেই বলা যাক, ধনাঢ্য আবাসন ব্যবসায়ী রেন ঝিকিয়াং এর কথা। গতবছরের মার্চ থেকে তার হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। তার আগে অবশ্য ৬৯ বছরের এ ব্যবসায়ী শাসক সমাজতান্ত্রিক দলের বিরুদ্ধে করোনা মহামারী মোকাবিলায় অব্যস্থাপনার মতো গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন। প্রভাবশালী মার্কিন দৈনিক দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, বেইজিং পরবর্তীতে রেনকে ১৮ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে।

অবশ্য এজন্য তিনি একা নন। মহামারী মোকাবিলা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কারাভোগ করেছেন আরও অনেকেই। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন; মানবাধিকার আইনজীবী ঝ্যাং শুয়েজং।

২০১৭ সালে সম্পদ ব্যবস্থাপক শিয়াও জিয়ানহুয়া হংকং- এর একটি হোটেল থেকে অপহৃত হন। তারপর তিনি প্রশাসনের বন্দি হন, সেকথা জানা যায়। এবং তার কোম্পানি টুমরো গ্রুপের একটি বড় অংশ রাষ্ট্র বাজেয়াপ্ত করে।

গত বছরের জুলাইয়ে টাইমস জানায়, চীনা কর্তৃপক্ষ শিয়াও এবং অন্যকিছু ধনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় পুঁজিবাজারে সম্ভাব্য নতুন বিনিয়োগকারীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া অভিযোগ এনেছেন।

২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স থেকে চীন বেড়াতে এসে গায়েব হয়ে যান আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা- ইন্টারপোলের সাবেক প্রধান মেং হংওয়েই।

বিবিসি সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারিতে তাকে ঘুষগ্রহণের দায়ে সাড়ে ১৩ বছরের জেল দিয়েছে চীনের একটি আদালত।

স্বামী নিরুদ্দেশের খবর প্রথম গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন মেং এর স্ত্রী। তিনি ২০১৮ সালে গার্ডিয়ানকে জানান, তার স্বামী নির্দোষ এবং রাজনৈতিক কারণে তাকে আটক করা হয়েছে। সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *