ডেমোক্র্যাট জো বাইডেনের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের আগে ইরানের বিরুদ্ধে বেপরোয়া হামলা চালানে পারেন বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন সপ্তাহের কম সময় দায়িত্বে থাকবেন ট্রাম্প। এই স্বল্প সময়ের মধ্যেই তার নির্দেশে ইরানে ভয়াবহ হামলা চালানো হতে পারে। ইরানি জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যার এক বছর পূর্তিতে ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যকার উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে এমন আশঙ্কার কথা উঠে এলো।

ইরানের কুদস ফোর্সের সাবেক কমান্ডার জেনারেল কাসেম সোলাইমানির হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্তিকে সামনে রেখে সম্প্রতি ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। গত বুধবার পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম দুইটি মার্কিন বি-৫২ বোমারু বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে উড়ে গিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে টহল দিয়েছে। টহল শেষে এটি আবার নিজ দেশে ফিরে গেছে। ওয়াশিংটন বলছে, ইরানকে সতর্ক করতেই তাদের এ পদক্ষেপ। গত সপ্তাহে পরমাণু শক্তিচালিত একটি মার্কিন সাবমেরিনও পারস্য উপসাগরে অনুপ্রবেশ করে।

এক সাক্ষাৎকারে ইরান ও মার্কিন পররাষ্ট্রনীত বিশেষজ্ঞ এবং নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্যাডিজের সহকারী পরিচালক ড্যানি পোস্টেল বলেন, শেষ সময়ে ট্রাম্প আহত ও কোণঠাসা। ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান মিত্রদের বিশেষ করে ইসরায়েল ও সৌদি আরবের চাপের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প। তার আর কিছু সপ্তাহ সময় আছে এবং আমরা জানি তিনি ‘অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ’ নেওয়া পছন্দ করেন।

পোস্টেল আরও বলেন, এটি সম্ভবত তার সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ঘটনা হতে পারে।

জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যার বদলা নিতে কঠোর হুঁশিয়ারি জানাচ্ছে ইরান। শনিবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেন, ইরাক থেকে নতুন গোয়েন্দা তথ্যে জানা গেছে, ইরানের বিরুদ্ধে হামলার চালানোর জন্য মিথ্যা ও বানোয়াট অজুহাত খুঁজছেন ট্রাম্প।

মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশ্য করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাকে পাতানো ফাঁদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। আগুন নিয়ে যে কোনও খেলার কঠোর জবাব দেওয়া হবে, বিশেষ করে আপনার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বিরুদ্ধে জবাব হবে ভয়ঙ্কর।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার আরেক টুইটে জারিফ বলেন, ‘ইরান যুদ্ধ না চাইলেও নিজের জনগণ, নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করতে এক মুহূর্তও দেরি করবে না।’

ওয়াশিংটনভিত্তিক কুইন্সি ইন্সটিটিউট ফর রেসপন্সিবল স্টেটক্রাফট নামের থিংক-ট্যাংক সংস্থার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ সমর্থক এবং ইসরায়েল সমর্থকরা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে ঠেলে দিতে পারেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরুকেই বেছে নিতে পারেন এবং এতে রিপাবলিকান দলে তার অবস্থান শক্তিশালী হবে।

আটলান্টিক কাউন্সিলের ফিউচার অব ইরান ইনিশিয়েটিভ’র পরিচালক বারবারা স্লাভিন মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসন ও ইসরায়েল মধ্যপাচ্যে তাদের সামরিক সরঞ্জাম আগের চেয়ে বেশি মজুদ করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের বৃহৎ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার হুমকি রয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগনীতির ব্যর্থতায় এমন সংঘাত হবে ভয়াবহ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *