ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে দরপতন ঘটেছে। হঠাৎ পাইকারি বাজারে বিক্রি ও দাম কমতে শুরু করেছে। বেশি দামে কেনা বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ বর্তমানে ব্যবসায়ীদের কাছে মজুত রয়েছে। ফলে এই মুহূর্তে ভারতীয় পেঁয়াজ বাজারে আসলে বাড়তি দামে কেনা পেঁয়াজ নিয়ে লোকসানে পড়তে হবে।

ব্যবসায়ীরা জানান, এখন দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন মৌসুম। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দেশের কৃষকরা পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পাবে না। কৃষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত বিদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। দেশের পেঁয়াজের বাজার ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল। এবার সেপ্টেম্বরে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর দেশে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫০ টাকার বেশি বিক্রি হয়েছে। পরে সরকার পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক হ্রাস করার পর ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু করে। ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত ছোট আকৃতির লাল বর্ণের পেঁয়াজের গুরুত্ব বেশি থাকে ক্রেতাদের কাছে। গতকাল খাতুনগঞ্জে দেশীয় পেঁয়াজ কেজি ৪০ টাকা, মিশরীয় ৪০ টাকা, তুরস্ক ৫৫/৬০ টাকা, নেদারল্যান্ড ২৫/২৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

হামিদুল্লা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘দাম কমে যাওয়ায় আমরা এমনিতে লোকসানে পেঁয়াজ বিক্রি করছি। ব্যবসায়ীদের কাছেও বাড়তি দামে কেনা প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। তাই অন্তত আরো এক মাস পর ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’ পাইকারি ব্যবসায়ী সোলায়মান বাদশা বলেন, আমাদের বিপদের সময় ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে। জরুরি মুহূর্তে দেশের চাহিদা মেটাতে ব্যবসায়ীরা অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি করেছে। দেশের কৃষকরা তাদের উত্পাদিত পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য পাবে না। সরকারকে কৃষকদের কথা ভাবা উচিত।’

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র জানায়, গত ৬ মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ২ লাখ ৯ হাজার ৩৪ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীরা আরপি নিয়েছে। তার বিপরীতে এই পর্যন্ত ১ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ বন্দর থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। মিয়ানমার, পাকিস্তান, চীন, মিশর, তুরস্ক, নেদারল্যান্ড, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আলজেরিয়া, ইরান ও রাশিয়াসহ আরো কয়েকটি দেশ থেকে এসব পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম কার্যালয় জানায়, চট্টগ্রামে এবার প্রচুর পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। পেঁয়াজ উত্পাদনে চট্টগ্রামে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। গত বছর চট্টগ্রামে ৩০ হেক্টর জমিতে এবং এবার ৪৮ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। চট্টগ্রামের উপপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে চট্টগ্রামে কিছুটা দেরিতে পেঁয়াজের চাষ শুরু হয়। পেঁয়াজের চাষাবাদে কৃষকদের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা উত্সাহিত করেছি। ফলে এবার চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার চেষে বেশি পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে প্রায় আট টন করে পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়।’

এদিকে হাকিমপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, আগামী ২ জানুয়ারি থেকে দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার হিলি স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গত সোমবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক বাণিজ্য শাখার মহাপরিচালক অমিত ইয়াদব কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানানো হয়। হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করব কি না তা আজ-কালের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *