নিউজ ডেস্ক: অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীকে কাঁদিয়ে ২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর না ফেরার দেশে চলে যান ব্যান্ডসংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্র আইয়ুব বাচ্চু। রোববার (১৮ অক্টোবর) কিংবদন্তি এই ব্যান্ড তারকার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী।

আইয়ুব বাচ্চুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে সংগীতপ্রেমী, ভক্ত-অনুরাগীদের দোয়া-প্রার্থনা ও ভালোবাসায় ভরে ওঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। তাকে উৎসর্গ করে সংগীতের আরেক জাদুকর প্রিন্স মাহমুদ ফেসবুকে প্রকাশ করলেন ‘আলো’ শিরোনামের নতুনের ডেমো ভার্সন। তার কথা-সুরে গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন আভাস ব্যান্ডের ভোকাল তানজির তুহীন।

এদিকে, সরকারি উদ্যোগে সংরক্ষিত হচ্ছে আইয়ুব বাচ্চুর গান। তিনিই প্রথম বাংলাদেশি সংগীত তারকা, যার গান সরকারি ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। দারুণ এই খরবটি আইয়ুব বাচ্চুর পরিবার ও তার ভক্ত-অনুরাগীদের জন্য ভীষণ আনন্দের। আর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কপিরাইট অফিসের রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরী।

ইতোমধ্যে ২৭২টি গান সংরক্ষিত আছে বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের উদ্যোগে আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে খোলা ওয়েবসাইটে। পরবর্তীতে তার নামে কপিরাইট করা গানগুলোই এখানে ছাড়া হবে। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি আইয়ুব বাচ্চুর নামে খোলা হয়েছে ইউটিউব চ্যানেলও। সংগীতের মহান এই তারকার প্রতি সম্মান জানিয়ে এই প্রথম কপিরাইট অফিসের উদ্যোগে তার নানা স্মৃতি, গান রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ইউটিউবে গিয়ে আইয়ুব বাচ্চুর যত গান এবং ওয়েবসাইটে ঢুকে তার সম্পর্কে জানা যাবে অনেক তথ্য।

আইয়ুব বাচ্চু মৃত্যুর আগে সুদীর্ঘ ২৫ বছর কাটিয়েছেন নিজ হাতে গড়া এলআরবি’র সঙ্গে। ১৯৯১ সালের ৫ এপ্রিল সোলস ছেড়ে এলআরবি গড়ে তুলেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। শুরুতে ব্যান্ডটির নাম রাখা হয়েছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড (এলআরবি)। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে এই নাম বদল করে রাখা হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ (এলআরবি)। শত প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে সংগীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন আইয়ুব বাচ্চু। পিতা-মাতার আদরের সন্তান হলেও তার সংগীত চর্চায় ছিল ব্যাপক বাধা। সংগীতপ্রেমী বাচ্চু পারিবারিক নিষেধ উপেক্ষা করেই নিজের স্বপ্নকে জয় করেছেন। তবে জয়ের নেপথ্যে রয়েছে কঠিন-করুণ গল্প।

১৯৮৩ সালে মাত্র ৬০০ টাকা পকেটে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। কিন্তু অদম্য স্পৃহা, কঠোর পরিশ্রম ও সাধনায় তিনি অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীর আইয়ুব বাচ্চু হয়ে উঠেন। এককথায় দীর্ঘদিন তিনিই ছিলেন দেশীয় ব্যান্ড সংগীতের অপ্রতিদ্বন্দ্বী তারকা। কণ্ঠ-সুর আর গিটারের মন্ত্রণায় মাতোয়ারা করে রেখেছেন গানপ্রেমিদের। আর ভূষিত হয়েছিলেন গানের ‘বস’ খেতাবে। তিনি আজ নেই। হয়ে গেলো দুই বছর। কিন্তু মেনে নিতে পারছে না কেউই। বয়ে বেড়াচ্ছে তাকে হারানোর অসহনীয় শোক।

আইয়ুব বাচ্চু মূলত রকস্টার। কিন্তু ব্যান্ড কিংবা রক তারকা হলেও অন্যান্য ঘরানার গানেও তিনি পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষ করে আধুনিক এবং লোকগানে তিনি দক্ষতার প্রমাণ রেখে গেছেন। নিজের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অন্যান্য শিল্পীদের জন্য আধুনিক, লোক এবং ক্লাসিক্যাল ঘরানার গানও তৈরি করেছেন তিনি।

জিমি হেন্ডরিক্স, জো স্যাটরিনি, স্টিভ মুর তার গানের আদর্শ ছিলেন বলে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে আইয়ুব বাচ্চু জানিয়েছেন। সুখের চেয়ে বেদনার চিত্রই গিটার জাদুকরের গানে বেশি ফুঠে উঠেছে। যেনো গানের গল্পেই লুকানো তার জীবন। জীবনের এপাশ-ওপাশ। হয়তো এ কারণে তার হতাশার গানগুলো চোখ বুজেই লুফে নিয়েছেন শ্রোতারা।

আইয়ুব বাচ্চুর অধিক জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘সেই তুমি’, ‘কষ্ট’, ‘নীল বেদনা’, ‘আসলে কেউ সুখী নয়’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘সেই রুপালী গিটার ফেলে’, ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে’ ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ফেরারী মন’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

অসংখ্য জনপ্রিয় অ্যালবাম ও গানের তারকা আইয়ুব বাচ্চু ছিলেন ভীষণ অভিমানীও। ভেতরে ভেতরে কষ্ট-অভিমান পুষে রাখতেন। গিটারের ঝংকারে সেই অভিমান-কষ্ট ছড়িয়ে দিতেন শিশুর মতো কেঁদে কেঁদে- তার দীর্ঘদিনের সঙ্গীরা বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এ কথা সাবলীলভাবেই বলেছেন।

১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্রগ্রাম শহরের এনায়েত বাজারে জন্মগ্রহণ করেন আইয়ুব বাচ্চু। তার বাবার মোহাম্মদ ইসহাক ও মা নূরজাহান বেগম। সংসার জীবনে তিনি স্ত্রী, ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব নামে এক কন্যা ও আহনাফ তাজওয়ার আইয়ুব নামে এক পুত্র সন্তান রেখে গেছেন।

২০১৮ সালের ১৮ অক্টোবর মাত্র ৫৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশীয় ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম দিকপাল, গিটার জাদুকর-এলআরবি’র প্রতিষ্ঠাতা আইয়ুব বাচ্চু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *