চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড় এলাকায় পুলিশের অভিযানে মা-বোনকে লাঞ্চিত করায় কিশোর সালমান ইসলাম মারুফের আত্মহত্যার ঘটনায় ডবলমুরিং থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হেলাল উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। বিভাগীয় মামলায় দোষী প্রমাণিত হওয়ায় তাকে চাকরিচ্যুত করার এই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (সদর) আমীর জাফর জানিয়েছেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তদন্ত কমিটি হেলালকে অভিযুক্ত করায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছিল। সে মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এখন চাকরিচ্যুত করা হলো।’
সালমান ইসলাম মারুফ স্থানীয় একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। পড়ার খরচ চালাতে স্থানীয় একটি মার্কেটে বিক্রয়কর্মী হিসেবেও কাজ করত সে। চলতি বছরের ১৬ জুলাই রাতে ডবলমুরিং থানার বাদামতলীর বড় মসজিদ গলিতে তার বাসায় অভিযানে যান পুলিশ সদস্য এসআই হেলাল।
মারুফের স্বজনদের ভাষ্য, কিছুদিন আগে কিশোর মারুফের বাইসাইকেল ও মোবাইল ফোন চুরি হয়ে যায়। এরপর গত ১৬ জুলাই সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি তাদের বাসায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলো দেখে মারুফ ‘চোর’ সন্দেহে ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলে। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের লোকজন জড়ো হয় ও আগন্তুককে মারধর করে। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে সাদা পোশাকে উপস্থিত হন ডবলমুরিং থানার এসআই হেলাল উদ্দিন। তিনি মারধরের শিকার ব্যক্তিকে তার সোর্স দাবি করেন। একইসঙ্গে মারুফ মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এমন অভিযোগ তুলে তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যেতে চান। তখন মারুফের মা-বোনের সঙ্গে এসআই মারুফ ও তার সোর্সদের কথা কাটাকাটি ও ধস্তাধস্তি হয়। এলাকাবাসীও পুলিশকে বাধা দেয়। এমন বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে মারুফ গা ঢাকা দেয়। পরে মারুফকে না পেয়ে এসআই হেলাল তার মা-বোনকে লাঞ্ছিত করেন এবং জোর করে থানায় নিয়ে যান। সেই অপমান সহ্য করতে না পেরে মারুফ আত্মহত্যা করেছে।
তবে পুলিশের দাবি, মারুফের মা ও বোনকে থানায় নেওয়া হয়নি। পুলিশের ভয়ে তার বোন অজ্ঞান হয়ে গেলে তার বোনকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এসময় তার মাকে তারা গাড়িতে তুলে নেয়।
এ ঘটনায় স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে সেই রাতে এসআই হেলালকে প্রত্যাহার করা হয়। আর চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) মনজুর মোরশেদকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ঘটনার চার দিন পর ২০ জুলাই তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে বলা হয়, এসআই হেলাল সাদা পোশাকে অভিযানে গিয়ে মারুফের মা-বোনকে মারধর এবং ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর হুমকি দিয়েছিলের বলে প্রমাণ মিলেছে তদন্তে। এসআই হেলাল থানায় অবহিত না করেই অভিযানে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করার পাশাপাশি তাকে বরখাস্তের সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি।
এদিকে ২৭ জুলাই মারুফের মা বাদী হয়ে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে এসআই হেলালের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আদালতে। আর পুলিশের বিভাগীয় মামলার প্রতিবেদনে এসআই হেলালকে বিধি অনুযায়ী ‘গুরুদণ্ড’ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়।