নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের ঘটনা বর্বরতার চরমসীমা। এটা জঘন্য অপরাধ। আইন অনুযায়ী অপরাধীরা সর্বোচ্চ শাস্তি পাবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। অপরাধীরা যেন কোনোভাবে ছাড় না পায় সে জন্য নির্ভুল তদন্ত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশে বিচারহীনতার কোনো সংস্কৃতি নেই। সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চুপচাপ বসে নেই। একের পর এক অপরাধীদের বিচার হচ্ছে।
তিনি বলেন, নোয়াখালীর ঘটনায় দুইজন বাদে সবাইকে ধরে ফেলেছি। এখানে কোনো রকমের গাফিলতি নিরাপত্তাবাহিনী দেখায়নি। খুব শিগগিরই আমরা তাদের আইনের মুখোমুখি করব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যথাযথভাবে কাজ করছে বলেই দেশে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পেরেছি। এই যে ঘটনাগুলো ঘটছে, যেমন-ধর্ষণ, পর্নোগ্রাফির মতো করে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, নারীর ওপর যেভাবে নির্যাতন হয়েছে…এটা আমি বলব যে, এ ধরনের জঘন্য অপরাধ যারা করেন অবশ্যই আইনানুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি তারা পাবে। আমরা সেই কাজটিই করব যাতে করে একটা সুন্দর তদন্ত রিপোর্ট আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী দিতে পারেন। সেজন্য আমাদের প্রচেষ্টা থাকবে।’
সিলেট এমসি কলেজে যে ঘটনাটি ঘটেছে, এটা দুঃখজনক ঘটনা বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনার মধ্যে যারা লিপ্ত হয়েছেন তারা জঘন্য অপরাধ করেছেন। তাদের সে শাস্তি পেতে হবে। সেজন্য আমরা একটা নির্ভুল তদন্ত রিপোর্ট দেব যাতে সেখানে তারা শাস্তি পান। আর নোয়াখালীতে যেটা ঘটেছে সেটা বর্বরতার চরমসীমায় আমরা দেখলাম। একজন বিবেকবান মানুষ এ ধরনের কাজ করতে পারে বলে আমার কাছে তা মনে হয় না। এমসি কলেজের সব কয়জনকে ধরে ফেলেছি। এদেরকেও দুইজন বাদে আমরা সব কয়টিকে ধরে ফেলেছি।’
আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমি সবসময় বলেছি, এ ধরনের ঘটনার পরপর আমরা অপরাধীদের শনাক্ত করছি এবং ধরছি। এখানে কোনো রকমের শৈথিল্য বা গাফিলতি নিরাপত্তাবাহিনী দেখায়নি। সব জায়গায় নিরাপত্তাবাহিনী যথাযথভাবে কাজ করছে। আমরা খুব শিগগিরই তাদের আইনের মুখোমুখি করব যাতে সর্বোচ্চ শাস্তিটি পায়। সেজন্য সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
‘দেশে আইনের শাসনের জন্যই কি এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে’-এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে আইনের শাসন আছে বলেই আমরা অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হয়েছি এবং আইনানুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিচারকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এ রকম যদি হতো আমরা চুপচাপ ও আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী চুপচাপ বসে আছে, তাহলে বলতে পারতেন আইনের শাসন নেই। স্থানীয় প্রশাসন, ইউএনও, ডিসি, এসপি সবাই একসঙ্গে কাজ করছেন। এই সমাজবিরোধীরা (ধর্ষক) মানুষ নয় অমানুষ। আমি বলব, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ ও সতর্ক রয়েছে। এজন্যই অপরাধীদের ধরতে ও আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারছি।’
‘নোয়াখালীর ঘটনা এক মাস আগের। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন কী করেছে-’সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটলে সাধারণত যারা ভিকটিম তারা চাপিয়ে লুকিয়ে যান, প্রকাশ করতে চান না। এই জায়গায় সে রকম হয়েছে কি-না আমি জানি না। যখনই আমাদের নজরে এসেছে তখন থেকেই আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী কাজ শুরু করেছে এবং দ্রুততার সঙ্গে তাদেরকে ধরে ফেলেছে।’
‘বিচারহীনতার কারণে এ ধরনের ঘটনা বেশি হচ্ছে কি-না’-জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘বিচারতো সব জায়গায় হচ্ছে। আমরা অনেক অভিযোগ পাচ্ছি। সেগুলো আমলে নিয়ে আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী তদন্ত করে তাদেরকে ধরছে ও ব্যবস্থা নিচ্ছে। যেখানেই অভিযোগের সত্যতা পাচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী কাউকে বাদ দিচ্ছে না, সবাইকে ধরছে।’
উল্লেখ্য, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের একলাশপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কয়েকজন যুবক একজন নারীকে বিবস্ত্র করে মারধর করছে। তাদের একজন পা দিয়ে ওই নারীর মুখ চেপে ধরেছে। বারবার আকুতি জানানোর পরও তার ওপর নির্যাতন থামেনি।
গত ২ সেপ্টেম্বর এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার ৩২ দিন পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর রোববার (৪ অক্টোবর) বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২ সেপ্টেম্বর রাত ৯টার দিকে একলাশপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের খালপাড় এলাকার নূর ইসলাম মিয়ার বাড়িতে গৃহবধূর বসতঘরে ঢুকে তার স্বামীকে পাশের কক্ষে বেঁধে রাখে স্থানীয় বাদল ও তার সহযোগীরা।
এরপর গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা করে তারা। এ সময় গৃহবধূ বাধা দিলে তাকে বিবস্ত্র করে বেধড়ক মারধর করে তারা মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে।