ছোট থেকে দেখেছেন, গ্রামের সংখ্যালঘু মুসলিমদের পাড়ায় কারও মৃত্যু হলে শেষকৃত্য করতে যেতে হয় পাশের গ্রামে। গ্রামে কবরস্থান না থাকা নিয়ে আক্ষেপ করতে দেখেছেন প্রতিবেশী মুসলিমদের। পূর্ব বর্ধমানের তালিতে সে মুশকিল আসানে পারিবারিক জমি কবরস্থানের জন্য দান করলেন বৃদ্ধ কালীকৃষ্ণ মুখোপাধ্যায়।

বর্ধমান ১ ব্লকের ওই গ্রামে পাশাপাশি বাস হিন্দু-মুসলমানের। গ্রামের সাধপুকুরের পাশে বেশ কিছুটা জমি রয়েছে ডাঙাপাড়ার বাসিন্দা কালীকৃষ্ণবাবুদের। কয়েকবছর আগে তা থেকেই ১ একর ৬ শতক জমি দান করার কথা জানিয়েছিলেন ৮৮ বছরের ওই বৃদ্ধ। সম্প্রতি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে সে জমি কবরস্থানের জন্য নথিভুক্ত হয়েছে। দিন পাঁচেক আগে কবরস্থানে ঢোকার মুখে নমাজ পড়ার জায়গাও বাঁধানো হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী কালীকৃষ্ণবাবুর কথায়, আমার জায়গায় গ্রামের মানুষের শেষকৃত্য হচ্ছে, ভেবে ভাল লাগছে। জমি দেওয়ার পরে, তারা আমাকে মিষ্টি দিয়ে কৃতজ্ঞতা জানাতে এসেছিলেন। বলেছি, কর্তব্য করেছি মাত্র।

এলাকাবাসীর প্রয়োজনে জমি দান তিনি এর আগেও করেছেন। গ্রামের পূর্ব ও দক্ষিণপাড়ার মধ্যে যাতায়াতে সুবিধায় দু’টি পুকুরের মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরির জন্য জমি দরকার ছিল। নিজেদের সে জমি রাস্তার জন্য দিয়েছিলেন গ্রামে ‘কাকাবাবু’ বলে পরিচিত কালীকৃষ্ণ।

কবরস্থানের জমি পেয়ে খুশি শেখ মইনুদ্দিন, শেখ আলি আরশাদদের বক্তব্য, কাকাবাবু কত বড় উপকার করেছেন, বলে বোঝানো যাবে না। হিন্দু-মুসলিম যে আলাদা নয়, তা তাকে দেখে শেখা যায়।

স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জেম শেখ সরিফউদ্দিন বলেন, সামান্য কিছুটা জায়গা রেজিস্ট্রি হতে বাকি আছে। কালীকৃষ্ণবাবু বারবার তা সারতে বলছেন। তার মতো মানুষ মেলা ভার।

প্রতিবেশী সমীর ভট্টাচার্যের কথায়, তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। কালীকৃষ্ণবাবুর স্ত্রী মারা গিয়েছেন। চার ছেলের পরিবারের সঙ্গে থাকেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *