চার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের স্ত্রী চুমকি কারণকে খুঁজছে দুদক। ওসি প্রদীপ এ মামলায় দ্বিতীয় আসামি। এ মামলায় ওসি প্রদীপকে গ্রেপ্তার দেখাতে এরই মধ্যে আদালতে আবেদন করেছে দুদক। আর চুমকি কারণকে গ্রেপ্তারের জন্য খুঁজে বেড়াচ্ছে সংস্থাটি।

গত ২৩ আগস্ট প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের বিরুদ্ধে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ১-এ বাদী হয়ে মামলাটি করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দীন। দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬ (২) ও ২৭ (১), মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২-এর ৪ (২) ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দ-বিধির ১০৯ ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়।

মামলার এজাহারে চুমকি কারণকে এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তিনি স্বামী ওসি প্রদীপ কুমার দাশের ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরপূর্বক একে অপরের সহযোগিতায় ভোগদখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, দুদকের করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য ২৭ আগস্ট চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালতে

আবেদন করা হয়েছে। আদালত আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর আবেদনের ওপর শুনানির দিন ধার্য করেছেন। তিনি বলেন, মামলার প্রধান আসামি চুমকি কারণ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতে পারে এমন আশঙ্কাও করছে দুদক। এ কারণে তার দেশত্যাগ ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে সোমবার পুলিশ সদর দপ্তরেও চিঠি পাঠানো হয়েছে।

দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দীন বলেন, ওসি প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারণের সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। ওসি প্রদীপ সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছেন। সেই বিবরণী যাচাই-বাছাই চলছে। এ মামলা শুধু চুমকির সম্পদ বিবরণীর ভিত্তিতে করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে অভিযোগ আনা হয়, চুমকি কারণ দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। এ ছাড়া তিন কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়েছে।

উল্লেখ্য, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এখন কারাগারে রয়েছেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে দুদকের করা মামলায় ওসি প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণের খোঁজ নেই। মামলাটিতে ফেঁসে যাওয়ার ভয়ে তিনি আত্মগোপনে গেছেন নাকি নজরদারিতে আছেন সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

১৫ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে ওসি প্রদীপ

কক্সবাজার থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় টেকনাফের সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে চার দফায় ১৫ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে তাকে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না ফারাহর আদালতে হাজির করে র‌্যাব। পরে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।

এদিকে মেজর (অব.) সিনহা হত্যার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষীকে তৃতীয়বারের মতো তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে একই আদালত। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ডের আবেদন করে র‌্যাব। শুনানি শেষে আদালত প্রত্যককে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেন। আদালত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রিমান্ডপ্রাপ্তরা হলেন- টেকনাফের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়ার নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দীন ও মোহাম্মদ আইয়াস। এর আগে গত ২০ আগস্ট প্রথম দফায় সাত দিন ও ২৫ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদালত। সিনহা হত্যা ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে র‌্যাবের একটি দল টেকনাফের মারিশবুনিয়া এলাকা থেকে গত ৯ আগস্ট পুলিশের দায়ের করা মামলার এ সাক্ষীদের গ্রেপ্তার করে।

সিনহা হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) খায়রুল ইসলাম জানান, গ্রেপ্তার টেকনাফ থানার সাবেক (বরখাস্ত) ওসি প্রদীপ কুমারকে ১৫ দিন রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন। আরও তদন্তের স্বার্থে এখন তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না। আমরা সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করছি। মঙ্গলবার ছিল চতুর্থ দফায় এক দিনের রিমান্ডের শেষ দিন। তাই আমরা তাকে আদালতের কাছে সোপর্দ করেছি। আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকার নীলিমা রিসোর্টে ফিরছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। পথে টেকনাফের শামলাপুর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *