নিউজ ডেস্ক: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের রঘুনাথপুর গ্রামে পাট দিয়ে জুতা তৈরি করছে অ্যামাস ফুটওয়্যারলিমিডেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পাটের তৈরি পরিবেশবান্ধব এই জুতা রফতানি হচ্ছে ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। এসব জুতা তৈরির কাজ করছেন স্থানীয় প্রায় ৪শ নারী। এলাকায় কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ায় অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে এসকল নারীরা তাদের সাংসারিক সচ্ছলতায় বিশেষ অবদান রাখছেন।

প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবাইদুল হক রাসেল জানান, পড়াশোনা শেষ করে তিনি নিজে কিছু করতে চেয়েছিলেন। এজন্য ঢাকায় প্রথম গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন। এরপর ২০১৬ সালের দিকে এলাকার মানুষের জন্য কিছু করার আগ্রহ নিয়ে এবং দেশের পাট শিল্পকে বিশ্বে তুলে ধরার কথা চিন্তা করেন। এরপর কালীগঞ্জ উপজেলার যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের রঘুনাথপুর বাজারের পাশে ৪৪ শতক জমি কিনে পাটের জুতা তৈরির কারখানা তৈরি করেন। প্রথমে দেশ এবং বিদেশ থেকে কিছু মেশিন সংগ্রহ করে কাজ শুরু করেন। এরপর বিভিন্ন পাটের কারখানা থেকে কাঁচামাল ক্রয় করে এনে এখানে পাটের জুতা তৈরি শুরু করেন।

তিনি আরও জানান, তার উৎপাদিত পাটের জুতা ইউরোপ-আমেরিকাসহ চিন ও জাপানে রফতানি করা হচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে এখানকার উৎপাদিত পাটের জুতা দেশের বাইরে রফতানি করা হচ্ছে।

এই তরুণ উদ্যোক্তা জানান, তার কারখানায় ৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। এছাড়া এলাকার প্রায় ৪শ নারী এখান থেকে উপকরণ নিয়ে গিয়ে বাড়িতে বসে কাজ করেন। তাদের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ দেয়া হয়। প্রতি জোড়া জুতায় জন্য তারা বিল পেয়ে থাকেন। একেক জন নারী বাড়ির অন্য কাজের পাশাপাশি হাতে এই জুতা তৈরি করে মাসে ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করেন। এখানকার তৈরি জুতা ২ থেকে ১৫ ডলার পর্যন্ত দামে বিক্রি করেন। ইতোমধ্যে কারখানায় উৎপাদিত পাটের জুতা দিয়ে প্যারিসে কয়েকটি ফ্যাশনশোতে ব্যবহৃত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, নিজেই এই জুতার মার্কেটিং করেন ওবাইদুল হক রাসেল। নিজেই বায়ারদের সাথে কথা বলেন এবং রফতানি করেন। উন্নত বিশ্বে পাটের জুতার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

শেফালী খাতুন নামের এক কর্মী জানান, তার স্বামী ভ্যানচালক। ভ্যান চালিয়ে যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার খুব একটা ভাল চলতো না। সব সময় সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকতো। কোনোভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে পারছিলেন না। এমন সময় জানতে পারেন গ্রামে একটি পাটের জুতা তৈরি করার কারখানা হয়েছে। এখানে নারীদের ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরি দিচ্ছে। এটা জানতে পেরে জুতা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করা শুরু করেন। এখন এ জুতা তৈরি করে যা রোজগার করে তাতে তার সংসার ভালোভাবে চলে যাচ্ছে।

অ্যামাস ফুটওয়্যার লিমিটেডের ম্যানেজার মাসুদ রানা জানান, এই কারখানায় ৬টি ধাপে একটি জুতা তৈরি করা হয়। সোল্ড তৈরি হয় রাবার দিয়ে। জুতার বাকি অংশ তৈরি হয় পাট দিয়ে। আর এই কাজগুলো সম্পূর্ণ হাতের মাধ্যমে করা হয়। প্রতিমাসে তাদের কারখানা থেকে ৩০ থেকে ৪০ হাজার জুতা রফতানি করা হচ্ছে। এই জুতার বৈশিষ্ট্য হলো ব্যবহারের পরে ফেলে রাখলে এটি মাটির সাথে মিশে যায়। ফলে এটি সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *