কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসলই ছিল পাট। এই পাট সুনাম কুড়িয়েছিল বিশ্বজুড়ে; কারণ বিশ্বের আর কোথাও পাট ফলানোর মতো উর্বর ও উপযুক্ত মাটি প্রকৃতি দেয়নি। এটি আমাদের গর্বের, আমাদের একক সম্পদ। চলতি বছর ফরিদপুরসহ দেশের ৭ জেলায় সোনালী আঁশ খ্যাত পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে।

বাংলাদেশের সব জেলাতেই কম-বেশি পাটখেতের দেখা মেলে। তবে কিছু কিছু জেলায় পাট বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়। বিশেষ করে ফরিদপুরকে পাট উৎপাদনের জন্যই বিখ্যাত বলা হয়। এছাড়া যশোর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল, কুষ্টিয়া ও জামালপুর জেলার সর্বত্র দেখা মেলে পাটখেতের।

কৃষি তথ্যসেবা সূত্রে জানা গেছে, ৪০ লাখ চাষি পাট চাষ করেন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চার কোটি মানুষের জীবিকা পাটকে কেন্দ্র করে। প্রতি বছর মৌসুমে গড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা পান কৃষক।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, গত বছর দেশে ৬৮ লাখ বেল পাট উৎপন্ন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ৮২ লাখ বেল পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মোট ৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৯৪ হেক্টর জমিতে এবার পাটের আবাদ হয়েছে।

সোনালি আঁশে ফরিদপুর এখনো সেরা

স্বাধীনতার আগে বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট পাটের সিংহভাগ ফলনই হতো বৃহত্তর ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে। তবে দেশের সর্বোৎকৃষ্ট মানের পাট হিসেবে বৃহত্তর ফরিদপুরের পাটই ছিল সারা বিশ্বে সমাদৃত। সে সময়ের পরিসংখ্যান কৃষি বিভাগের কাছে না থাকলেও স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশেও মোট পাটের আবাদে এগিয়ে রয়েছে ফরিদপুর অঞ্চল।

ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী, নগরকান্দা, সালথা, মধুখালী, ভাঙ্গাসহ ৯টি উপজেলায়ই উৎকৃষ্ট মানের তোষা পাট আবাদের ঐতিহ্য রয়েছে। ঢাকার খামার বাড়ির সূত্রমতে, দেশের সেরা মানের পাট উৎপাদনকারী জেলার স্থানটি এখনো দখল করে আছে ফরিদপুর।

ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, প্রতি বছরই ফরিদপুরে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে। ২০১৫-১৬ মৌসুমে এক লাখ ৮৭ হাজার ৫৪ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, কিন্তু পাট চাষ হয় দুই লাখ চার হাজার ১৫৪ হেক্টর জমিতে। ২০১৬-১৭ মৌসুমে এক লাখ ৯০ হাজার ১৫৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তবে পাট চাষ হয় দুই লাখ ১৬ হাজার ৫১ হেক্টর জমিতে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে দুই লাখ ১৬ হাজার ১৪৯ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এবার সেখানে এবার ৮৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে হয়েছিল ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে।

অন্যান্য জেলায় পাট চাষ

ফরিদপুরের পাশের জেলা রাজবাড়ীতে এবার ৪৭ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক গোপাল কৃষ্ণ দাশ জানান, এই জেলায় পাট কাটা শুরু হয়েছে। তবে হাট-বাজারে এখনও বিক্রি শুরু হয়নি।

মানিকগঞ্জে এবার ৩৬ হাজার ১৬ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গতবার হয়েছিল ৩৪ হেক্টর জমিতে। গতবার দাম বেশি পাওয়ায় এবার কৃষক বেশি জমিতে পাট চাষ করেছেন বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাদের। এই জেলায় পাট উঠতে শুরু করেছে। বাজারে প্রতি মণ পাট ১৮০০ টাকা থেকে ১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গতবার বিক্রি হয়েছিল ২২০০ টাকা পর্যন্ত।

দেশে উৎপাদিত পাটের শতকরা ৭০ ভাগ দেশে ব্যবহার হয়, বাকি ৩০ ভাগ কাঁচা পাট ও পাটজাত দ্রব্য হিসেবে রফতানি হয়। পাটের আঁশ থেকে পাটের সুতা, ব্যাগ, বস্তা, পর্দা, কার্পেট ইত্যাদি তৈরি হচ্ছে। পাটকাঠি থেকে পার্টিকেল বোর্ড, প্রিন্টারের কালি তৈরি হচ্ছে। সর্বশেষ পাট থেকে উৎপাদিত পলিথিনের বিকল্প পচনশীল ব্যাগ বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *