এতকাল ছিল ফাইনাল না খেলার আক্ষেপ।সেই আক্ষেপ ঘুচেছে ৪৮ ঘণ্টা আগেই। সেমির যুদ্ধে আফগানদের ৭ উইকেটে হারানোর মধ্য দিয়ে। ভক্ত ও সমর্থকদের আশা ছিল,যাক এবার বুঝি ট্রফি জিততে না পারার হতাশাটা কাটবে।‘ফাইনালে পারে না বাংলাদেশ।হারে বারবার,বহুবার প্রমাণ হয়েছে এর আগে। কোনো টুর্নামেন্টে ফাইনালের আগে যতই ভালো খেলুক না কেন, ফাইনালে গিয়ে কেন যেন আর পেরে ওঠে না টাইগাররা।এশিয়া কাপ আর এশীয় যুব ক্রিকেটে এখনও ট্রফি জেতা হয়নি। সেই অধরা ট্রফিটা ‘সোনার হরিণ’ হয়েই রয়েছে।মনে হচ্ছিল জাতীয় দল আর যুব দল না পারলেও এবার বুঝি আগামী প্রজন্মের হাত ধরেই আসবে প্রথম ট্রফি।এবার প্রাণ-ফ্রুটো ইমার্জিং কাপটা হবে বাংলাদেশের ক্রিকেট যোদ্ধাদের সাফল্যের আসর হয়ে।

এ ট্রফি জয়ের মধ্য দিয়ে ঘুচবে ফাইনালে বারবার না পারার গ্লানিও।কিন্তু হায়!ইমার্জিং এশিয়া কাপ ক্রিকেটের ফাইনালও হয়ে থাকল হতাশার প্রতীক হয়ে।আজ প্রাণ-ফ্রুটো ইমার্জিং এশিয়া কাপের চতুর্থ আসরের ফাইনালে শেষ পর্যন্ত ৭৭ রানের বড় পরাজয়ই সঙ্গী থাকল নাজমুল হোসেন শান্ত, সৌম্য সরকার, নাইম শেখ, ইয়াসির আলী রাব্বি আর আফিফ হোসে ধ্রুবদের।ম্যাচের শুরুতে পাকিস্তানি টপ অর্ডারের ওপর চেপে বসেও টাইট বোলিং আর আলগা ফিল্ডিং ও দুর্বল ক্যাচিংয়ের মাশুল গুনেছে শান্তর দল।২৩ রানে জীবন পাওয়া পাকিস্তানি মিডল অর্ডার রোহাইল নাজিরের আক্রমণাত্মক সেঞ্চুরিই শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।

তার ব্যাট থেকে আসে ১১১ বলে ১১৩ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস।বাঁ-হাতি স্পিনার তানভির ইসলামের বলে প্রথম স্লিপে দাঁড়িয়ে ইয়াসির আলী রাব্বি যদি ওই ক্যাচটি ধরতে পারতেন, তাহলে হয়তো আজকের ফাইনালের চিত্র ভিন্নও হতে পারতো।এরপরও ইয়াসির আলী রাব্বির হাত গলে আরও দুটি ক্যাচ পড়েছে।ওই তিন ক্যাচ হাতছাড়া না হলে নির্ঘাত পাকিস্তান ২৫ থেকে ২৬০ রানের ভিতরে বেঁধে রাখা সম্ভব হতো।

তাহলে আর ৩০২ রানের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেও হয়ত পড়তে হতো না।ফাইনালের আগে এ আসরে টাইগারদের রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড ছিল শতভাগ।হংকংয়ের বিপক্ষে ৯ উইকেট, ভারতের সাথে ৬ উইকেট, নেপালের সাথে ৮ উইকেট আর সেমির যুদ্ধে আফগানদেরকে ৭ উইকেটে হারালেও কোন ম্যাচেই লক্ষ্য বড় ছিল না।ভারতের সাথে লক্ষ্যটা মোটামুটি (২৪৭) ছিল।আর আফগানদের বিপক্ষে টার্গেট ছিল ২২৯।সেখানে আজকের ফাইনালে ৩০২ রান, শুধু বড়ই নয় কঠিনও ছিল। কারণ সন্দেহাতীতভাবেই এবারের প্রাণ-ফ্রুটো ইমার্জিং কাপের সেরা ও ধারাল বোলিং পাকিস্তানের।

সেই বোলিংয়ের বিপক্ষে ৩০১ রান টপকে যাওয়া বহুদূরে, লড়াইও করা সম্ভব হয়নি।২২৪ রানেই শেষ টাইগারদের ইনিংস।এতবড় স্কোর তাড়া করতে সবার আগে দরকার ছিল বড় জুটি ও অন্তত একজোড়া বড় ইনিংস।এর একটিও হয়নি।তাই জেতা বহুদূরে, লড়াইও করা সম্ভব হয়নি।
পুরো ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রান আফিফ হোসেন ধ্রুব‘র।ওপরের দিকে সৌম্য (১৫), নাইম (১৬), শান্ত (৪৬) আর ইয়াসির আলী রাব্বি (২২)- অল্প সময় ও সংগ্রহে ফিরে গেলে আফিফ আর মেহেদি হাসান চেষ্টা করেছেন দলকে এগিয়ে নিতে;কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।সর্বনাশ যা হবার, আগে ভাগেই হয়ে গিয়েছিল।

অবশ্য আফিফ হোসেন ধ্রুব নিজেকে খানিক দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন।থার্ড ম্যানে তার ক্যাচটি অসাধারণ দক্ষতা ও চিতাসম ক্ষিপ্রতায় ধরে ফেলেছেন পাকিস্তানি ফিল্ডার শামিন গুল।ফাস্ট বোলার হাসনাইনের করা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে খাট লেন্থের ডেলিভারিকে থার্ডম্যানের স্লিপের মাথার ওপর দিয়ে গলাতে চেয়েছিলেন আফিফ।ফিল্ডার ছিলেন অনেক দূরে।আর আফিফের শর্টটি চলে যাচ্ছিল ঠিক প্রথম স্লিপের মাথার ওপর দিয়ে; কিন্তু বল বাতাসে বেশি সময় ভেসে থাকায় শামিন অন্তত ১৫ থেকে ১৭ গজ দৌড়ে ডান দিকে পুরো শরীর মাটিতে ফেলে তা ধরে ফেলেন। আফিফ সেটা অসহায় দৃষ্টিতে দেখতে দেখতে সাজ ঘরে ফেরেন।

শেষ দিকে মেহেদি হাসান একা লড়াই করে রানটাকে ২০০ পার করে দেন শুধু।এরপর মেহেদি হাসান খেলেন সাইদ বদরের বলে ৪৫ বলে ৪২ রানের আর একটি মাঝারি ইনিংস। তাতেই স্কোর ২২৪ পর্যন্ত যায়।প্রথম সেশনে মিডল অর্ডার রোহাইল নাজির (১১১ বলে ১১৩), ইমরান রফিক (৮৮ বলে ৬২) আর সাইদ শাকিল (৪০ বলে ৪২), খুরশিদ শাহ (১৬ বলে ২৭) আর আমাদ বাটের (৭ বলে ১৫) হাত খোলা ব্যাটিং দিয়ে সাজানো ৩০১ রানের বড় পুঁজিটাই জয়ের জন্য যথেষ্ট বলে প্রমাণ করে দিলেন পাকিস্তানের বোলাররা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *