কিছুতেই দমছে না কিশোর গ্যাং চক্র। গত সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশের পক্ষ থেকে গোটা ঢাকা শহরে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হয় কিশোর গ্যাং চক্রের বিরুদ্ধে । অভিযানে প্রায় ২৫০০ জনকে আটক করা হয়। একরাতেই হাতিরঝিল থেকে ১১০ জনকে আটক করা হয়। অভিযানের ফলে কিশোর গ্যাং চক্রের কিছুটা দৌরাত্ম কমেছিল। কিন্তু, আবারও তা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সোমবার রাতে শাহ আলী এলাকায় গ্যাং চক্রের ছুরিকাঘাতে দুইজন আহত হন। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং-এর মধ্যে সিনিয়র ও জুনিয়র গ্রুপ গড়ে উঠেছে।
মাঠের মহড়া ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে তাদের লড়াই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায় ১০০ ফেসবুক আইডিতে সক্রিয় রয়েছে কিশোর গ্যাং চক্র। তারা ওইসব আইডি বিভিন্ন চটকদার নাম দিয়ে নিজের সদস্য বাড়ানোর কাজ করছে।
আইডিগুলোতে তারা তাদের রাতের মহড়া, মোটর রেসিংসহ বিভিন্ন বিষয়ে পোস্ট দিচ্ছে। ওইসব পোস্ট দেখে কিশোর গ্যাং চক্রের অন্য গ্রুপের সদস্যরা আরও বেশি প্রতিযোগিতা করে তাদের ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিচ্ছে। এতে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। এমন প্রায় ১০০ টি ফেসবুক আইডি সনাক্ত করেছে ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগ। ওইসব আইডির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিটিআরসিকে বার্তা পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। কিশোর গ্যাং এর বিরুদ্ধে আবারও অভিযান চালানো হবে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির সাইবার সিকিউরিটি অ্যান্ড ক্রাইম বিভাগের ডিসি আ.ক.ম. আল কিবরিয়া জানান, ‘কিশোর গ্যাং চক্রের ফেসবুক আইডিগুলো নজরদারিতে আছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম শাখা সূত্র জানা গেছে, পুলিশের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ঢাকার ৫০ থানার গ্যাং চক্রের ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে গ্যাং এর বিরুদ্ধে অভিযানে প্রায় ঢাকার ২৫০০ কিশোরকে আটক করে পুলিশ। এদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে গ্যাং কালচারে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায়নি, তাদের অভিভাবকদের ডেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আর যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদের আদালতে চালান দেয় পুলিশ। গত ৬ই সেপ্টেম্বর হাতিরঝিল এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ ১১০ জনকে আটক করে। এদের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে ১০৩ জনকে ছেড়ে দেয়া হয়। সূত্র জানায়, ৪ বছর আগে উত্তরা এলাকায় নাইন স্টার গ্রুপ ও ডিসকো গ্রুপের গ্যাং কালচার শুরু হয়। পুলিশ বিষয়টি আগাগোড়া খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও এটি আস্তে আস্তে পুরো ঢাকা শহরে ছড়িয়ে পড়ে। স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া কিশোর ও তরুণদের মধ্যে গ্যাং কালচার বিস্তার লাভ করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ভিত্তিক গড়ে উঠে এক একটি গ্রুপ।
ডিএমপির সাইবার ক্রাইম সেল জানায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিশোর গ্যাং চক্র বেশি সক্রিয় রয়েছে। তারা বিভিন্ন নামে পেইজ খুলে শক্তির অবস্থান জানান দিচ্ছে। ফেসবুকে ওই পেইজগুলো হচ্ছে- ডিসকোভারি, ১০০ লি, সাউন্ড ফিকশন, অধরা, পাওয়ার বয়েজ, ডিসকো বয়েজ, বিগ বস, নাইন স্টার, নাইন এমএম বয়েজ, এনএনএস, এফএইচবি, জিইউ, ক্যাকরা, ডিএইচবি, ব্লক রোজ, রনো ডিং, কেনাইন, ফিফটিন ওয়ান, ডিসকো বয়েজ, পোটলা বাবু, সুজন ফাইটার, আলতাফ জিরো, ক্যাসল বয়েজ, ভাইপার, তুফান, থ্রিস্টার, ফোর স্টার, সো গেম, থ্যাং চো, লো স্টার, ব্লু আন্ড ডে, নাইট ব্লাইট, স্লোবিম, থালা-১, গিবস ভয়েজ, নম্বর ওয়ান, মোর ওয়ান, ফোরটি ৭, থান্ডার ওয়ান, লিংক ১২, টি ১৮, জিনন্সেস ফুট, আমস্টং ১২০, লাইট হ্যামার ও সে ব্লিমসহ আরও অনেক নামে তারা সক্রিয় রয়েছে। সূত্র জানায়, একেকটি ফেসবুক পেইজে একজন করে অ্যাডমিন রয়েছে। প্রত্যেক পেইজের প্রায় ১৪ থেকে ২০ জন করে সদস্য রয়েছে। পেইজের সদস্যরা ওই নামের মাসেঞ্জারে তথ্য আদান প্রদান করে থাকে।